- ‘হ্যালো, কী করছিস?’
- ‘অফিসে। কাজই করছি। তা তুই যে এই ভরদুপুর বেলা ফোন করছিস বড়! তোর অফিস নেই?’
- ‘আছে। মানে শরীরটা আজ ভাল লাগছিল না, তাই WFH করছি।’
- ‘WFH? সেটা আবার কী? তুই এই শর্ট ফর্মে কথা বলা যে ক’বে বন্ধ করবি!’
- ‘আরে WFH মানে work from home. বাড়ি থেকেই কাজ করছি আজ।’
মাস ছয় আগের একটা কথপোকথন। তখন একটা কথাই মনে হয়েছিল, ‘ইস্! আমাদেরও যদি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধে থাকত!’ বলাই বাহুল্য, কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সাংবাদিকদের সেই অর্থে ওয়ার্ক ফ্রম হোম হওয়াটা অস্বাভাবিক। কিন্তু মনের কথাটা যে এত তাড়াতাড়ি ফলে যাবে এবং তার কারণ যে এত ভয়াবহ হবে, সে কথা কি আর জানা ছিল!
COVID-19 মোকাবিলা করতে গিয়ে যাঁরা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ছাড়া সকলেই এখন ওয়ার্কিং ফ্রম হোম। এঁদের মধ্যে কিছু মানুষ এর আগেও প্রয়োজন বিশেষে ঘর থেকে কাজ করেছেন। কিন্তু টানা দেড় মাস বাড়ির বাইরে এক পাও না রেখে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার অভিজ্ঞতা বিশেষ কারও ছিল না।
বাড়ি থেকে একটানা কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? Cognizant-এ কর্মরত, ইঞ্জিনিয়ার সাগরময় জানার মতে, “আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। এতদিন টানা বাড়িতে থাকার ফলে পরিবারকেও সময় দিতে পারছি। কতদিন পর সকলে একসঙ্গে খেতে বসছি। এটা আমার কাছে বড় পাওনা। তাছাড়া কাজের শেষে নিজের কিছু পড়াশোনা বা রান্নাবান্না সেগুলোও বেশ করতে পারছি।“ আর কাজ? “বাড়ি থেকে অন কল কাজ করতে খানিক সমস্যা হয় মাঝে মধ্যে। মিটিংয়ের মাঝে সেদিন হঠাৎ কুকুর ডেকে উঠল রাস্তায়, ক্লায়েন্টও অবাক হয়ে গেছিলেন,” হেসে জবাব সাগরময়ের।
একই কোম্পানিতে চাকরি করেন আরাধ্য কুণ্ডু। “বাড়িতে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা যাতায়াতে কোনও সময় নষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু হ্যাঁ, আমার জন্য একটা ঘরে সারাদিন কেউ ঢুকতেই পারছেন না। প্রথমদিকে মা একটু বিরক্তই হতেন। ‘বাড়িতে আছিস, তবুও কোনও কাজে লাগছিস না, সারাদিন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে রয়েছিস!’ প্রায়ই শুনতে হত। তবে এখন মা ধরেই নেন যে ওই সময়টা আমি অফিসেই আছি। বাড়ি থেকে সাপোর্ট পাওয়াটা সত্যিই জরুরি!”
