×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ক্রমশ বাড়ছে বজ্রপাত, সচেতনতাই বাঁচার মন্ত্র

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 14-06-2021

    প্রতীকী ছবি।

    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই কড়কড় শব্দে বাজ পড়া, বিদ্যুৎ চমকানো আর সঙ্গে কখনও ভারী, কখনও হালকা বৃষ্টি। জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার ঠিক প্রাক্কালে এটাই দক্ষিণবঙ্গের চিত্রবজ্রপাতে প্রাণে বাঁচার সরল দাওয়াই, উপায় থাকলে কংক্রিটের ছাদের তলায় আশ্রয় নিন, অথবা খোলা মাঠে থাকলে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। যাঁদের অ্যাস্ট্রোফোবিয়া আছে, তাঁদের কাছে এ যেন এক আতঙ্কের সময়রাজ্যে একদিনেই বজ্রাহত হয়ে মৃত্যু 35 জনের, হুগলিতে 26 জন, মুর্শিদাবাদে 9 জন। মাত্র এই চার পাঁচদিনে দক্ষিণবঙ্গে বজ্রপাতের সংখ্যা 38 হাজার 568! তাও এটা সেই বজ্রপাতের সংখ্যা যা মেঘ থেকে মাটিতে নেমেছে, মেঘে মেঘে বজ্রপাতের সংখ্যা ধরলে তা 60 হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে। শুধু বাড়ছে না, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। 2019 -এ গোটা ভারতে বজ্রপাতের সংখ্যা ছিল 7 লাখ 61 হাজার। মাত্র একবছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে 2020-তে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে 15 লাখ 21 হাজার।

     

     

    কিন্তু কারণ কী এভাবে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ার? সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে বাজ পড়ে, যার জন্য এই মেঘগুলোকে বজ্রগর্ভ মেঘও বলা হয়। সাধারণত বর্ষা ঢোকার ঠিক আগেই স্থলভাগে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প জমা হতে থাকে, এবং সঙ্গে থাকে ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রা যা এই ধরনের মেঘের সৃষ্টি করে। অনেকেই এই বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের ঘটনাকে কালবৈশাখী বলে ভুল করেন। কিন্তু দু’টো ঘটনা আসলে আলাদা। এবং লক্ষ্য করে দেখা গিয়েছে শেষ কয়েক বছরে বাজ পড়ার সংখ্যাটা ভীষণ রকম বেড়ে গিয়েছে, বেড়েছে বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। এই দুই’ই হচ্ছে বজ্রপাত বাড়ার মূল কারণ। 

     

    আরও পড়ুন: সুন্দরবনের ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’

     

    নগরায়নের ফলে গাছপালার সংখ্যা কমছে, বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ধূলিকণার পরিমাণ বাতাসে বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যানবাহন এবং শিল্পও দূষণ ঘটাচ্ছে অতিরিক্ত মাত্রায়। অর্থাৎ, একদিকে যখন দূষণের মাত্রা লাগামছাড়া হচ্ছে, তখন আর একদিকে ইঁট, সিমেন্ট কংক্রিটে ঢাকা শহর গ্রীষ্মের দুপুরে ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে চলেছে। এই অস্বাভাবিক উত্তপ্ত শহর এলাকাগুলো উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখতে লাগে গরম কড়াইয়ের মতো। এই লোকাল আর্বান হিট আইল্যান্ডের ফলে স্থানীয় নিম্ন চাপের সেল তৈরি হচ্ছে ঘনঘন। যা বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি করতে সাহায্য করছে। একই সঙ্গে কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক বড় বড় ধাতুর তৈরি যন্ত্র, যা বাজকে নিজের দিকে আকর্ষণ করছে। ফলে সব মিলিয়েই বাড়ছে বজ্রপাত এবং তার ফলে মৃত্যুর ঘটনা। এই বিষয়ে আশুতোষ কলেজের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘আমরা এতদিন বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল হিসেবে ভাবতাম শুধুই সমুদ্রপৃষ্ঠের বেড়ে যাওয়া বা দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়া। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে বিশ্ব উষ্ণায়নের আরও নানান প্রভাব, যেমন বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধি ইত্যাদির সাক্ষী থাকছি আমরা।'

     

    আরও পড়ুন: বাঁধ ভাঙার কাহিনি

     

    এর থেকে কি মুক্তির তাৎক্ষণিক কোনও উপায় নেই? পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মডেল অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে পারে। অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘একই সঙ্গে মানুষকে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বিদ্যুৎ চমকালে বাইরে অযথা ঘোরাঘুরির থেকে ঘরে থাকাই শ্রেয় অথবা কোনও কংক্রিট আস্তানার নিচে আশ্রয় নিতে হবে।' খোলা মাঠের মতো জায়গায় সেটা সম্ভব না হলে মাটিতে শুয়ে পড়ে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে যথাসম্ভব খোলা জায়গা, অর্থাৎ আশেপাশে উঁচু গাছ, কোনও নির্মাণ নেই এমন জায়গা। মনে রাখা দরকার বিদ্যুৎ আকাশ থাকে মাটিতে আসার সবচেয়ে সহজ পথ খোঁজে এবং বিদ্যুতের সহজ পরিবাহী এমন পথ খোঁজে। ধাতু বিদ্যুতের ভাল পরিবাহী, তাই হাতে ধরা ছাতা বজ্রপাত ডেকে আনতে পারে। কিন্তু ধাতুই আবার মানুষের দেহের চেয়ে ভাল পরিবাহী বলে ভিতরে লোহা রয়েছে এমন কংক্রিটের বাড়ি অনেক নিরাপদ। কারণ, সে ক্ষেত্রে ধাতুর মাধ্যমে পৃথিবীতে যাওয়ার সহজতর পথ বেছে নেবে বিদ্যুৎ। মনে রাখতে হবে, মেঘ ডাকলেই সাবধান, সে ডাকবে কিন্তু বাইরে যাওয়া? নৈব নৈব চ।


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার ছবি এবং কীর্তনের অপূর্ব মিশেল ধরা পড়েছে এই সিরিজে।

    হাল ফেরানোর আবেদন জানাতে বামেদের এবার নতুন গান লুঙ্গি ডান্সের প্যারোডি।

    সোমবার বেহালার ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপুজোর শেষ দিন।

    নিজস্ব ভাষা বাংলা শিক্ষার পাঠক্রমে কোর্স ছাঁটাই করতে বাধ্য হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

    জীবনের কিছু সার সত্য কথা গল্পের আকারে তুলে ধরা হয়েছে।

    সাহারা, থর মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া নতুন গাছ আখেরে প্রকৃতির ক্ষতি করছে।

    ক্রমশ বাড়ছে বজ্রপাত, সচেতনতাই বাঁচার মন্ত্র-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested