×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এক নারী শাসিত রাজ্যে অন্য নারীরাই সুরক্ষিত নয়!

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 21-04-2022

    প্রতীকী ছবি।

    ‘ফের ধর্ষণ, অভিযুক্ত পলাতক’, ‘নাবালিকাকে ধর্ষণ পড়শি নাবালকের’, ‘ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ নাবালিকাকে প্রতিবেশী যুবকের’, ‘বারবার ধর্ষণ করেছে বাবা মাকে বলেও লাভ হয়নি’, ‘অন্ধকারে মুখ চেপে জঙ্গলে নিয়ে যায় ভাসুরপো, কুকীর্তি সেরে কাকিমাকে 50 হাজারের টোপ’, ‘ধর্ষণ হলে প্রমাণ দেখাক: তৃণমূল নেতা’, ‘নাবালিকাকে ধর্ষণ’। ভাবছেন এগুলো কী? শেষ কয়েকদিনের খবরের কাগজ বা ডিজিটাল মিডিয়ার হেডলাইন। 

     

    ফেব্রুয়ারি থেকে একের পর এক ধর্ষণ ঘটে চলেছে এই রাজ্যে। খবরের কাগজের পাতার পর পাতা জুড়ে যেন মন হচ্ছে কেবলই ধর্ষণের কথা লেখা। আর অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিশেষ একটি দলের সমর্থক নইলে নেতা। যদিও অভিযুক্তদের অন্য পরিচয় থাকার কথা নয়, তবুও এটি উল্লেখ করলাম। কারণ সেই দলেরই নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে কখনও বলছেন ‘ছোট ঘটনা’, ‘সাজানো ঘটনা’, ‘শরীর থাকলে জ্বর হবেই, রাজ্যে বেশি লোক থাকলে ধর্ষণ হবেই’, ‘লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল কিনা খোঁজ নিন’, ‘প্রেগনেন্ট ছিল’ ইত্যাদি। যেখানে তাঁর উচিত অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া, তৎক্ষণাৎ ঘটনাগুলোর মোকাবিলা করা, অতিরিক্ত পুলিশ পেট্রোলিং চালানো, হেল্পলাইন শুরু করা, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া ধর্ষণের কোনও অভিযোগ এলেই তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা। সেখানে তাঁর এ হেন উল্টো মন্তব্য কি অভিযুক্তদের প্রচ্ছন্ন মদত দিচ্ছে না? সাহস জোগাচ্ছে না? অবশ্যই জোগাচ্ছে। ধর্ষণ এমন একটা অপরাধ, যা একবার ঘটলে তার ঠিক মতো সাজা না হলে সমবিকৃতমনষ্ক আরও একজন সেই অপরাধ করার সাহস পায়। মুখ্যমন্ত্রী এমন বক্তব্যের কারণেই অভিযুক্তরা বর্তমানে কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। উল্টে মনে হচ্ছে যেন পরিবার সমাজের তরফে ধর্ষণকারীরা নিরাপত্তা পাচ্ছে। 

     

    পুলিশি মদতও আছে সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে। কেস নিতে দেরি করা, দ্রুত কার্যকরী তদন্ত হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। সবটা মিলিয়েই পশ্চিমবঙ্গ যেন বর্তমানে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। খুনোখুনি, সিন্ডিকেট, ধর্ষণের মতো অপরাধ চলছে তো চলছেই। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যেই মেয়েরা নিরাপদ নয়। তার প্রমাণ কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট, মেদিনীপুর, ডেবরা, দেগঙ্গা, বীরভূম, খয়রাশোল, কালিয়াগঞ্জ, হাঁসখালি,‌ মাটিয়া, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণী ইত্যাদি ধর্ষণকাণ্ড। সমাজ, রাষ্ট্র দুই-ই ব্যর্থ মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে। মুখে কুলুপ এঁটেছেন সমাজের সচেতন নাগরিক এবং বুদ্ধিজীবীরা। কার ভয়, কীসের ভয়ে তাঁরা এখনও মোমবাতি মিছিল এবং দৃপ্ত স্লোগান তুললেন না, পথে নামলেন না জানা নেই। 

     

    আরও পড়ুন: রেপ করেছে, তো কী হয়েছে?

