×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হাতে না মেরে, ভাতে মারার উদ্যোগ

    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার | 01-07-2020

    সরকারের কোপে সংবাদ সংস্থা পিটিআই

     

     

    সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর উপর শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করল সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রসার ভারতীর অভিযোগ, পিটিআই জাতীয় স্বার্থবিরোধী খবর করেছে। কী সেই খবর? বর্তমান পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লিতে চিনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার নিয়ে সেটি প্রচার করে পিটিআই। এতেই নাকি আহত হয়েছে জাতীয় স্বার্থ। ফলে পিটিআই আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রসার ভারতী নিয়ন্ত্রিত সরকারি সংবাদমাধ্যম দূরদর্শন এবং আকাশবাণী পিটিআই-কে পরিত্যাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সংস্থাটির যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতি হবে।

     

    প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (PTI), ভারতের প্রধান নিউজ এজেন্সি, যারা কেবল তাদের পেশাদারিত্বের জোরে আজ নিজেদের পোক্ত স্থান তৈরি করেছে। স্বাধীন ভারত এবং পিটিআই একইসঙ্গে পথচলা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন পর্ষদে রীতি অনুসারে থাকেন দেশের প্রথম সারির স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কর্ণধাররা। পিটিআই সর্বদা তাদের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। এই সংস্থার উপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সংবাদপত্র এবং অনেক ছোট ও মাঝারি মিডিয়া হাউস বিশেষভাবে নির্ভরশীল। অনেকেই দেশের বা পৃথিবীর সর্বত্র নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাতে বা রাখতে পারেন না, তাদের খবর সরবরাহ করে পিটিআই।

     

    অন্য দিকে, প্রসার ভারতী নামে স্বতন্ত্র হলেও, আদতে এটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সংস্থা 1997 সালে সংসদে আইন প্রণয়ণ করে তৈরি হয়। বিধি মতে এদের পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার হওয়ার কথা। লক্ষণীয়, কথাটি হল পাবলিক সার্ভিস বা জনগণের স্বার্থ, গভর্নমেন্ট সার্ভিস বা সরকারের স্বার্থ নয়। প্রসার ভারতী হল অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনের তত্ত্ববধায়ক সংস্থা।

     

     

    এই প্রসার ভারতী-ই PTI-কে চিঠি পাঠায় প্রসার ভারতী নিউজ সার্ভিস (PBNS) –এর মাধ্যমে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই PBNS-এর নাম এর আগে কখনও শোনা যায়নি। চিঠিতে অভিযোগ স্পষ্ট, পিটিআই জাতীয় স্বার্থ’-এর পক্ষে ক্ষতিকর। তাদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী খবর একেবারই অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু এই জাতীয় স্বার্থঠিক কী? আর প্লাস চ্যানেলের ইনপুট এডিটর, প্রবীণ সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কথায়, "আগে আমরা জানতাম যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র বজায় থাকে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এখন যেটা দেখা যাচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই গণতন্ত্রকে পঙ্গু করা হচ্ছে আইনি পথ ধরেই। এটা আইনের একটা অপপ্রয়োগ। যে সরকার যখন এটা প্রয়োগ করছে, তখন তারা নিজেদের সুবিধা মতো বিশেষ মন্ত্রী-নেতার বিরুদ্ধে কথা বলাকেই দেখাচ্ছে সমগ্র দেশবাসীর বিরুদ্ধে, ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। আইনের ভারতীয়ত্ব বা জাতীয়বাদের যে বড় ক্যানভাস, সেটাকে কোনও একজন নেতা বা মন্ত্রী বা সরকারের সঙ্গে সমার্থক করে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ, সরকারকে প্রশ্ন করা মানে, ওই নির্দিষ্ট আইনগুলি ভাঙা বা তার বিরোধিতা করা।' অতএব, এই জাতীয়তাবাদ’-এর সংজ্ঞা নিজেদের মতো করে তৈরি করে নেওয়া নেহাতই একনায়কতন্ত্রের লক্ষণ।

     

    PBNS থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের পিটিআই-এর সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করে দেবে। অর্থাৎ, আর্থিক দিক থেকে পিটিআইকে চাপে ফেলার চেষ্টা। হাতে না মেরে, ভাতে মারার ব্যবস্থা। গত কয়েক বছর ধরেই পিটিআই-এর বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদে নিজেদের পছন্দের মানুষ বসিয়ে এটিকে নিজেদের কব্জায় আনতে চাইছিল সরকার। কিন্তু পিটিআই বোর্ড সেই চেষ্টায় জল ঢেলে এসেছে এতদিন। এখন পিটিআই-এর বিরুদ্ধে এই চিঠি সেই পুরনো চেষ্টারই ফল ধরা যেতে পারে। চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের সুযোগে চিনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকারটি উপলক্ষ্য মাত্র। ভারতীয় প্রেস ক্লাব সহ বিভিন্ন সংস্থা অবশ্য পিটিআই বোর্ডকে সত্ত্বর এই অবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে এবং পিটিআই-এর চরিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে।

     

    কিন্তু চিনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার নেওয়া কি সত্যিই সাংবাদিকতার দিক থেকে ভুল? আউটলুক পত্রিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডিটর, প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা বলছেন, "দুটো দেশের মধ্যে একটা সমস্যা চলছে। সেক্ষেত্রে অপর দেশের কী বক্তব্য, তাদের কী দৃষ্টিভঙ্গি, সেটা জানা একজন সাংবাদিকের স্বাভাবিক কর্তব্য। সাংবাদিকদের এটাই শেখানো হয় যে, দুপক্ষের বক্তব্য শুনে নিরপেক্ষ খবর করা উচিত। অপর পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলেই সেটা দেশবিরোধী কাজ হতে পারে না। এটা পিটিআই-এর মাধ্যমে বাকি সংবাদমাধ্যম গুলোকেও বোঝানোর চেষ্টা, যে চিনের বক্তব্য যেন কেউ তাদের প্রতিবেদনে না দেখায়। কিন্তু গণতন্ত্রে তো বহু মত থাকতেই পারে, তার মানেই কেউ দেশদ্রোহী হয়ে যায় না।'

     

    "ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স তালিকায় তাদের স্ক্যানারে থাকা 180 টি দেশের মধ্যে ভারত 142 নম্বরে। আমাদের থেকে ভাল জায়গায় আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা। এটাই ভারতে সংবাদমাধ্যমের অবস্থা কীরকম বলে দেয়, যেখানে আমরা "গণতন্ত্র'-এর বড়াই করি। অন্যদিকে সাংবাদিকদের উপর যে পরিমাণ আক্রমণ নেমে এসেছে, বিভিন্ন সময়ে যেভাবে সাংবাদিকদের খুন করা হয়েছে, বিগত চার-পাঁচ বছরে ভারতে সেই সংখ্যাটাও বেশ অনেকটা। তবে শুধু কেন্দ্রে না, রাজ্যেও চিত্রটা একই প্রায়। গোটা ব্যাপারটা নিয়েই চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।' বলছেন সিএনএন নিউজ 18-এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর, সাংবাদিক সৌগত মুখোপাধ্যায়।

     

    প্রণয় শর্মার মতে সংবাদ মাধ্যমের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা এই প্রথম নয়, "বিভিন্ন রাজ্যে আজ যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই ধরনের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কোনও ধরনের বিতর্ক হলেই সেটাকে কীভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে বন্ধ করা যায় সেই চেষ্টা চলে। এককথায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা করা যাবে না।'

     

    একই মত বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যেরও, "এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে গোটা দেশে শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়, সাংবাদিকদেরও স্বাধীনতা বা কাজ করার পরিবেশ যেভাবে সংকুচিত হয়েছে তা খুবই আশঙ্কাজনক। ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের কাজ করার স্বাধীনতা খর্ব করার এই চেষ্টা এখন বড় আকার নিয়েছে।'

     


    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার - এর অন্যান্য লেখা


    ক্যারাটের মাধ্যমে নারীসুরক্ষার বার্তা কলকাতার

    অনেকের কাছেই সোশাল মিডিয়া বেদ বাইবেল কোরানের তুল্য

    'দঙ্গল'-এর মত হিট ছবির পর পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির 'ছিঁছোড়ে' দ্বিতীয় পরিচালনা। কেমন হল সিনেমা?

    বাড়ি থেকে কাজে অন্তত চাকরি আছে, মাসের শেষে স্যালারি মিলছে। আপাতত অভিযোগ না করে এতেই সকলে খুশি।

    এই মানুষগুলোর খাদ্যের ব্যবস্থাও কিন্তু রাষ্ট্রকেই করতে হবে

    সবকিছুর মাঝে লাভ হয় বিল্লুর। দোকানে হুড়মুড়িয়ে বিক্রি শুরু হয় তার।

    হাতে না মেরে, ভাতে মারার উদ্যোগ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested