সারা দেশ তোলপাড় এখন একটাই নিউজে। সমস্ত খবরের কাগজ, টেলিভিশন চ্যানেল, পোর্টাল সব জায়গায় এক খবর। ‘লোকাল ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করল করোনা ভাইরাস।' এটাই হেডলাইন। সঙ্গে পাওয়া গেছে এই সুইসাইডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আর একটা চিরকূট।
চিরকূট মানে সুইসাইড নোট, অবশ্য সেখানে করোনা নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী করেছে। সে জানিয়েছে এই পোড়া দেশে এসে সে খুব ভুল করে ফেলেছে, এত অবজ্ঞা, এত হেলাফেলা সে আর কোথাও পায়নি। সে নিজেকে এখন অপমানিত রাজ্যপাল মনে করছে। তার ভয়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এখানে লোকজন ঠাকুর দেখেছে, রেস্তোরাঁয় মজা করেছে, ভিড়ে ঠাসাঠাসি জায়গা থেকে শপিং করেছে, করোনা সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু আর পারল না সে সইতে। লোকাল ট্রেনের প্যাসেঞ্জাররা বলে কিনা ‘করোনা কী? সে কী করবে?’ এত মৃত্যু, এত অসুস্থতা দেখেও এই কথায় মরমে মরে গিয়েছিল করোনা। অর্ধেক মানুষের মুখে মাস্ক নেই, সেটা কানে ঝুলছে বা ব্যাগে। কেউ কেউ তাস খেলছে, কেউ আবার একই ঠোঙা থেকে ঝালমুড়ি খাচ্ছে, থুথু ফেলছে, একজন আর একজনের ঘাড়ের উপর কাশছে। একজন তো বলেই দিল ‘ভাগ্যিস লোকাল ট্রেন চালু হল, নইলে তো বিজয়াই করতে যেতে পারতাম না!’ কথা দেখো! যেন মোচ্ছব লেগেছে! আর একজন বলে, ‘কদ্দিন শ্বশুর বাড়ি যাইনি, ট্রেনের দয়ায় আটমাস বাদে যাচ্ছি।‘ যারা আবার করোনাকে অল্প বিস্তর সম্মান দিচ্ছিল, তাদের বাকিরা ভয় দেখিয়ে বলেছে ‘ট্যাক্সি, প্লেনে’ যেতে। এসব দেখেশুনে তাজ্জব হয়ে গেছে বেচারা করোনা, ভাবল কোথায় সবাইকে ভয় দেখাবে আর এরা কিনা উল্টে ওকেই ভয় দেখাচ্ছে!
ভারতীয় রেল অবশ্য ভালই ব্যবস্থা করেছিল, সিট মার্ক করে দেওয়া, স্টেশনে গোল এঁকে দেওয়া। কিন্তু মাতব্বরগুলো সেই চিহ্নে রুমাল রেখে বলে কিনা ‘বসে পড়ুন আর কিছু হবে না?' এক সিটে সেই চারজন! মানে জাস্ট এভাবে পাত্তা দেবে না?
এই নিয়েই শোরগোল পড়ে গেছে সারা রাজ্য তথ্য দেশে। করোনার সুইসাইড নোট পাওয়া গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী অবশ্য অন্য জিনিস দাবি করছেন। তাঁর মতে, এত ভিড়ে সবুজ জামা পরা করোনা হাঁকপাক করছিল, বেরোতে পারছিল না কিছুতেই, পুরো চিঁড়েচ্যাপ্টা কেস। বেচারা সে শ্বাস নিতে না পেরে কী অবস্থা। শেষে দরজার কাছে এসে দাঁড়াতে যাবে তখন ভিড় আর প্যাসেঞ্জারদের গুঁতোগুতি সামলাতে না পেরে লাইনে ছিটকে পড়ে, আর তাতেই তার মৃত্যু হয়। ভাবা যায় যেখানে করোনা মানুষকে মারছিল, সেখানে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনাকেই মেরে দিল!
গোটা দেশের মিডিয়া যখন এই খবরে ব্যস্ত, তখন লোকাল ট্রেনের প্যাসেঞ্জাররা ঠিক করেছে তারা গেদে লোকাল চড়ে দিল্লি যাবে ‘বীর পুরষ্কার’ দাবি করতে। করোনাকে মেরে ফেলা একটুখানি কথা নাকি? যা তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা পারল না, তা মাত্র একদিনে লোকাল ট্রেন করে দেখিয়ে দিল। এ’টুকু সম্মান তো দাবি করতেই পারে তারা। নয় কি?
যাক গে, এবার আরেকটা খবর দিই শুনুন, ‘ভারতকে মডেল করে সমস্ত দেশেই এখন লোক বোঝাই করা লোকাল ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।' এটা হচ্ছে আগামীকালের হেডলাইন। আপনাদের আগে থেকে বললাম, কাউকে বলবেন না যেন!
এটাই হেডলাইন। সঙ্গে পাওয়া গেছে এই সুইসাইডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আর একটা চিরকূট।
নিজেদেরই তৈরি করা সমস্যায় মানুষ এখন নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে
পথ কুকুরদের জন্য শ্রীলেখার Pawsome Date
বরাবর যে বর্ণবৈষম্য চলে আসছে তার ছাপ করোনা সংক্রমণের হারেও পড়েছে এবং ফল হিসেবে প্রাণ হারিয়েছেন বহু
নিউ নর্মালে সবই কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, বদলে গেছে চেনা আড্ডা, চেনা জায়গাগুলো।
বেলস পলসি কী, কেন হয় জানেন কী?