     

    তবে একদিকে যখন হাথরাস ঘটে, তখন আমরা উত্তরপ্রদেশ এবং সেখানকার তৎকালীন সরকারকে বলতে কিন্তু ছাড়িনি যে সেখানে মেয়েরা নিরাপদ নয়ধর্ষণের ঘটনা, নারীদের উপর অত্যাচারের শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলো বিহার, উত্তরপ্রদেশ, যেখানে মেয়েদের কোনও নিরাপত্তা নেই বলে মনে করা হত সেখানে গ্রাফ নিম্নমুখী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। অথচ অন্য রাজ্যের তুলনায় এই দুই রাজ্য মেয়েদের জন্য নিরাপদ বলে গর্ববোধ করত! না, এই তথ্যগুলো আমি বলছি না, বলছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোউত্তরপ্রদেশে যেখানে 2019 সালে নারীদের উপর ঘটা অপরাধের সংখ্যা ছিল 59,853, সেটাই 2020তে কমে 49,385 হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় হাজারেরও বেশি অপরাধ কমেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে 2019-এ 29,589 ঘটনা ঘটেছিল, সেটাই 2020 সালে বেড়ে দাড়িয়েছে 36,439। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের থেকে ঢের বেশি। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশে অপরাধের সংখ্যা বেশি হলেও ঘটনা ঘটার ‘রেট’ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেই বেশি। 

     

     

    এখন কিছু ঘটলে আর উত্তরপ্রদেশের দিকে আঙুল তোলা যাবে না। আঙুল উঠলে এবার নিজেদের দিকেই যে তাকাতে হবে! 2022 সালে 40 দিনে পশ্চিমবঙ্গে 15টিরও বেশি ধর্ষণ কাণ্ড ঘটেছে এবং যার অধিকাংশই ঘটেছে নাবালিকাকেউ ক্লাস 5-এ পড়ে তো কেউ টেন। শুধুই ধর্ষণ নয়, গণধর্ষণ, পাশবিক অত্যাচার এবং হত্যা। এবং পারলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, ঠিক যেমনটা হাঁসখালির ঘটনায় ঘটল। অথচ পুলিশ এই ঘটনাগুলোকে আর পাঁচটা ঘটনার মতোই দেখছে, বিশেষ নজরে নয়। ‘Monstrous crime’ ভাবতে এবং গুরুত্ব দিতে নারাজ তাঁরা। তাঁদের সেরকম কোনও নির্দেশ দেওয়াই হয়নি পুলিশমন্ত্রীর তরফে। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনেই হয়নি যে, বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। 

     

    ভয়াবহ হলেও রাজ্যের বাস্তব চিত্র এখন এমনই। ভারতের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে মেয়েরা নিরাপদ যে নয়, তার প্রমাণ এই তথ্য এবং ঘটনাগুলো। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে অভিযুক্তদের যেন খানিক আড়াল করেই চলেছে রাজ্য প্রশাসন। 

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    সব শাশুড়ি কি সমান হয়? ভাল মন্দ কি সকলের মধ্যেই থাকে না?

    সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের পাশেই সংহতি আর মানবতার উজ্জ্বল ছবি বাংলায়।

    75 বছর বয়সী শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায় পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন

    যে জায়গায় সারা বছর তুষারপাতই নিয়ম, হিমাঙ্কের উপরে ওঠে না তাপমাত্রা, সেখানে টানা তিনদিন ভারী বর্ষণ।

    ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের নাচ দেখিয়ে রাম নবমী পালন

    শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।

    এক নারী শাসিত রাজ্যে অন্য নারীরাই সুরক্ষিত নয়!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested