×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • আশ্বাস মিলছে, মিলছে না রেশন

    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার | 22-05-2020

    নিজস্ব ছবি

    প্রায় দু’মাস অতিক্রান্ত। লকডাউন চলছে একটানা। এখনই অবস্থা বদলের কোনও আশা নেই। অনেকেই কাজ খুইয়েছেন এই লকডাউনে, অনেকের বেতন আটকে গেছে। ফলে পেটে টানও পড়ছে। এই দুর্দিনে রাজ্যে কেউ অভুক্ত থাকবে না, আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। লকডাউন শুরুর পর থেকে ছয় মাস অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর অবধি সকল রাজ্যবাসীকে, তাদের রেশন কার্ড থাকুক বা না থাকুক, বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং রেশন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

     

    মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সকলে আশ্বস্ত হলেও রেশন আদৌ মিলছে কি? পেশায় ভিডিও এডিটর শ্যামেশ্বর জানা (নাম পরিবর্তিত)- এর পরিবারে সদস্য সংখ্যা এগারো। উপার্জন করেন তিন জন, শ্যামেশ্বর জানা এবং তাঁর দুই দাদা। প্রত্যেকেই একই পেশায় যুক্ত। লকডাউনের ফলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ থাকায় বড় দুই দাদার আপাতত আয় নেই। শ্যামেশ্বরের চাকরিতে স্যালারি কাট হয়েছে, ফলে এগারো জনের পরিবারে সকলের মুখে ভাত তুলতে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁর।

     

    গত বছর ডিজিটাল রেশন কার্ডের ফর্ম জমা করেন তাঁরা। নতুন কার্ড এসেছে মাত্র দু’জনের। কিন্তু দু’টো কার্ডের রেশনে বেশিদিন তো চলতে পারে না। ফলে শ্যামেশ্বর রেশন দোকানের দ্বারস্থ হন, নতুন কার্ড বা কুপনের আশায়। সেখানে নাম লেখানো হয়, বলা হয় ফোন করা হবে, সেই ফোন আসেনি। লাভ না হওয়ায় কিছুদিন পর তিনি দেখা করেন স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে, সেখানে বলা হয় পোস্ট অফিসে লিস্ট টাঙানো হয়েছে। পোস্ট অফিস গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এলাকাভিত্তিক ফোন নম্বরের একটা লিস্ট দেওয়া আছে। ফোন করলেও একই উত্তর, কুপন এলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কাউন্সিলরের কাছে পুনরায় নথিপত্র জমা করেও লাভ হয়নি।

     

    এরপর একেবারেই নিরুপায় হয়ে 18ই মে তিনি বিডিও অফিস যান। গিয়ে দেখেন বিশাল লাইন, শারীরিক দূরত্ববিধির নামগন্ধ নেই। প্রায় সকলেরই একই সমস্যা। অফিসের গেট বন্ধ, একজন বাইরে মাইকে ঘোষণা করছেন, একজন রয়েছেন কথা বলার জন্য আর আছে পুলিশ। যিনি সকলের সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি নতুন কার্ড আসেনি শুনে বলেন, ‘পরে 4 নম্বর ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিয়ে দেবেন।’ এই ‘পরে’টা কবে আসবে? ‘লকডাউনের পর।’ এরপরই স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে, ‘লকডাউনে তাহলে কিছু পাব না রেশন দোকান থেকে?’ সাফ জবাব, ‘রেশন দোকান কিছু দেবে না। অর্ডার এসেছে কাউন্সিলরের কাছে, ওখানে বুধ - বৃহস্পতিবার নাগাদ যাবেন। ফর্ম পেয়ে যাবেন।’ টিভির পর্দায় বলে দিলেও রেশন দোকান মাল দিতে পারবে না, কারণ এখনও অর্ডার আসেনি তাদের কাছে। প্রশ্ন করলে উত্তর আসে, ‘আপনি অযথা কিন্তু কথা বাড়াবেন না। টিভির পর্দায় ঠান্ডা ঘরে বসে অনেক কিছু বলা যায়।’ রেশন গ্রাহককে অফিসারের পাল্টা প্রশ্ন, ‘আপনি অফিসার, আপনার টেবিলে যতক্ষণ না অর্ডার আসছে, ততক্ষণ আপনি কিছু করতে পারবেন? পারবেন না।’ ঘটনা রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার 34 নং ওয়ার্ডের।

     

    সেখানেই অন্যদিকে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘যাঁরা নতুন কার্ড সংগ্রহ করবেন, তাঁরা নতুন কার্ড পেয়ে ডিলারের কাছে এন্ট্রি করাবেন। এন্ট্রি করার এক মাস পর আপনারা মাল পাবেন।’ তাহলে এই এক মাস তারা কী খাবে? সরকার যে বলেছে সকলেই রেশন পাবে, খাবার পাবে, তাহলে সেই প্রতিশ্রুতির কী হল?

     

    এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। সরকারের কথায় ভরসা পেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন না খেয়ে মরতে হবে না। কিন্তু আদৌ কি সেই কথা রাখতে পারছে রাজ্য সরকার? কী দিয়ে পেট ভরাবে এই পরিবারগুলো? 4 নম্বর ফর্ম ভরে আপাতত এইসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন শ্যামেশ্বর জানার মত আরও অনেকে।

     


    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার - এর অন্যান্য লেখা


    NCB-এর সমন পাঠানোর তালিকায় প্রথম পাঁচ-ছয়জনের মধ্যে কোনও অভিনেতা নেই!

    অনেকের কাছেই সোশাল মিডিয়া বেদ বাইবেল কোরানের তুল্য

    এঁদের জীবনেও যদি একজন অ্যালবাস ডাম্বেলডোর বা একজন হ্যারি পটার বা একজন হ্যাগ্রিড থাকত!

    শপিং মলে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা কতটা সম্ভব?

    বিজেপি সরকার প্রথম থেকেই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করতে উদ্যত। সেখানে জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম রাজ্য

    সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলেই লাল দাগ পড়বে পরীক্ষার রেজাল্টে! এই ডিরেক্ট কানেকশনটা কীরকম?

    আশ্বাস মিলছে, মিলছে না রেশন-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested