×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সুন্দরবন ডুবু ডুবু, কলকাতা ভেসে যায়

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 23-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    সুন্দরবন কিন্তু দূরে নয়! আর ডুবে যাওয়ার কথা যে বলা হচ্ছে সেটাও কিন্তু সূর্যের নিভে যাওয়ার মতো 500 কোটি বছর পরের ঘটনা নয়। কলকাতা থেকে 100 কিলোমিটারের মধ্যেই সুন্দরবন। আর হ্যাঁ, মাত্র 100 বছরের মধ্যেই সেই অঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে সমুদ্র গর্ভে। আর তাতে শুধুই সুন্দরবন বা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মানুষ ভুগবে এমন না, রেহাই পাবে না কলকাতাও। গাছ কেটে, বন্যপ্রাণ ধ্বংস করে আমাদের রক্ষাকর্তা সুন্দরবনকে আমরা অনেকটাই ধ্বংস করেছি। তবুও সে দুহাত দিয়ে সমস্ত ঝড় জলের দাপট থেকে আমাদের রক্ষা করে চলছে এখনও। কিন্তু ধ্বংসলীলা যদি এমন হারেই চলতে থাকে তবে আর মাত্র আশি থেকে একশো বছরের মধ্যে সেই অঞ্চল সমুদ্র গর্ভে ডুবে যেতেই পারে। 

     

    গ্রিনল্যান্ড ISMIP6 নামক একটি প্রজেক্টে প্রায় 6 বছর ধরে 60 জনের বেশি বরফ, সমুদ্র এবং আবহাওয়ার বৈজ্ঞানিকরা মিলে কাজ করেছেন নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তথ্যের উপর। তার বিষয় হল এভাবে যদি কার্বন নির্গমন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন চলতে থাকে তবে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাঁই এবং হিমবাহগুলোর কী পরিণতি হতে পারে। দেখা গিয়েছে গ্রিনহাউজ গ্যাসের জন্য উষ্ণায়নের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকায়। এই সমীক্ষা এবং গবেষণা অনুযায়ী প্রায় 38 সেন্টিমিটার অবধি জলস্তর বাড়তে পারে মাত্র 80 বছরেই।

     

    গ্রিনহাউজ গ্যাস বলতে কী বোঝাচ্ছে এখানে? গ্রিনহাউজ গ্যাস বলতে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, প্রভৃতি গ্যাসের কথা বলা হয়েছে, যা কলকারখানা, গাড়ি, ফ্রিজ, গ্রিনহাউজগুলো থেকে উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে যার ফলে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলছে। এই দুই জায়গাতেই পৃথিবীর সব থেকে বেশি বরফ রয়েছে, সেটাই যদি গলে যায় তবে তার ফল যে খারাপ বই ভাল হবে না তা সহজেই অনুমেয়। 

     

    বর্তমানে যেভাবে উষ্ণায়ন হচ্ছে সেই ভাবে চললে 2100 সালের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড একাই সমুদ্রের জলস্তরের প্রায় 9 সেন্টিমিটার বাড়িয়ে দেবে। সেখানে অ্যান্টার্কটিকারটা খুব একটা নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না কারণ এই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফ যেমন দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে তেমনই পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় ভীষণ তুষারপাত শুরু হয়েছে। তবুও অনুমান করা হচ্ছে এভাবে চললে অ্যান্টার্কটিকার যে বরফ গলবে তাতে প্রায় 18 সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে সমুদ্রের জলস্তর। অর্থাৎ দুটিকে মিলিয়ে 38 সেন্টিমিটার, এছাড়া বিভিন্ন মহাদেশের আরও ছোট খাটো প্রচুর হিমবাহ তো রয়েছেই। 38 সেন্টিমিটারটা শুনতে হয়তো খুব ছোট লাগছে কিন্তু এর ফল যে কী ভয়ানক হতে পারে তা গবেষকরা অনুমান করছেন এবং তাই তো এইভাবে বরফ গলে যাওয়া তাঁদের  চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হারে বরফ গললে তার ভয়ংকর ছাপ পড়বে গোটা বিশ্ব জুড়ে, বিশেষত উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে। সেই অঞ্চলগুলো অল্প ঝড় হলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা তলিয়ে যেতে পারে, বারবার বন্যা হতে পারে। 

     

    বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং গবেষক ডক্টর গুরুপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় জানান, "এগুলো ভীষণ বিপর্যয়কর। যে হারে হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে এবং জলস্তর বাড়ছে তাতে আগামীদিনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। 2.4 মিলিমিটার করে 10 বছরে জলস্তর বাড়বে হয়তো। যা নগণ্য মোটেই নয়, বরং ভয়ংকর। সুন্দরবন তো এমনিই ধ্বংস হয়ে গেছে, এরপর যদি তলিয়ে যায়? তখন? এখন তাও বড় ঝড় এলে রক্ষা করে, তখন কে বাঁচাবে? এমনিই সুন্দরবন পলিমাটির উপর তৈরি, সেখানে যদি এভাবে জলস্তর বাড়তে থাকে বা বারবার ঝড়ের প্রকোপ পড়ে তার ফল যে খারাপ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।" একই বক্তব্য কলকাতার টি কে জৈন কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা ঋত্বিকা দত্তর। তিনি জানান, "এই ভাবে যদি জলস্তর বাড়তে থাকে তবে আগামী দিনে কোনও ঘূর্ণিঝড় এলে তার প্রভাব উপকূল অঞ্চলগুলোয় ভয়ংকর ভাবে পড়বে। শুধু তাই নয়, এভাবে বরফ গলে যাওয়া মানে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘতর হওয়া এবং তাপপ্রবাহ বেড়ে চলা। সুতরাং আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কার্বন নির্গমন যথা সম্ভব কমাতে হবে, বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন কমাতে হবে। তবেই হয়তো বর্তমানে যে হারে বরফ গলছে তার গতিকে কমানো যেতে পারে।" 

     

    আমরা যদি এখনও সচেতন হই তবে কোথাও একটা আশার আলো হয়তো রয়েছে। বিপদটাকে সমগ্র ভাবে এড়িয়ে ফেলতে না পারলেও তার প্রভাব কমানো যেতেই পারে। ফলে আমাদের আরও অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। যতটা সম্ভব কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। তবেই আগামী দিনে যে বিপদ অপেক্ষারত তাকে এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। 


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    পৃথিবীব্যাপী মহাসাগরীয় স্রোতের সূত্র ধরেই ক্রান্তীয় অঞ্চলে তাপমাত্রার ওঠানামা

    এই পরিমাণে ফার সিলের মৃত্যু পরিবেশবিদদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    কেন ওর বাবার মৃত্যুর পরও মিথ্যা খবর দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? কেন এতদিন দেরি করল ওরা বাবার শেষকৃত্য কর

    দূরত্ব বিধি মানা উঠে গেলেও কলকাতার অটোরিকশায় ভাড়া আর কমল না।

    পরবর্তীকালে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই হুমকি দিয়ে যায়

    মৌমাছিবিহীন মধু তৈরি করছে ইজরায়েলি সংস্থা Bee-io যাতে শুধু মৌমাছিই বাঁচবে না

    সুন্দরবন ডুবু ডুবু, কলকাতা ভেসে যায়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested