×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ভার্চুয়াল দুনিয়ার ফুটেজময় খাপ পঞ্চায়েত

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 07-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    জ্ঞান দি মন দিয়ে খবর দেখছে। আরে যেই সেই খবর নাকি? কাল সেই দুষ্টু অভিনেত্রীকে ছয় ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। ভাইটাকে তো গ্রেফতার করেছে, বেশ হয়েছে। এবার ওর পালা। ভাল করে মন দিয়েছে দেখছে, আরে বিকেলে অনলাইনে একটা সালিশি সভা আছে কিনা! কোনও পয়েন্ট মিস করা চলবে না। যদি বিপরীত পক্ষের কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে তবে লজ্জার ব্যাপার হবে। পাশের চ্যানেলে এখন অবশ্য দেখাচ্ছে জিডিপি নিচে নামছে, আঞ্চলিক ভাষার একটা চ্যানেলে দেখাচ্ছে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, কিন্তু দিদির প্রিয় যে এই খবরই, বাকি সব গোল্লায় যাক। প্রিয় অভিনেতার মৃত্যুর জন্য ওই দুষ্টু অভিনেত্রীর শাস্তি চাই। লড়ে নেবে সে। কিন্তু এভাবে লড়ে তো চাকরিও পেতে পারত! কিন্তু আগে এটাই জরুরি। বাকি কথা থাক সব।

     

    এমন সময় নজর গেল একটা আদিরসাত্মক পোস্টে। দেখেই হাসি পেল। দুষ্টু অভিনেত্রী আর মিষ্টি দাদু। টুক করে শেয়ারও করে ফেলল জ্ঞান দি। কিন্তু এ কী! ভাই এসব কী লিখছে! ছেলেটা বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে তো। লিখেছে, "কদিন আগে তুই না বললি মেয়েদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত! কার সঙ্গে ঘুরবে ফিরবে, কী পরবে তার পছন্দের হবে। তাহলে এটা এখন কেন শেয়ার করেছিস?' আরে বাবা, সেসব পোস্ট তো অন্যদের জন্য! বোঝে না নাকি? এই দুষ্টু অভিনেত্রীর জন্য সেসব তথ্য খাটবে কেন? সে তো খুনি। যদিও তথ্য দিয়ে বা তদন্তে সে কথা ঠিক করে প্রমাণিত হয়নি। তাতে কী? ওরা তো জানে যে দুষ্টু অভিনেত্রী খুনি। কিন্তু কী করে জানে তা কেউ জানে না অবশ্য। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে দু'চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল অভিনেত্রী হবে বলে, কিন্তু প্রেমে পড়ল এক নাম করা অভিনেতার! এক সঙ্গে দিন যাপন করল, আবার সুযোগ বুঝে সরেও পড়ল, মারা যাওয়ার পর তেমন শোকাহত হল না? এ খুনি না তো কে? কে কে কে? জ্ঞান দি যেন শুনতে পাচ্ছে সন্ধ্যাবেলার সিরিয়ালের সেই বিখ্যাত ঢ্যাং ঢ্যাং মিউজিক। নিজের মধ্যে একটা গোয়েন্দা গোয়েন্দা ব্যাপার অনুভব করে বেশ মজা পেল জ্ঞান দি।

     

