কত্ত বড় হেলিকপ্টারের পাখা রে! পাখার হাওয়ায় আমার তো মাথার টুপিটাই আর একটু হলে উড়ে যাচ্ছিল, বিস্ময় যেন কাটতে চায়না স্থানীয় বাজার বিক্রেতা মনোজদার। ভোটের আগে এলাকার বড় মাঠে বড় নেতাকে দেখতে গিয়ে তার এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। চা দোকানি অরূপদা তো এখনও গল্প শোনায়, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে চা বিক্রি করতে গিয়ে কত বড় বড় নেতাকে সামনে থেকে দেখেছে। কিছু জনের সঙ্গে হাত মেলানোরও সৌভাগ্য হয়েছে তার। কিন্তু করোনা আবহে ‘নিউ-নর্মাল' ব্যবস্থায় এইসবই এখন অতীতের পাতায় যেতে চলেছে। মাঠঘাট কিংবা রাস্তার মোড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের জায়গায় ভার্চুয়াল সভাতেই ভরসা রাখতে হচ্ছে কমবেশি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই।
যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির সভা, পাল্টা সভা ছাড়া এই বঙ্গের রাজনীতি বড়ই ম্রিয়মাণ। বাম আমলের খাদ্য আন্দোলন কিংবা বাম বিরোধী সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন— পথের রাজনীতিতে নেমে এখানকার বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কিন্তু মহামারীর সঙ্গে পাঞ্জা কষতে গিয়ে রাজনীতির লড়াইটাও যে ঘরে বসে আর সোশাল মিডিয়ার দাক্ষিণ্যে করতে হবে, সেটা কি রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কেউ ভেবেছিলেন? এই প্রসঙ্গে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য ‘চলতি হাওয়ার পন্থী'। তিনি বলছেন, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে সবাইকে মানিয়ে নিতেই হবে। তবে, বিজেপিকে বিদ্রুপ করে তাঁর দাবি, বিজেপির মতো ফেক প্রোফাইল আর ফেক প্রোপাগান্ডা দিয়ে তাঁর দল(তৃণমূল) প্রচার করতে না পারলেও, একনিষ্ঠ কর্মীরা সোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেই দলের বক্তব্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন। কিন্তু যে রাজ্যে প্রায় 68 শতাংশ ভোটার গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন, সেখানে কি আধুনিক এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দলের বক্তব্য তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব? ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের হুগলী জেলার সম্পাদক অমৃতেন্দু দাশের মতে, রাজনৈতিক প্রতিবাদ কর্মসূচির ক্ষেত্রে অনেকসময়ই পথে ঘাটে নামতে বাধ্য হচ্ছে তাঁর দল সিপিআইএম। তাঁর আরও দাবি তৃণমূল এবং বিজেপি আমপানের ত্রানবণ্টন ও অন্যান্য অনেকক্ষেত্রে যে পরিমাণে দুর্নীতি করেছে, তাতে মানুষের পাশে থাকতেই তাঁরা নিয়ম মেনে মিটিং-মিছিল করছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়াল সভা-সমাবেশের উপযোগিতার দিকটিও তিনি অস্বীকার করেননি।
তবে কি করোনা এসে বাঙালির শীতকালীন খান দু'য়েক ব্রিগেড সমাবেশ, কিংবা ধর্মতলা বা শহীদ মিনার ময়দানের জমাটি রাজনৈতিক সমাবেশে চিরতরে দাঁড়ি ফেলে দিল? রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের সেই চিরায়ত উন্মাদনা, দূরের জেলা থেকে আগের রাতেই চলে এসে মঞ্চের সামনে বসে পড়া, এই সবকিছুই কি বাংলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে হারিয়ে যাবে? কত স্মৃতি, কত গল্পই তো এককালে তৈরি হয়েছিল এই সমস্ত সভা-সমাবেশ থেকে।
