×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • তপ্ত কড়াই দিল্লি 

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 12-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    কদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিল্লির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে একটি ছেলে কড়াই ছাদে রেখে সেখানেই তেল দিয়ে ডিম ফাটিয়ে দিয়ে দেয়। রান্নাও হয়ে যায় সেটি। যদিও ভিডিওটি মজা করেই বানানো তবে যা চলছে দিল্লিতে, কদিন পর হয়তো এটাই বাস্তব হবে! 

     

    দিল্লির বর্তমান ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 45 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও সেটি 62 ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধিও পৌঁছেছে। যেখানে পৃথিবীর রেকর্ডেড সর্বোচ্চ ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 70.7 ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে গ্রীষ্মের শুরুতেই দিল্লির ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় তার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। 

     

    বাওয়ানা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 62 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। বাদ নেই, রোহিণী, মুন্দকা, ইত্যাদির মতো জায়গাও। যেদিন বাওয়ানা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 62 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল তার কিছুদিনের মধ্যেই সেখানকার একটি ল্যান্ডফিল এলাকায় আগুন ধরে যায় উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের কারণে। প্রায় পাঁচদিন পর সেই আগুন নেভানো সম্ভবপর হয়েছিল। 

     

    দিল্লি এবং তার আশপাশের অঞ্চলে জনসংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে তাদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য জঙ্গল, গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রায় 34 শতাংশ ভেজিটেশন কভার কমেছে দিল্লি এবং তার আশপাশের অঞ্চলের। তেমনই বসতি এলাকা বেড়েছে আগের তুলনায় প্রায় 326 শতাংশ। কংক্রিটের জঙ্গলে ভরে উঠছে চারদিক। 

     

    আশুতোষ কলেজের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, "দিল্লি, মূলত নয়া দিল্লির জনসংখ্যা ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে আরও অনেক বেশি বাড়ি গড়ে উঠেছে, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। দূষণ বেড়েছে। প্রতিটার সঙ্গে প্রতিটা যুক্ত। হিট আইল্যান্ড তৈরি হওয়ার সমস্ত উপাদান এখন দিল্লিতে আছে। সঙ্গী হয়েছে নতুন ধরনের বহুতল। কাঁচ দিয়ে তৈরি। বিদেশে যেমনটা দেখা যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিদেশ আর আমাদের দেশের জলবায়ুতে অনেক পার্থক্য আছে, সেখানে যা চলে এখানে তা চলে না। এই কাঁচের বাড়িগুলো গ্রিনহাউজের কাজ করছে। ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়ছে।'

     

    হিট আইল্যান্ড অর্থাৎ শহরাঞ্চলের যে অংশটি আশপাশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাকেই তাপ দ্বীপ বা হিট আইল্যান্ড বলে। এটি আর্বানাইজেশনের ফলে তৈরি হয়।এবং দেখা যাচ্ছে এই প্রতিটা হিট আইল্যান্ডই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। একেই দিল্লিতে মহাদেশীয় ধরনের জলবায়ু দেখা যায়, যেখানে গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম এবং শীতকালে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়ে, তার সঙ্গে মিলে গিয়েছে আর্বানাইজেশন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কুপ্রভাব।  কংক্রিটের বাড়ি, রাস্তা হওয়ার দরুন অতিরিক্ত মাত্রায় সূর্যের তাপ শুষে নেয় কিন্তু তা ছাড়তে দেরি করে বলে এই সব জায়গার তাপমাত্রা আশপাশের থেকে বেশি হয়। 

     

    এছাড়াও এসির বহুল ব্যবহার তো আছেই। সঙ্গে আছে গাড়ি বাড়ি বানানো, কেনার লোভ। এক তলা বাড়ি ভেঙে বহুতল হচ্ছে। গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। পথে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। আর সবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা, গরম। 

     

    মার্চের শুরু থেকেই উষ্ণ হাওয়া বইছিল দিল্লিতে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল তাপমাত্রা। তখনই স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় 4.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল সেখানে, 32.7 ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল, 22.6 ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ক্যালেন্ডারে পাতা ওল্টাতেই ছবিটা যেন হঠাৎ বদলে গেল। এপ্রিল মাসে হঠাৎ করেই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বেড়ে যায় দিল্লিতে। 

     

    মার্চ থেকে এপ্রিল, মাত্র এক মাসে কী এমন বদল এল যে অবস্থা এতটা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াল। মার্চে দিল্লির নিকটবর্তী চাষের যে জমিগুলো আছে সেখানে ফসল ছিল। অর্থাৎ "ভেজিটেশন কভার' ছিল। কিন্তু এপ্রিলের মধ্যে যেই সমস্ত ফসল কাটা হয়ে গেল তখনই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। 

     

    আরও পড়ুন:নাগরিক আবহাওয়াবিদ

     

    পরিবেশবিদ এবং শিক্ষিকা সুচেতনা ঘোষ জানান, "পরিবেশের যা ক্ষতি করার আমরা করে দিয়েছি। রাস্তা থেকে চারপাশ কংক্রিট দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছি। এর ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। হিট আইল্যান্ড তৈরি হচ্ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে। এই ঘটনা সময়ের সঙ্গে আরও বাড়বে।' টিএইচকে জৈন কলেজের অধ্যাপিকা ঋত্বিকা দত্ত জানান, "ক্ষতিটা এমন জায়গায় চলে গিয়েছে যে আর ফেরা সম্ভব নয়। এতদিন প্রকৃতির উপর আমরা আমাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে যে অত্যাচার করেছি তার মাশুল এখন গুনতেই হবে।'

     

    তবে এই বিষয়ে ঋত্বিকা দত্তের থেকে একটু অন্য রকম কথাই বললেন অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, "এভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। একদিনে বা এক ভাবে তো নয়ই। সবাই সব জানে কী হচ্ছে কেন হচ্ছে। কিন্তু কেউ সচেতন নয়। আমরা সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্টের কথা বলব, কিন্তু কাজ করব না সেটা করলে কী করে হবে? এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তাতে যেমন সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে তেমনই নাগরিকদের সচেতন ভাবে প্রতিটা নিয়ম পালন করতে হবে। যতটা সম্ভব এসি, গাড়ি কম ব্যবহার করতে হবে। কাঁচের বাড়ি বানানো বন্ধ করতে হবে। গাছ লাগাতে হবে, তবে যদি কিছুটা বদল আসে।'

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    দূরত্ব বিধি মানা উঠে গেলেও কলকাতার অটোরিকশায় ভাড়া আর কমল না।

    রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ার দরুন দুই বোনেরই খুব ছোট বয়সে দেশপ্রেমের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।

    ও সব বাবুদের রোগ, তাদের হয়। বুঝলেন?

    আমাদের বদলের নেপথ্যে থাকে আমাদের চারপাশের মানুষ এবং পরিস্থিতি সেই কথাই মনে করাল এই ছবি।

    ডায়মন্ড হারবারে মিলেছে প্রাণিবিদদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত জীবাশ্ম এক ধরনের মাছ

    শ্রীলঙ্কার অশান্তি খারাপ শাসনের একটি পাঠ এবং একটি বিপজ্জনক নজির

    তপ্ত কড়াই দিল্লি -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested