×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • আমেরিকা কোন পথে: গৃহযুদ্ধই অ্যানোক্র্যাসির পরিণতি?  

    বিতান ঘোষ | 12-01-2022

    প্রতীকী ছবি।

    দেড়শো বছর পর কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? আমেরিকা কি ক্রমশ দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের দিকে (US heading for second civil war?) এগিয়ে চলেছে? প্রশ্নটা কিন্তু চায়ের দোকানের অলস আড্ডায় নয়, আলোচিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে।

     

    ক্রমশ বদলে যাওয়া আমেরিকাকে নিয়ে চিন্তিত সে দেশের বিদগ্ধ সমাজ। নিউইয়র্ক টাইমস কিংবা নিউ ইয়র্কার-এর মতো প্রথম সারির পত্রপত্রিকায় গত কয়েক দিন ধরে এই প্রশ্নটিই প্রবল ভাবে চর্চিত। আর সেই সুবাদেই রাজনৈতিক আলোচনার পরিসরে নতুন একটি শব্দ নিয়ে ইদানীং বিস্তর নাড়াচাড়া হচ্ছে— ‘অ্যানোক্র্যাসি’ (Anocracy)অর্থাৎ গণতন্ত্র (Democracy) আর স্বৈরতন্ত্রের (Autocracy) মধ্যবর্তী অবস্থা। গণতন্ত্রের পথ ধরে শাসকের স্বৈরাচারী হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। বিচারান্তরে যাকে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র (Elected autocracy) বলেও বর্ণনা করা যায়।

     

     

    ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে (Capitol Hill) অবস্থিত মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ক্ষত এখনও দগদগে। 2021 সালের 6 জানুয়ারি স্বঘোষিত ট্রাম্প সমর্থকরা মার্কিন আইনসভায় জোর করে ঢুকে পড়ে এবং হামলা চালায়। এর কিছু দিন আগেই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের (Joe Biden) কাছে শোচনীয় ভাবে পরাস্ত হয়েছেন। কিন্তু সেই পরাজয় স্বীকার করতে তিনি যে প্রস্তুত নন, তা তাঁর বিবিধ কাজকর্মে প্রকাশ পাচ্ছিল। তাই বলে তাঁর নিবেদিতপ্রাণ ভক্তকূল মার্কিন গণতন্ত্রের মুখে যে এমন চুনকালি মাখাবেন, তা ডেমোক্র্যাট শিবির দূরে থাক, অতি বড় রিপাবলিকানও কল্পনা করতে পারেননি।

     

     

    সে সব এখন অতীত৷ ক্যাপিটল হিলের ক্ষত মুছে সামনের দিকে তাকাতে চাইছে আঙ্কল টমের দেশের গণতন্ত্র। কিন্তু সম্মুখের দৃষ্টিও যে নানা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগে আবৃত। যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়। ক্যাপিটল হিলের বর্বরোচিত ঘটনার বর্ষপূর্তিতে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে এসে তিনি বলেন, ‘‘এ বার আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আমরা কেমন একটা দেশ ভাবীকালের জন্য রেখে যেতে চাইছি, এমন একটা দেশ রেখে যেতে চাইছি কি, যেখানে রাজনৈতিক হিংসাকে খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা হিসাবে দেখা হবে?’’ সঙ্গে বাইডেনের হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি কাউকে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে দেব না।’’ প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে যতই প্রত্যয়ী হোন, পর্যবেক্ষকরা কিন্তু অতটা আশাবাদী নন।

     

     

    ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বারবার ওয়াল্টার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র গৃহযুদ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য, যিনি প্রায় দীর্ঘ 30 বছর ধরে গৃহযুদ্ধের কারণ ও সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে জাতিগত ও শ্রেণিগত পরিচয়কে উপজীব্য করে তাঁর রাজনৈতিক লড়াইটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, তাতে তাঁর দল রিপাবলিক পার্টির আদর্শটাই গৌণ হয়ে গিয়েছে। প্রথম গৃহযুদ্ধে, আমেরিকা ভৌগোলিক ভাবে উত্তর আর দক্ষিণ আর বর্ণগত ভাবে কালো আর সাদায় বিভক্ত হয়েছিল।

     

     

    কিন্তু এ বারের বিভাজন আরও বহুধা বিস্তৃত বলেই মনে করছেন প্রাজ্ঞ ওয়াল্টার। বহু জাতি ও সম্প্রদায়ে বিন্যস্ত দেশে, যেখানে দ্বিদলীয় শাসনকাঠামো রয়েছে, সেখানে এই বিচ্ছিন্নতা ক্রমশ বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি। উদাহরণ হিসাবে তিনি দেখাচ্ছেন, 2020 সালে রিপাবলিকানদের অন্তত 90 শতাংশই শ্বেতাঙ্গ। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রিপাবলিকানরা মূলত শ্বেতাঙ্গ আর উচ্চবিত্তদের প্রতিনিধিত্ব করলেও এমন মোটা দাগের বিভাজন রেখা, সে দেশের ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতিতে ছিল না।

