আজকের দিনে সাধারণ পরিবারে একটি সন্তানকেই মানুষ করতে হিমসিম খাচ্ছে মানুষ। সেখানে অন্য রকম গল্প শোনাল ২২০জন সন্তানের ‘বাবা’ ডেভিড।
"আশিয়ানা’, মানে ঈশ্বর যেখানে বাস করেন। নানা বয়সের শিশু, কিশোর কিশোরীরা যেখানে একসঙ্গে থাকে, তাদের হাসি ঠাট্টার শব্দের মাঝে ঈশ্বর তো বাস করবেই। আর এই আশিয়ানা হ্যাপি হোম-ই হল ডেভিড আর জোয়েসের স্বপ্ন বাড়ি।
সিনেমার গান যে কীভাবে মানুষের মনে নতুন ভাবনা জাগাতে পারে, তা জানালেন আশিয়ানা হোমের কর্ণধার ডেভিড। হিন্দি ছবি ‘বরফি’-র আশিয়ানা গান শোনার পর ডেভিড "হ্যাপি হোমের’ নাম বদলে রাখলেন, "আশিয়ানা হ্যাপি হোম’। মানে, যেখানে আনন্দ অফুরান। সত্যিই আনন্দ, মজা আর ছোটদের কলতানে ভরপুর বাড়িটা ভীষণ প্রাণবন্ত। দমদম ক্যান্টনমেন্টের মাঠকল অঞ্চলের এই হোমটায় জীবনের ছোঁয়া প্রত্যেকটা জিনিসে, নতুন ভাবে বাঁচার মানে সব কিছুর মধ্যেই।
আদতে হায়দ্রাবাদ নিবাসী ডেভিড ২০০৩ সালে কলকাতা আসেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং এক বছরের পুত্র। কলকাতায় আসা মানুষের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে। ২০০৪ সালের ১লা জুন থেকে ২১ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় আশিয়ানা হ্যাপি হোমের পথচলা। ডেভিড এই ২১টি বাচ্চার যাবতীয় দায়িত্ব নেন। মানুষ করতে থাকেন সন্তান স্নেহে। ষোলো বছর বয়সি এই হোমের বর্তমান আবাসিক ২২০ জন বাচ্চা।
ওরা সবাই একসাথে পড়তে বসে, খেলে, ঘুমায়। অদ্ভুত বাঁধনে বাঁধা একে অপরের সাথে। পড়াশোনার পাশাপশি ওদের শেখানো হয় গান। স্থানীয় যুবক অর্ণব হালদার প্রত্যেক শনিবার আসেন ওদের গান শেখাতে। তাঁর কথায়, "ভালো লাগে ওদের সাথে সময় কাটাতে। ডেভিডের এই কর্মযজ্ঞে থাকতে পেরে খুশি।’ শুধু পড়া বা গানই নয়, তারা অন্যান্য কাজও শেখে। দায়িত্ব ভাগ করে নেয় নিজেদের মধ্যে। বাসন পরিষ্কার করা, খাবার বেড়ে দেওয়া, জামা পরিষ্কার করা সবই করে তারা। যেমন দেড় মাস বয়সে আসা লুমিনা আজ ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী। স্মাইলি তার দুষ্টুমি দিয়ে মাতিয়ে রেখেছে সবাইকে। তেমনই প্রিয়াঙ্কা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। এই হ্যাপি হোমের আনাচে কানাচে যেন সত্যি ছড়িয়ে আছে রাশি রাশি আনন্দ।
ওরা নিজেদের থালা বাসন নিজেরাই পরিষ্কার করে এভাবেই
বাচ্চারা ডেভিডকে "ড্যাডি’ বলে ডাকে। আর তাদের ড্যাডি-ও হাসিমুখে সমস্ত দায়িত্ব পালন করে মানুষ করছে ওদের। পাশে আছেন ওঁর স্ত্রী জোয়েস। যতদিন না তাঁর সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত হয়, ততদিন তাদের হাত ছাড়েন না এই দম্পতি। আগলে রাখেন। ডেভিডের চেষ্টার দাম দিয়েছে তাঁর সন্তানেরা। আজ তারা কেউ সরকারি চাকরি করছে, কেউ বা নামকরা আইটি কোম্পানিতে কর্মরত। সন্তানদের সাফল্যে গর্বিত তাদের "ড্যাডি’।
এখানে প্রচলন আছে এক অভিনব প্রথার। ৭ বছর বয়স অবধি বাচ্চাদের নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেন ডেভিড। একই থালায় সবার জন্যে ভাত মাখেন। সুন্দর করে লাইন দিয়ে খাবার জন্যে দাঁড়ায় বুনি, শুভঙ্কররা। ডেভিডের মতে, ‘এতে ওদের পেট ভরে। খাবারও নষ্ট হয় না।’ উনি আরও বলেন, "বাড়িতে ভাই বোনেরা তো একই থালা থেকেই মায়ের হাতে ভাত খায়, তেমনটা এখানেও।’
খাবার বেড়ে দিচ্ছে প্রিয়াঙ্কারা
বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে আশিয়ানা। তবে সবাই একসাথে সেই বিপদ কাটিয়েও উঠেছে। এখানে সরাসরি কোনও আর্থিক অনুদান নেন না ডেভিড। বরং, নিত্য জীবনে যা প্রয়োজনীয়, তাই-ই চেয়ে নেন গুড সামারিটানদের থেকে। তাঁর ভাষায়, ঈশ্বরই আমাদের সকলের ব্যবস্থা করে দেন। কলকাতার মধ্যেই যেন এক রূপকথার রাজ্যের খোঁজ দিল এই আশিয়ানা হ্যাপি হোম, যেখানে গেলে সত্যি ভাল লাগায় মন ভরে ওঠে
।
ভাষণের দিন শেষ, রাজনৈতিক প্যারোডিই এখন প্রচারের নতুন ভাষা
গ্যালাক্সির মাঝখান থেকে রহস্যময় রেডিও সঙ্কেতের পিছনে কি বুদ্ধিমান প্রাণী?
পাতাখোর হলে যেন চুরির অপরাধ আর ধর্তব্য নয়!
পুজো যখন সবার, উপহারও তো সবারই পাওয়ার কথা, নয় কী?
ওমিক্রন ছড়াচ্ছে, সতর্কতা কই?
নাছোড় বৃষ্টিতে নাজেহাল ভারতবাসী।