9 নভেম্বর, 2019, ভারতে অযোধ্যার দীর্ঘ বিতর্কিত জমিতে শীর্ষ আদালত অবশেষে রাম মন্দির গড়ার নির্দেশ দিল। ইচ্ছাপূরণ হল শাসকদলের। হিন্দুদের ধর্মস্থান হিসেবে গড়ে ওঠার স্বীকৃতি পেল সেই জমি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার দলের একটি লক্ষ্য পূরণ হল। অন্যদিকে গত শুক্রবার, 10 জুলাই, 2020, তুরস্কের প্রাচীন সৌধ আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে পরিণত করার ডিক্রি পাস করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইপ এর্দোয়ান। এরপরই দেশের শীর্ষ আদালত প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিল। পূরণ হল দেশের রক্ষণশীল ইসলামিক শাসকদলের একটি লক্ষ্য। দু’টো দেশই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘গণতান্ত্রিক’, তবে সেটা বুঝি কেবল খাতায় কলমে।
ভারতের এক বহু পুরনো সমস্যা, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বিতর্কিত জমি। ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে অযোধ্যার 2.77 একর জমিতে তৈরি হয় বাবরি মসজিদ। আবার হিন্দু মতে, ভগবান রামচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন অযোধ্যায়। কিছু হিন্দু দাবি করেন, এই বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছে সেই রাম জন্মভূমিতেই। আর সেই স্থানকে পুনরুদ্ধার করে রামচন্দ্রকে তাঁর যোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দিতে এবং হিন্দু ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, যাদের রাজনৈতিক কণ্ঠ হয় ভারতীয় জনতা পার্টি। এরপর 1992-এর 6 ডিসেম্বরের কীর্তির কথাও সকলের জানা। একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্মী আছড়ে পড়ে মসজিদের উপর, মসজিদ ধ্বংস হয়, ফলস্বরূপ দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বহু মানুষের মৃত্যু।
1950 সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে গোপাল সিং বিশারদ, বিতর্কিত জমির স্বত্বের দাবিতে মামলা করেন। এরপর একই মামলা করেন অযোধ্যার পরমহংস দাস, যদিও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। 1959-এ হিন্দু গোষ্ঠী নির্মোহী আখড়া তৃতীয় মামলা করেন। দাবি একই, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি তুলে দেওয়া হোক হিন্দুদের হাতে। চতুর্থ মামলা করা হয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তরফে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট 2002-এ এসে এই কেসের শুনানি শুরু করে এবং তা চলে 2010 অবধি। 2010-এর 30 সেপ্টেম্বর কোর্ট নির্দেশ দেয় জমিটিকে তিনভাগে ভাগ করতে। একভাগ পাবে রামলালা, একভাগ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং শেষভাগ পাবে নির্মোহী আখড়া।
তবে এখানেই সমস্যা মেটেনি। দেশের বর্তমান শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম অ্যাজেন্ডাই ছিল অযোধ্যার বিতর্কিত জমি হিন্দুদের দখলে এনে রামমন্দির স্থাপন করা এবং ধীরে ধীরে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে তৈরির পথে এগিয়ে যাওয়া। প্রথমটা তো করেই ফেলা হয়েছে, বাকিটাও হয়ে চলেছে। এই উদ্দেশ্য তাদের সাধন হল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর। নিজেদের অ্যাজেন্ডা সফল করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তাই তাই করেছে শাসকদল। পরোয়া করেনি কারও, কোনও কিছুরই।
অন্যদিকে আয়া সোফিয়া। 1500 বছর আগে রোমান সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান একটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ গড়ে তোলেন ইস্তানবুলে। এরপর 1453 সালে অটোমান তুর্কিদের আক্রমণে তা বদলে যায় মসজিদে। পরবর্তীকালে ধর্মনিরপেক্ষ শাসক মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের আমলে এই আয়া সোফিয়াকে ধর্মস্থান থেকে বদলে সংগ্রহশালা বা সৌধ হিসেবে তৈরি করা হয়। এটি আসে UNESCO-এর আওতায়। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। বাইজান্টাইন এবং অটোমান সভ্যতার শিল্প-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর এই মিউজিয়াম বহুবছর ধরে অজস্র পর্যটককে আকর্ষণ করে এসেছে। কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, ক্যাথলিক এবং তুর্কি শিল্পের অদ্ভুত মিশেল মন কেড়েছে বহু মানুষের।
গত কয়েকদিন ধরে এই আয়া সোফিয়া আবার শিরোনামে। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইপ এর্দোয়ানের প্রচেষ্টায় পুনরায় আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হল। গোটা বিশ্বে তুমুল সমালোচনা। রেজেপ তাইপ এর্দোয়ানকে সকলেই গোঁড়া ইসলামপন্থী শাসক বলেই চেনে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথায় তিনি তাঁর মনের এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যে আয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হোক। অবশেষে কোর্টের রায়ে তাঁর পক্ষেই গেছে এবং তিনি সফল হয়েছেন। গ্রীস, আমেরিকা বা রাশিয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন এর্দোয়ান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মামলায় কোর্ট আয়া সোফিয়ার মিউজিয়াম হিসেবে অস্তিত্বই নাকচ করে দেয়। তাদের কথায় মসজিদ ছাড়া আয়া সোফিয়ার অন্য কোনও আইনি পরিচয় নেই। ধর্মীয় অনুদান হস্তান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ, একটি UNESCO স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এভাবে হঠাৎ বেআইনি হয়ে গেল।
তবে মনে রাখতে হবে, খাতায় কলমে আমাদের দেশ এবং তুরস্ক উভয়েই ধর্মনিরপেক্ষ। অথচ দুই দেশের প্রধানই দু’টি বিশেষ ধর্মের ধ্বজাধারী। তুরস্কের আদালতের কথায় ধর্মীয় অনুদান হস্তান্তরযোগ্য নয়, তাহলে বিগত 86 বছর ধরে একটা স্থান মিউজিয়াম হয়ে রইল কীভাবে? অনুমতি তো আদালতই দিয়েছিল নিশ্চয়। তাহলে কি এখন দেশের আইন-আদালত-বিচারব্যবস্থার উর্ধ্বে উঠল ধর্ম-মানুষের অন্ধবিশ্বাস?
আদালত সরকার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা নয়, সরকারের উপরে আদালত-বিচারব্যবস্থা। তবে উভয় ক্ষেত্রেই শাসকদলের সুরেই সুর মিলিয়েছে আদালত। তাহলে দেশে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বা কোনও ধর্মীয় রঙে তাকে রাঙিয়ে তোলার জন্য বা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ভোটে জেতাই যথেষ্ট। বাকিটা পয়সা এবং ক্ষমতার খেলা। যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। ক্ষমতা থাকলে সব হয়। দেশের নাম, ধর্মের নাম, মানুষের নাম হয়তো ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু শাসকের আসনে বসলে রূপ সকলেরই এক।
পড়ন্ত বেলায় ইতিউতি চাউনি। যদি কেউ ভুল করেও ডাবের জলের খোঁজে আসেন।
তুরস্কের প্রাচীন সৌধ আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে পরিণত করার ডিক্রি পাস করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট।
বিজেপি সরকার প্রথম থেকেই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করতে উদ্যত। সেখানে জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম রাজ্য
এক সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের মতে, এই অ্যাপ ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
পরিবেশ দূষণ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদির ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ এখন জলভাত। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর উপায় কী?
সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, তবে দূর থেকে।