     

     আরও পড়ুন: বুল্লি বাই: বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সমাজেরই প্রতিচ্ছবি

     

    ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়ে হিলারি ক্লিন্টন যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে বলেছিলেন, ‘‘নিজের দেশকে (আমেরিকা) যতটা বিচ্ছিন্ন ভাবতাম, দেশটা তার থেকেও বেশি বিচ্ছিন্ন। নির্বাচনী প্রচারপর্বে নারীদের সম্পর্কে এমন বক্রোক্তি করার পরেও, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলেও, ট্রাম্প কী ভাবে বিপুল জনাদেশ পেলেন, তা বুঝে উঠতে পারেননি দুঁদে রাজনীতিক হিলারি।

     

     

    আজকের এই পরিবর্তিত আমেরিকা শুধু সে দেশ নয়, সারা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ। কারণ, ওয়াল্টারের ঝাঁকিদর্শনকে সত্য প্রমাণিত করে আমরা দেশে দেশে ওই অ্যানোক্র্যাসি-র নমুনা দেখতে পাই। দেখতে পাই মতাদর্শ-রহিত এই বিবিধ বিভাজনের খেলা। কখনও তা ধর্মে ধর্মে, কখনও বা শ্রেণিতে বা জাতিগত পরিচয়ে। বহিরঙ্গে তবু প্রত্যেক শাসকই গণতন্ত্রের নামাবলীখানা চাপিয়ে থাকেন। ট্রাম্প-পন্থী রিপাবলিকানরা যেমন এখনও দাবি করে যাচ্ছেন, ক্যাপিটল হিলে যা হয়েছিল, তা দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর স্বার্থেই হয়েছিল। অতীতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যগুলিকে জলাঞ্জলি দিয়ে যাবতীয় অন্যায়কে বৈধতা দানের এই চেষ্টা কি আমরা এই দেশেও দেখি না? রক্ষণশীল মার্কিন সংবাদসংস্থা ফক্স নিউজ যেমন এখনও মনে করে ক্যাপিটল হিলের ঘটনা মার্কিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে একটা ‘ফুটনোট’ মাত্র, অতিরিক্ত আলোচনা এ ক্ষেত্রে নিষ্প্রয়োজন। কিমাশ্চর্যম! এই দেশেও বাবরি ধ্বংস কিংবা গোরক্ষকদের হাতে সংখ্যালঘু পীড়নের ঘটনাকেও তো জনমানসে এ ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে— আদতে তেমন কিছুই হয়নি। তাই মিছে হইহল্লা নিষ্প্রয়োজন।

     

     

    সাধারণতন্ত্র নিয়ে যে দু'টি দেশ সর্বাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে, সেই দু'টি দেশ যদি অতলান্তিকের অতলান্ত পেরিয়ে গণতন্ত্রের ক্ষয়রোগের নিরিখে এমন অদ্ভুত ভাবে মিলে যেতে পারে, তবে সাধারণতন্ত্রের পথে সদ্য এগিয়ে চলা দেশগুলিতে এই সচেতন বিভেদ-প্রয়াস কতটা শক্তিশালী, তা ভেবে শিউরে উঠতে হয়। এই বিক্ষুব্ধ আমেরিকা, বিদ্বিষ্ট মন নিয়ে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসে থাকা আমেরিকা সত্যিই এ বার ভাবাচ্ছে। আগামী সাধারণতন্ত্র দিবসে শাসক যখন সুদৃশ্য রাজপথে সৈন্যমহড়া করবে, তখন আমাদের হয়তো এই নবোত্থিত অ্যানোক্র্যাসি নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনা করতে হবে। অন্তত করাটা ভীষণ জরুরি।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বামেদের শহীদ বেদীর সংখ্যা কমা আর তৃণমূলের ক্রমবর্দ্ধমান 'শহীদ স্মরণ’ সমানুপাতিক!

    বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে সহনশীলতা, বহুত্ববাদের মতো প্রকৃত ভারতীয় সত্তাগুলিকে ধ্বংস করতে।

    ক্লাসরুমের শিক্ষাই পারে কোভিড পরবর্তী বেহাল শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে।

    তালিবানি মৌলবাদের রোগ পালটা মৌলবাদী দাওয়াইতে সারবে না, এটা দেশের রাজনৈতিক তালেবরদের বুঝতে হবে।

    তোমার শিল্প নেই, সংস্কৃতিও ঘুচতে বসেছে, ভদ্রজন, তাই কি তোমার এই কৌলীন্য রাখার দায়?

    মহাভারতের অর্জুন রামায়ণের রামচন্দ্রকে হারিয়ে ফিরে এলেন পুরনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে।

    আমেরিকা কোন পথে: গৃহযুদ্ধই অ্যানোক্র্যাসির পরিণতি?  -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested