সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
যেখানে সবচেয়ে উচ্চগ্রামে, সমস্ত লজ্জা-কুণ্ঠা-সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে, নিজের সবচেয়ে ঝলমলে বর্ণময় চেহারাটা দেখানোর কথা, সেখান থেকে রঙ কেন উধাও হয়ে গেল হঠাৎ?
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশাল মিডিয়ায় নতুন ট্রেন্ড। মহিলারা একাধারে নিজেদের সাদা কালো ছবি আপলোড করছেন। ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ, challenge accepted এবং women supporting women। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার ছেয়ে গেছে এই হ্যাশট্যাগে।
চ্যালেঞ্জটা কেন? এক 27 বছরের তুর্কি মহিলা খুন হন তাঁর প্রেমিকের হাতে। এই ঘটনার প্রতিবাদেই সেই দেশে শুরু করা হয় এমন ট্রেন্ড, যেখানে মহিলারা নিজেদের সাদা কালো ছবি পোস্ট করতে থাকেন নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগ দিয়ে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিকল্প তত্ত্বটি হল আমেরিকান মহিলা রাজনীতিক আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ যখন জানান যে, তাঁকে কংগ্রেসের (অর্থাৎ সে দেশের সংসদের) মধ্যেই ‘সেক্সিস্ট’ মন্তব্যের শিকার হতে হয়, তার জের টেনে প্রতিবাদ থেকেই এর সূত্রপাত। শুরু যেখান থেকেই হোক না কেন, সুনামির মতো সোশাল মিডিয়া প্লাবিত এই ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ ট্রেন্ডে। সাদা কালো– অর্থাৎ কোনও বাহুল্য নেই, সজ্জা নেই, বর্ণময় হওয়ার দায় নেই। সাদা কালো মানে সারাৎসার, ইংরেজিতে essence of the entity, তাই বোধহয় আজকের নারীর মনে ধরেছে সাদা-কালোয় এই প্রতিবাদী উচ্চারণ।
এর আগেও আমরা সোশাল মিডিয়ায় এমন প্রতিবাদ দেখেছি, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ, মি টু এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার। কিন্তু এমন প্রতিবাদে আদৌ কি কোনও লাভ হবে? সাংবাদিক মৌপিয়া নন্দীর কথায়, ‘সোশাল মিডিয়ার ব্যাপ্তি বিশাল। ফলে সেখানে যে কোনও ইস্যু ছড়িয়ে পড়লে তার একটা জোরালো প্রভাব পড়ে, সেই ব্যাপারে আমি আশাবাদী। একইসঙ্গে এটাও আমার আশঙ্কা যেন এটা কেবল একটা হুজুগ হয়ে না থেকে যায়। সোশাল মিডিয়ায় একটা হ্যাশট্যাগ দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না, নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে সেটাকে প্র্যাক্টিস করাটা খুব দরকার।‘ অশোকা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ারসের ডিন, দেবশ্রুতি রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘এই ট্রেন্ডে মূল ঘটনার কোনও সুরাহা হবে কিনা জিজ্ঞাসা করলে, সাদা কালোয় বলব যে না, হবে না। কিন্তু এরকম ট্রেন্ডের কিছু স্তর আছে। যার প্রাথমিক স্তর হল, সচেতনতা। যদি এক লক্ষ মহিলার মধ্যে এক শতাংশও জানতে চান যে, এমন সাদা কালো ছবি আমি কেন পোস্ট করব, সেটা যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে, তা নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' জগদীশচন্দ্র বোস ন্যাশনাল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ-এর ডিরেক্টর বিজ্ঞানী মৈত্রী ভট্টাচার্য্যও বলছেন, ‘মানুষদের মধ্যে, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য এমন মুভমেন্ট প্রয়োজনীয়।'
সচেতনতা তৈরি হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায়, কারণ অনেকেই সাদা কালো ছবি পোস্ট করে তার সঙ্গে একটা বড় ক্যাপশনও লিখছে। ফলে কেউ যদি মূল ঘটনা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নাও থাকে, সেও জেনে যাচ্ছে আসল ঘটনা। এক্ষেত্রে অবশ্যই বড় ভূমিকা রয়েছে দেশ বিদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রীদের। হলিউডের জেনিফার অ্যানিস্টনই হোন বা বলি তারকা অনুষ্কা শর্মা-সোনম কাপুর, সকলের ক্যাপশনই নজর কাড়ছে সাধারণ মানুষের। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ women supporting women। বাংলায় একটা চলতি কথা আছে, ‘মেয়েরাই মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু’। এমন কথা কে তৈরি করেছিল জানা নেই, তবে এমনটা কি সত্যিই ঘটে? কী মনে করেন মৌপিয়া? ‘পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক একমাত্র পুরুষরাই নয়, মহিলাদের একটা বড় অংশ নিজেদের অজান্তেই এই সিস্টেমের অঙ্গ হয়ে ওঠে। একজন মহিলাই তার ছেলের জন্য ‘ফর্সা’ বউ চায়। অন্যদিকে একজন মহিলাই আর এক মহিলার মানসিক বা শারীরিক অবস্থা অনেক ভাল বোঝেন, এবং সেটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে তারা সাহায্যও করেন। অর্থাৎ দু’রকম ঘটনাই সম্ভব।‘ একই সুর মৈত্রীর কথাতেও, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার কর্মক্ষেত্রে আসা মেয়েদের খুব ভাল করে, বেশি যত্ন নিয়ে গ্রুম করে উপযুক্ত করে তোলার। কিন্তু এমন কথা সত্যিই বলা যায় না যে, সকল মহিলারা বাকি মহিলাদের সাহায্য করেন। আমাদের সিনিয়র মহিলা কর্মীদেরই দেখেছি, কোনও ফাঁকা পোস্ট থাকলে সেখানে অন্য মহিলাকে চাকরি দিতে দ্বিধা বোধ করতেন। মেয়ে হলে সময় দিতে পারবে না বা তারা বেশি কঠিন কাজ পারবে না, এই ছিল তাদের যুক্তি।‘ তবে এই চলিত কথা একেবারেই মানতে নারাজ দেবশ্রুতি। তাঁর মতে, ‘এটা একটা টিপিকাল পেট্রিয়ার্কাল প্রোপাগান্ডা যে, মহিলারা মহিলাদের সাপোর্ট করে না। আমি আমার কাজের ক্ষেত্রের উদাহরণই দিতে পারি। এখানে আমাকে বাকি মহিলারা যেভাবে সাপোর্ট করেছেন, বা আমি তাদের যেভাবে একে অপরকে সাহায্য করতে শিখিয়েছি বা করেছি, সেটা কখনওই ওই বক্তব্যকে সমর্থন করবে না।'
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অকপট মতামত জানাচ্ছে আজকের নারী। সেই মতামতে রয়েছে রামধনুর রঙের মতোই অপার বৈচিত্র। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় এখানে এবং সোশাল মিডিয়ায় আজকের নারী দ্বিধাহীন। সাদা কালোয় অনতিক্রম্য রকমের স্পষ্ট।
'টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং'। কারা এই গ্যাং-এর সদস্য? কোথা থেকে তাদের উৎপত্তি? জবাব মিলল?
শপিং মলে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা কতটা সম্ভব?
ক্যারাটের মাধ্যমে নারীসুরক্ষার বার্তা কলকাতার
নিজের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য নিন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের।
১৯৮৬ সালে গিরিডিতে দেশের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসেন কলকাতায়। এরপরেই অটোর মাথায় বাগান বানানোর সিদ্ধান্ত।
পরিবেশ দূষণ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদির ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ এখন জলভাত। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর উপায় কী?