TCS-এ কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার সাগ্নিক ধরের প্রতিক্রিয়া আবার মিশ্র। “বাড়ি থেকে কাজ করে যাতায়াতের সময় বাঁচিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না। ম্যানেজমেন্টের অর্ডার যে ওই বাড়তি সময়টাও অফিসের কাজে থাকতে হবে। কে কতক্ষণ অন থাকছে সেটা ট্র্যাক করা হচ্ছে। বাড়িতে বসে সময়মত চা-জল-লাঞ্চ ইত্যাদি পেয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু কাজের চাপ খুব বেড়েছে। আমার ক্যানাডিয়ান ক্লায়েন্ট, ফলে পুরো উল্টো সময়ের জন্য আমাকে মাঝ রাতে উঠেও কাজ করতে হয়েছে। অফিসে গিয়ে কাজ করলে কখনও এরকম হত না।” তবে সবটাই যে খারাপ তাও মানতে রাজি নন সাগ্নিক, “যাতায়াতে সময়ের সঙ্গে এনার্জিও নষ্ট হত। এখন সেটা বেঁচে যাচ্ছে, ফলে আমি গান-বাজনায় আবার মন দিতে পারছি।”
কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা অভিষেক পাল। বাড়ি শিলিগুড়ি। “লকডাউন শুরুর আগে ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে যাব, কিন্তু যাতায়াতে ইনফেকশনের চান্স থাকে। বাড়িতে মা-বাবা আছেন। তাই আর রিস্ক নিলাম না। বাড়ি থেকে কাজ করার প্রথমে যে উত্তেজনা ছিল সেটা এখন আর নেই। বরং অফিসে একটা কাজ করতে যে সময় লাগত, বাড়িতে তার থেকে অনেক বেশি লাগছে। কাজের পরিবেশটা খুব ম্যাটার করে।” যদি ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলতে থাকে? “আমি SHAREit অ্যাপের কনটেন্ট অডিট ডিপার্টমেন্টের টিম লিড। বাড়ি থেকে ভিডিও কলে 15 জনের টিম ম্যানেজ করা আর সামনে বসে ম্যানেজ করা এক নয়। তাই সমস্যা হবে।”
লকডাউনের আগেই কলকাতা চলে এসেছিলেন গুরগাঁওয়ের Cision-এ কর্মরত শুভাশিষ মিত্র। তাঁর ওয়ার্ক ফ্রম হোমের অভিজ্ঞতা আবার অন্যরকম। “মিটিং না থাকলে সাড়ে আট ঘণ্টার শিফ্ট আমাদের ছ’ঘণ্টায়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অফিসে দুটো মনিটরে কাজ করতাম, সেখানে বাড়িতে ল্যাপটপের একটা স্ক্রিন। একটু সমস্যা হয়। আমরা ইউ কে-র ক্লায়েন্টদের রোজকার মিডিয়া মনিটরিং করি। ফলে আমার রাত জেগে অফিস। একা থাকলে সেটা কোনও প্রবলেমই নয়, কিন্তু এখন বাড়ির সকলের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে বটে।” ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলতে থাকলে? “খুবই কঠিন ব্যাপার হবে। সারাদিন বাড়িতে থেকে আমার মনোযোগ দিতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। সিনেমা-সিরিজ দেখা বা বই পড়াও কমে গেছে।”
কিন্তু বাড়ি থেকে কাজের নিয়ম চললে বেশ খুশিই হবেন স্নেহা সামন্ত। Zee5-এর কন্টেন্ট ডেভেলপার স্নেহার মতে, “আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির। বাড়ি থেকে যদি সব কাজ করাই যায়, তাহলে বাইরে বেরনোর কী প্রয়োজন সেটাই বুঝি না। আমি তো দিব্যি সকালে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে, বিকেলের মধ্যে শেষ করে, বাকি সময়টা বাড়ির লোকজনের জন্য রাখছি। কিন্তু হ্যাঁ, আমার মতো শিফ্টের সুবিধে সকলের নিশ্চয়ই নেই।”
তবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু রাখার ফলে সেটা যদি কোম্পানির টাকা বাঁচায় আর কর্মী ছাঁটাই না হয়, তাহলে এঁরা সকলেই সেটাই চান। কারও বাবা কয়েক মাসের মধ্যেই অবসর নেবেন, কারও বাবার ব্যবসা। ফলে নিজেদের জন্য তো বটেই, বাড়ির জন্যও চাকরি দরকার সকলেরই। আরও একটা কথা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করছেন: বাড়ি থেকে কাজে অন্তত চাকরি আছে, মাসের শেষে স্যালারি মিলছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির মহা দুর্বিপাকের মধ্যে আপাতত অভিযোগ না করে এতেই সকলে মোটের উপর খুশি।
'দঙ্গল'-এর মত হিট ছবির পর পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির 'ছিঁছোড়ে' দ্বিতীয় পরিচালনা। কেমন হল সিনেমা?
তুরস্কের প্রাচীন সৌধ আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে পরিণত করার ডিক্রি পাস করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট।
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অকপট মতামত জানাচ্ছে আজকের নারী। সেই মতামতে রয়েছে রামধনুর রঙের মতোই অপার বৈচিত্র।
সরকারের কথায় অনেকেই ভরসা পেয়ে ভেবেছিলেন না খেয়ে মরতে হবে না। তবে সরকার আদৌ কথা রাখছে কি?
শপিং মলে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা কতটা সম্ভব?
এই ‘জাতীয়তাবাদ’-এর সংজ্ঞা নিজেদের মতো করে তৈরি করে নেওয়া নেহাতই একনায়কতন্ত্রের লক্ষণ।