"ব্যাগ পত্তর এখানে রেখে আগে বাথরুমে যা। বেরিয়ে ব্যাগে ভাল করে স্যানিটাইজার মাখিয়ে তারপর জায়গায় রাখিস।'
"এতক্ষণ ধরে হাত ধুচ্ছিস কেন? কুড়ি সেকেন্ড ধুলেই তো হবে!'
এই ধরনের কথা এখন ঘরে ঘরে, অহরহ। চলছে বাইরে থেকে এসেই দীর্ঘক্ষণ ধরে স্নান করা, পরিষ্কার হওয়া, ঘনঘন হাত স্যানিটাইজ করা, ঘরের বাইরে পা দিলেই মুখে মাস্ক লাগানো। ভয়, আশঙ্কা, কিছুটা আতঙ্কও কমবেশি আমাদের সবার মনে গেঁথে বসে আছে। অতি সতর্কতাই অনেকের ক্ষেত্রে আবার বাতিকে পরিণত হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো সারাদিন গৃহবন্দি থেকেও এক ঘন্টা ছাড়া ছাড়া গিয়ে হাত ধুচ্ছে। কিন্তু এটা কি ঠিক? এই ভয় কি কোনও ক্ষতি করতে পারে আমাদের? মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী পূর্বাশা মুখোপাধ্যায় জানান, "অনেকের মধ্যে এখন OCD, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওর্ডার তৈরি হয়ে গেছে। বারবার অকারণে হাত ধোওয়ার, ভয় পাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। একটা বিপুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে সবার মধ্যে। হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়। কথায় কথায় আতঙ্কিত হওয়া একদম ঠিক কথা না। আতঙ্কের সঙ্গে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের সম্পর্ক আছে, তাই অকারণ ভয় পেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার তেমনই কোনও নিয়ম না মানাও কাজের কথা নয়, কানে মাস্ক ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও হবে না। হাইজিন মেনটেইন করা বা কোনও বিষয়ে সচেতন থাকার অভ্যেসগুলো ভাল, তবে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এই অভ্যেসগুলোর কারণেই আমরা দূষণজনিত, ধুলোবাহিত রোগগুলোর থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাব বলেই আমার ধারণা।'
আমাদের জ্ঞানত বা অজান্তে যে অভ্যাস তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের করোনা থেকে বাঁচাক বা না বাঁচাক, আগামীদিনে অন্যান্য নানা রোগ থেকেও রক্ষা করবে। যেভাবেই হোক আমরা এই রোগকে নিজের থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি, যার ফলে বাড়ির তৈরি খাবার খাচ্ছি, অকারণ বাইরে বেরোচ্ছি না, বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি খাচ্ছি। আখেরে আমাদের ভালই হবে এতে, মনে করছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক শ্রীদীপ মণ্ডল। তিনি জানান, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নানাভাবে যে সাবধানতা অবলম্বন করছি এবং আমাদের মধ্যে যে অভ্যাস গড়ে উঠছে, তা অবশ্যই ভাল। এই বারবার হাত ধোওয়া, পরিষ্কার থাকার কারণে বিভিন্ন জলবাহিত রোগ, যেমন ডায়েরিয়া, কলেরা, প্রভৃতি কমবে। মানুষ আগে হাত ধোওয়ার গুরুত্ব বুঝত না, এখন বুঝছে এটা একটা ভাল দিক। এই অভ্যেস আগামীদিনেও বজায় রাখলে আরও নানা রোগ কমবে বলেই মনে করি।'
তবে কোনও কিছুই অবিমিশ্র ভাল নয়, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন অন্য চিকিৎসকরাই। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক রোগ বিশেষত জলবাহিত, ধুলোবাহিত রোগ কমবে আগামীদিনে, সেটা স্বীকার করেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ডক্টর রূপলেখা মিত্র মুস্তাফি বলছেন, ‘কিন্তু এর একটা খারাপ দিকও আছে। আমরা অনেক রোগ বা ইনফেকশন থেকে সুরক্ষিত ছিলাম, কারণ অনেক রোগের ইমিউনিটি আমাদের মধ্যে অজান্তেই গড়ে উঠত। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে আমরা পরিষ্কার পরিছন্ন থাকছি, সচেতন হয়েছি তাতে সেই ইনেট (শরীরের নিজস্ব) ইমিউনিটি কমবে। সব কিছুরই ভাল-খারাপ দু’টো দিকই আছে। তবে আপাতত এই মহামারী থেকে নিজেদের রক্ষা করাই মূল লক্ষ্য।‘ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক মৌমিতা দত্ত জানান, ‘আমরা যে মাস্ক ব্যবহার করছি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি, তাতে যে শুধুই ধুলোবাহিত রোগ এবং করোনা থেকে মুক্তি পাব এমনটা নয়। বিভিন্ন ধরনের ফ্লু বা অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকেও নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হব। বর্তমান পরিস্থিতির ভয়ে আমাদের মধ্যে যে অভ্যেসগুলো গড়ে উঠেছে তা ভাল, এবং এগুলো করোনা পরবর্তী সময়েও বহন করা উচিত। সুস্থ অভ্যাস এগুলো।‘
করোনার মোকাবিলায় আমাদের অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়ার ফলে ডাস্ট অ্যালার্জি, ডায়েরিয়া, কলেরা বা অন্যান্য রোগের প্রভাব কমবে– এটা অবশ্যই সুখবর। তেমনই সারাদিন বাড়িতে থাকার ফলে মন ভাল রাখতে নানা সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ মিলছে। নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করছি যেন এই দুঃসময়ে। বাধ্য হয়েই জাঙ্ক ফুড বাদ গেছে, বাড়ির স্বাস্থ্যকর খাবারই এখন সম্বল। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ের কালো মেঘে একটাই রুপোলি রেখা– করোনারও কিঞ্চিৎ উপযোগিতা আছে!
লড়াই করার ভীষণ জেদকে হাতিয়ার করে মাত্র তিন বছরেই সাফল্যের স্বাদ পেল দীপান্বিতা গুপ্তর ডায়মেনশন্স
আগের ফুলে থেকে কাজ করতে পারছিল না বলে মউদি ফুল বদল করল
সব শাশুড়ি কি সমান হয়? ভাল মন্দ কি সকলের মধ্যেই থাকে না?
বছরের পর বছর বরফে জমে থাকা পর্বতারোহীদের মৃতদেহ বিশ্ব উষ্ণায়ন ফলে প্রকাশ্যে আসছে।
এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে
ভদ্রস্থ চাকরি পাওয়ার নিরিখে কলকাতা রয়েছে সবার শেষে।