আমাদের চেনা রাজ্যটা কি বিশেষ কোনও রাজনৈতিক মতবাদে একটু বেশিই বিশ্বাসী হয়ে এখন বদলে ফেলছে তার সহনশীল রূপটা? সেই ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’ ধারণাটা? এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু হ্যাঁ অথবা না দিয়ে মিলবে না। সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনা আপনাকে দ্বিধায় ফেলবে। অসহিষ্ণুতার লজ্জাজনক কাহিনির পাশাপাশিই মিলছে সম্প্রীতি, সংহতি আর মানবিকতার মর্মস্পর্শী কাহিনিও।
কিছুদিন আগে বাংলার বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী তৌসিফ হককে হেনস্থার শিকার হতে হয়। কারণ? কারণ তাঁর পদবী হক এবং তাঁর স্ত্রীর পদবী বিশ্বাস। তাঁরা বিশেষ কোনও প্রয়োজনে হুগলিতে গিয়ে আটকে পড়েন এবং রাতে না ফিরতে পেরে ‘সুলেখা লজে’ ঘর নিতে গেলে তাঁদের এই কথাই জানানো হয় যে, স্বামী-স্ত্রীর পদবী আলাদা হতে পারে না। যদিও তাঁরা তাঁদের বিবাহের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দেখিয়েছিলেন, কিন্তু লজ কর্তৃপক্ষ কিছুই শোনেনি। আজকাল অনেক মেয়েই বাবার পদবীর সঙ্গে স্বামীর পদবী যোগ করেন, অনেকে আবার বাবার পদবীই রেখে দেন, পাল্টান না। ঠিক যেমনটা তৌসিফ হকের স্ত্রী জয়িতা বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু এখানেই গোলটা বাঁধল, লজ কর্তৃপক্ষ মনে করলেন এ ‘লাভ জিহাদ’ কেস, অতএব প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এও কি সম্ভব? কে কোন ধর্মের মানুষকে বিয়ে করবে, কী পদবী ব্যবহার করবে, তা কি অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে? এবং সেই বিচারে এভাবে কাউকে হেনস্থা করা যেতে পারে, যেখানে সে তাঁর কথার সপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দেখাচ্ছে! আগে যে ঘটনা গো-বলয় অঞ্চলে দেখা যেত, আজ তা পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে, ক্রমশ যেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে মানুষ।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? এমনটাই কি দেগে দেওয়া যায়? খুব সম্ভবত না। আর তা জানা গেল রাহুল শেখের কথায়। তৌসিফ হকের ঘটনায় যখন সোশাল মিডিয়া তোলপাড়, তখন রাহুল পোস্ট করে জানান, আমাদের চেনা রাজ্য এখনও পুরোপুরি পাল্টে যায়নি, এখানে আজও মন্দির মসজিদ পাশাপশি আছে, মন্দিরের চাতালে নমাজ পড়া যায়। রাহুল এক অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে, মামার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে ছোটবেলায় আসেন এক ‘হিন্দু ব্রাহ্মণ’ দম্পতির বাড়িতে। তারপর তাঁদের ওকে দেখে মায়া হয়। তখন তাঁরাই ওকে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেন, সমস্ত দায়িত্ব নেন রাহুলের। আজও রাহুল তাঁদের সঙ্গেই থাকেন। রাহুলের ‘কাকু কাকিমা’ মন্দিরে যান পুজো দিতে, আর রাহুল সেই বাড়িতেই নমাজ পড়ে, রোজা রাখে। বাড়ি যায় ছুটি পেলে।
একদিকে যখন সাম্প্রদায়িকতার নোংরা দিকটা তৌসিফ হক সকলের সামনে তুলে ধরলেন, তখনই হাওড়ার রাহুল মানবতার গল্প শোনালেন সোশাল মিডিয়ায়। হ্যাঁ, আমাদের চেনা রাজ্য, চেনা ধারণা হয়তো কিছু কিছু জায়গায় পাল্টে যাচ্ছে বা প্রকাশ্যে আসছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ বদলে যায়নি, ভাঙন ধরেনি ভ্রাতৃত্ববোধে। তাই তো আজও স্বামীজির প্রচারিত ভ্রাতৃত্ববোধের নজির পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়। শুধু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এইসব পরিকল্পিত বিভেদ টানার ফাঁদ থেকে।
হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়।
পরীক্ষার ধরন পড়ুয়াদের ক্ষতি করছে কিনা, করলেও কতটা, তা বোঝা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি কেন তুলনামূলক ভাবে কম হয়? হলেও তা ওমান বা গুজরাটের দিকে বাঁক নেয় কেন?
ও সব বাবুদের রোগ, তাদের হয়। বুঝলেন?
জয় শ্রীরাম বনাম জয় বাংলা ধর্মীয় সত্তার রাজনীতি বনাম ভাষা সত্তার রাজনীতি
এনজাইমের ঘাটতির ফলে পুরুষ হয়ে যায় মহিলা।