অনুষ্ঠানবাড়িতে দু'জন অপরিচিত ভদ্রলোককে দেখেছি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, ‘কী দাদা কেমন আছেন' বলতে। তারপরে উভয়েই মাথা চুলকে ভেবেছেন, তারা একে অপরকে কোথায় যেন দেখেছেন। শেষে মনে পড়েছে, গত বছরের ব্রিগেডে পাশাপাশি বসে তারা তাদের প্রিয় দলের সভা দেখেছিলেন।
আগে তবু মাথা গুনে বলে দেওয়া যেত একটা সভা সমাবেশে কেমন লোকসমাগম হয়েছে। তাই নিয়ে চলত শাসক-বিরোধী তাল ঠোকাঠুকিও। এখন ভার্চুয়াল সভায় ‘ভিউজ'-এর সংখ্যা দিয়ে সেই সংখ্যাটা মাপা হয়। কিন্তু নয়া এই ব্যবস্থায় যেমন সেই পরিচিত আবেগ বা স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়না, তেমনই একজন মানুষই যদি একাধিক মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে সেই সভা দেখেন, তাহলে ভিউজের সংখ্যাকে কৃত্রিমভাবে আরও বাড়িয়ে নেওয়া যায়। হরেকরকম দাবিতে, বিচিত্র সব প্রতিবাদে গলির মোড়ে আর কোনও ওজস্বী কণ্ঠ বক্তব্য রাখে না। আমবাঙালির কাছে রাজনীতি যে একটা উদযাপন, উন্মাদনা; করোনা এসে গত 6 মাসে সেটাই ভুলিয়ে দিতে বসেছে। দল হিসাবে বাংলায় প্রথম এই ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। তাদের যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী অবশ্য জানালেন, "করোনা পরিস্থিতির ফেরে বিকল্প এই ব্যবস্থায় জনসংযোগ করা হলেও, করোনার প্রকোপ কমলে আমরা আবার মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়াব।’ সব দলই যে এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছে, তার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
শুধুই কি উন্মাদনা, জনারণ্য আর আবেগ? মানুষের রুজিরুটিও তো এসব মেঠো সভা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল। মঞ্চ বা মাইক বাঁধার ডেকরেটার্সের কথা বাদই দিলাম। কিন্তু যারা সমাবেশে আসা সমর্থকদের জন্য পতাকা বিক্রি করতেন কিংবা লজেন্স, চা, টুপি বিক্রি করতেন? তাদের উপায়ের রাস্তাটাও তো বন্ধ করে দিল করোনা। মুখে বিচিত্র রঙ মেখে, মজাদার স্লোগান বানিয়ে কর্মী সমর্থকরা দলের মঞ্চের সামনে শব্দব্রহ্ম তৈরি করতেন। কুশলী রাজনীতিকরাও বুঝে নিতেন জনতা-জনার্দনের মনোভাব। এখন অন্তর্জালের মাধ্যমে এইসব মানুষদের অন্তরকে, রাজনৈতিক দলগুলি কেমন বুঝতে পারে, সেটাই দেখার।
‘বাবু’দের দেখানো পথেই রাষ্ট্রদ্রোহীদের খুঁজছে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী।
সন্তানের বাবার নাম জানতে সমাজের যতই নোলা ছকছক করুক, মা তা জানাতে বাধ্য নন।
এইসব মানুষগুলোর সুরাহা করে দিতে দেশের ‘অর্থমন্ত্রী' নামক এক চরিত্র তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবেন বলছেন।
তথাকথিত উন্নয়নের পক্ষে সুবিধাজনক হাতিদের সন্দেহজনক মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি।
নাবালিকা 'ধর্ষণ' নিয়ে মমতার এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য ও ভাবনার শরিক বহু সাধারণ মানুষ, সে আমরা প্রকাশ্যে
ইতিহাস শুধু অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, সেটা বর্তমানের পটভূমিতে অতীতকে জরিপ করে নেওয়াও বটে।