    বিকেলে সালিশি সভা দারুণ হল। পঞ্চায়েতের রায় যে ওদের দিকেই এল, সবাই মেনে নিল এটা খুন না হয়ে যায় না, আর সব দোষ নন্দ ঘোষ, থুড়ি সেই দুষ্টু অভিনেত্রীর। কিন্তু ভাবছেন তো, পঞ্চায়েতে এসব আবার কী! আরে বাবা এ গ্রাম পঞ্চায়েত না। এটা খাপ পঞ্চায়েত। এখানে কেউ দুষ্টুমি করলেই বিচার হয়। পুলিশ, আদালত এসবের অপেক্ষা করা হয় না। নিজেরাই গোয়েন্দা হয়ে বিচার করা হয়। আলাদাই ব্যাপার সে এক। বিপরীত পক্ষ বলে নাকি এসব ভোটের জন্য চাল! হ্যাঁ! এত বড় কথা! শুধুমাত্র ভোটের জন্য একটা চ্যানেল কখনও এত খাটতে পারে? সব কাজ ফেলে দিয়ে একই খবর দেখাতে পারে? আরে বাবা খবরের চ্যানেল ছেড়ে দিক, বিহার পুলিশ! তারা কি ভোটের জন্য এসব করছে? না তো! শুধুই ভালবাসার খাতিরে তাদের গাঁওয়ালে ভাইয়ার জন্য জান প্রাণ লড়িয়ে দিচ্ছে। জ্ঞান দি ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছে এসব। সে কী তত্ত্ব বাবা! একদম পয়েন্ট টু পয়েন্ট। ইডি, পুলিশ কেউই যে জিনিসগুলো দেখেনি, গলার দাগ, চোখের ধরন সব এক এক করে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে জ্ঞান দি কত বড় গোয়েন্দা! বাকিরা যা দেখেনি ও ছবি দেখেই সব বুঝে গেছে। সব থেকে বড় কথা আর গোয়েন্দাদের তদন্তের দরকার কী? দোষী তো প্রমাণিত হয়েই গেছে সোশাল মিডিয়া বিচারকদের কাছে, এবার একটা "পোল' খুলে রায় দিয়ে দিলেই হল, যে আজীবন কারাদণ্ড নাকি অন্য কিছু সাজা হবে! আজকাল তো সবই অনলাইনে হচ্ছে তবে এটা কেন হবে না শুনি?

     

    ওদিকে বিরোধীরা আবার প্রশ্ন তুলেছে, যে হঠাৎ খুন থেকে মাদকের দিকে কেস ঘুরে গেল কেন? এটাও বোঝে না, আবার তর্ক করতে এসেছে! আরে বাবা ওসব মাদক ফাদক খাইয়েই তো অসুস্থ করে দিয়েছিল তরতাজা ছেলেটাকে! আহা গো! এবার বুঝুক কেমন লাগে!

     

    জ্ঞান দির মন এখন বেশ ফুরফুরে, আজ বেশ ফুটেজ খাওয়া গেছে। কিন্তু নিন্দুকেরা যেসব আলোচনা করছে সেটাও ভাববার বিষয়। পছন্দের অভিনেতাকে কে মেরেছে তা আলোচ্য বিষয় কিন্তু দুষ্টু অভিনেত্রী এখন আত্মহত্যা করলে তার দায় কার হবে? তার উপর যে অসম্ভব মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জ্ঞান দি বেশ খানিকক্ষণ ভাবল। তারপর যুতসই একটা উপায় বের করে হেসে উঠল। তেমন কিছু হলে আবার দল বদল করা যাবে! তখন নারীবাদী হয়ে উঠবে সে। সোশাল মিডিয়ায় বড় বড় পোস্ট দেবে, ওকে চাপ দেওয়া হয়েছে, মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। ব্যাস! দু'দিকেই লাভ! আরে বাবা যা ভাবি আর যা লিখি দুই এক হতে হবে কোথায় বলা আছে? নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে পারি আবার কোনও মেয়েকে বেশি রাতে ফিরতে দেখে কটূক্তিও করতে পারি। তাতে কী আর এসে যায় এমন? ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সবই ফুটেজময়। অযথা রিচ কমে গেছে করে লাফালাফি করার বদলে, সহজে "বিখ্যাত' হতে চাইলে এসব বিষয় নিয়ে একটা জ্বালাময়ী বা বির্তক হতে পারে এমন পোস্ট দিয়ে দিলেই হয়! ফুটেজ এবং খ্যাতি দুইই পায়ের কাছে "জয় মা' বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটা যে কেন কেউ বোঝে না কে জানে!

     

    (জ্ঞান দি নামটি কাল্পনিক)


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    চাঁদের কারণে আগামী দশকে পৃথিবী ভাসতে চলেছে।

    এবারের দীপাবলি ধোঁয়াহীন রাখার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে খুশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

    ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের নাচ দেখিয়ে রাম নবমী পালন

    মহাকাশ গবেষণায় যেন এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল নাসার এই নতুন আবিষ্কার।

    নগেন্দ্র প্রসাদের জীবনীর হাত ধরে দর্শক আবার হলমুখী।

    মহামারীজনিত আইনগত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করল সরকার, প্রায় দু’বছর পর মুক্ত জীবন ফিরে পেল দেশবাসী।

    ভার্চুয়াল দুনিয়ার ফুটেজময় খাপ পঞ্চায়েত-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested