"পড়াশোনা কেমন চলছে?'
"ভাল।'
"সব পড়া তৈরি?'
"মোটামুটি।'
"ভাল রেজাল্ট হবে তো?'
"দেখি। চেষ্টা করব।'
এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের এক সন্ধ্যাবেলায় যখন দেখা করতে যাই, আবাসিক স্কুলটার সিঁড়ি দিয়ে নেমে লাজুক মুখে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটা। ওর সঙ্গে সেদিন প্রথম আলাপ। ইতিহাস তৈরি করতে চলা মেয়েটির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা এবং কথা বলা। কথা বলতে উপরোক্ত ক’টি প্রশ্ন এবং ওর দেওয়া ছোট ছোট উত্তরগুলো।
মেয়েটি হল পশ্চিমবাংলার যে তিনটি বিলুপ্তপ্রায় আদিম জনজাতি আছে, তারই একটি জনজাতি "বিরহড়' গোষ্ঠীর প্রথম মেয়ে, যে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল। মেয়েটির নাম জানকী শিকারী। একই সঙ্গে ওর দিদি রত্নী শিকারীও উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিল, কিন্তু তার ফল অসম্পূর্ণ এসেছে।
বিরহড়রা পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন ব্লকে বাস করে। সংখ্যা 400-র কাছাকাছি। তাদের প্রধান কাজ জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটা এবং সঙ্গে চাষ করা। জানকী এবং রত্নী থাকে ভূপতিপল্লী গ্রামে। বাকিদের সঙ্গে তারাও জঙ্গলে যেত কাঠ কাটতে। বাবা মায়ের সঙ্গে চাষের কাজেও সাহায্য করত। তারই মধ্যে কোনওদিন আধপেটা, কোনওদিন না খেয়েও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। এত অভাব-অনটনের মধ্যে দমে যায়নি তারা। কিছু করে দেখানোর অদম্য জেদ, নতুন জিনিস জানার ইচ্ছে নিয়ে হাজারো সমস্যা, বাধা পেরিয়ে এই সফলতা পেল সে।
পুরুলিয়া জেলার বাঘমুণ্ডির, ধস্কার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু বিদ্যালয় থেকে 217 নম্বর নিয়ে এ বছর জানকী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল। বাড়িতে তাকে পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। সে একাই যতটা পারত তার নিজের মতো করে পড়ত। যদিও ওর "ইস্কুলের' শিক্ষক শিক্ষিকারা সাহায্য করতেন। "কন্যাশ্রী'-র অনুদানও খানিকটা আর্থিক সহায়তা করেছিল ওর এই যুদ্ধে। আবাসিক স্কুলে থেকেই পড়াশোনা করেছে জানকী, ছুটিতে বাড়ি ফিরত। বাড়ি ফিরে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘর গেরস্থালির কাজ, চাষের কাজ সবই করত নিজের হাতে। তার এই ভাল ফলাফলে ভূপতিপল্লী গ্রামের সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। তাদের এক মেয়ে যে নজির গড়ে দেখাল। শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তির জোর এবং পরিবারের সমর্থনে অভাবকে সঙ্গে নিয়েই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল।
জানকী জানায়, সে বর্তমানে পুরুলিয়ার কোনও কলেজ থেকেই বাংলা নিয়ে পড়ে আগামী দিনে স্কুল শিক্ষিকা হতে চায়। আরও অনেককে সাহায্য করতে চায়, বাকিরা যেন তাকে দেখে উৎসাহ পায়। আরও অনেকে যেন পড়াশোনা করতে এগিয়ে আসে, তার এটাই ইচ্ছে। জানকীর মা তুরি শিকারী বলেন, "খুব আনন্দ হচ্ছে ওর এই ফলে। আমি চাই ও আরও পড়ুক। চাকরি করুক।' বাবা ভোলানাথ শিকারীও বেজায় খুশি মেয়ের রেজাল্ট দেখে।
বাবা মায়ের এবং জানকীর ইচ্ছে, সে পড়াশোনা করবে। কিন্তু যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা, সেখানে উচ্চশিক্ষা কী করে সম্ভব? জানকীর স্বপ্ন কি অধরা থেকে যাবে তবে? বিরহড়দের নিয়ে কাজ করা "মৈত্রেয়, টিম বিরহড়' সংস্থা এগিয়ে এসেছে ওদের পাশে। তারা জানকী এবং তার দিদির পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে। মৈত্রেয়'-র পক্ষ থেকে সপ্তর্ষি বৈশ্য বলেছেন, "ওর এই ফলাফলে আমরা ভীষণ খুশি। অর্থের অভাবে ওদের কারও পড়াশোনা বন্ধ হবে না। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে, যেন পড়াশোনা করেও বেকার হয়ে বসে না থাকে। তবে এত চেষ্টার ফল বিফলে যাবে।'
কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি এখনও, পড়াশোনার চাপ নেই, তাই জানকী এখন তার বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করছে। ফোনে যখন কথা হল, তখনও সে ধানের চারা রোপণ করছে মাঠে। ইতিহাস তৈরি করেও মেয়েটি ভুলে যায়নি তার শিকড়ের টান।
আগামীদিনে সে শিক্ষিকা হয়ে আরও একবার ইতিহাস তৈরি করে দেখাবে সেই স্বপ্নই তার দু’চোখে এখন। নিজের স্বপ্নের আরও এক মাইলফলক ছুঁয়ে দেখবে সে, এটাই ইচ্ছে। তাদেরকে দেখে এই লুপ্তপ্রায় জনজাতির বাকি মেয়েরা পড়াশোনা করতে উৎসাহিত হবে এবং ঘুরে দাঁড়াবে এই আশাই রাখে জানকী। তবে যদি চাকরি না পায়, এত কষ্ট করে পড়াশোনার পরও যদি সেই অভাবের অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতে হয়, তবে হয়তো ওর এই চেষ্টা, এই ফল সমস্তটাই অর্থহীন হয়ে যাবে। কিন্তু এত কিছু সে এখনই ভাবতে চায় না। তার এখন একমাত্র লক্ষ্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। অজানাকে জেনে নিজেকে আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তোলা।
কুচপুরা গ্রামে হঠাৎ করেই চাষের জমি ফুলে ফেঁপে ওঠে, নেপথ্যে কী?
অবশেষে আত্মনির্ভরতা অর্জন ভারতীয় ফ্যাশন শিল্পের, বস্ত্র মন্ত্রক সরকারিভাবে প্রকাশ করল ভারতীয় পোশাকের
এটাই হেডলাইন। সঙ্গে পাওয়া গেছে এই সুইসাইডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আর একটা চিরকূট।
স্বামী ধর্ষণ করলেও সেটা ধর্ষণই কর্নাটক হাইকোর্টের এই রায় বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে নতুন ভাবনার দরজা খুলে দ
ভাষণের দিন শেষ, রাজনৈতিক প্যারোডিই এখন প্রচারের নতুন ভাষা
আরে বাবা এ গ্রাম পঞ্চায়েত না। এটা খাপ পঞ্চায়েত। এখানে কেউ দুষ্টুমি করলেই বিচার হয়।