×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • প্রকৃতি নয়, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের নেপথ্যে মানুষই

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 15-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    2020 নাকি সর্বনাশের বছর! সত্যিই যেন তাই, সব দিকে থেকেই খারাপ খবর বয়ে আনছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্য, ক্যালিফোর্নিয়া রীতিমত জ্বলছে। পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর জমি। বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে দাবানলের এ হেন রূপ যেন ভয় এবং ক্ষতির কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিচ্ছে। কার দায়, কাদের ভূমিকা রয়েছে এই ভয়ঙ্কর দাবানলের নেপথ্যে? উত্তর, মানুষের। সে তার নিজের ক্ষতি নিজেই করে চলছে।

     

    2020-এর শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি অবধি বারবার দাবানলের কোপে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় 33 লক্ষ একর জমি (11 সেপ্টেম্বর অবধি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী), যা ক্যালিফোর্নিয়ার 3 শতাংশ, তা পুড়ে গিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটে যাওয়া 20টি ভয়ঙ্কর দাবানলগুলোর মধ্যে 6টি এই বছরেই ঘটেছে। উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে এর প্রকোপ। সিয়েরা ন্যাশনাল ফরেস্ট বর্তমানে জ্বলছে, যার ছবি ধরা পড়েছে নাসার কৃত্রিম উপগ্রহেও। ধূসর ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল অঞ্চল। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী 1970 থেকে 2020 এর মধ্যে এই দাবানলের ভয়ঙ্কর রূপ এবং তার বিস্তৃতি বেড়েছে প্রায় 8 গুণ।

     

    কিন্তু কেন বাড়ছে দাবানল? ক্যালিফোর্নিয়া এমনিতেই শুষ্ক অঞ্চল এবং মাঝে মধ্যেই সেখানে দাবানল দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেখা যাচ্ছে, মানুষ ঘটিত জলবায়ু পরিবর্তন রয়েছে এর নেপথ্যে। কিন্তু মানুষ কীভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন করতে পারে? বহুমাত্রায় খনিজ তেল এবং জ্বালানি ব্যবহারের ফলে তার থেকে নির্গত ধোঁয়া, ঠান্ডা জায়গায় চাষাবাদের জন্য বানানো গ্রিন হাউজ, এবং ফ্রিজ বা অন্যান্য নিত্য ব্যবহৃত জিনিস থেকে নির্গত হওয়া গ্রিন হাউজ গ্যাসের কারণে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে, তার ফলে তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দেখা যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় 2.5 ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। চারপাশ থেকে আর্দ্রতা হারাচ্ছে ক্রমশ। এর ফলে মাটি এবং বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প শুকিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে আরও, যা দাবানলকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করছে। জলবায়ুতে পরিবর্তন আসায় তাপপ্রবাহ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, যা মাটি এবং উদ্ভিদ থেকে আর্দ্রতা শুকিয়ে যেতে সাহায্য করছে। এছাড়াও খরা বা গুবরে পোকার সংক্রমণ দাবানলকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে। কারণ শুকনো আবহাওয়ার ফলে গাছপালায় দ্রুত আগুন ধরছে এবং তা ছড়িয়ে যাচ্ছে।


    ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু এমনিই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ধরনের, অর্থাৎ, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, এবং শীতকালে বৃষ্টি। এছাড়াও আগে গ্রীষ্মের শুরুতে জমে থাকা বরফ গলত, যা এখন বসন্তের শুরুতেই গলে যায়। ফলে গ্রীষ্মকালের সময়কাল বাড়ছে। এই বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং শুষ্কতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাবানল, যা বর্ষা না নামা অবধি কমবে না। একই সঙ্গে, ভেপর প্রেশার ডেফিসিট (VPD) প্রায় 10 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র কয়েক বছরে, যা 2060 সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে। (এই VPD দিয়ে ভূপৃষ্ঠের শুষ্কতা মাপা হয়।)

     

    কলকাতার টি.কে জৈন কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা ঋত্বিকা দত্ত এই দাবানলের সম্পর্কে জানান, ‘তাপমাত্রা সমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে আর্দ্রতা। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক থেকে শুষ্কতর হয়ে যাচ্ছে, এবং সহজেই গাছে আগুন ধরছে। তাছাড়াও শীত দেরি করে আসছে এবং বরফ তাড়াতাড়ি গলে যাচ্ছে। ফলে এই শুকনো মরশুমের সময় বেড়েই চলেছে যা বারবার দাবানল হতে এবং তাকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে। যতক্ষণ না মানুষ সতর্ক হচ্ছে, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন পরিমাণ কমছে, ততদিন এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া মুশকিল। শুধু তাইই নয় এই ঘটনা আরও বাড়বে সময়ের সঙ্গে।' একই কথা বললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের এক রিসার্চ স্কলার পল্লবী হালদার। তিনি জানান, ‘একেই ক্যালিফোর্নিয়ায় ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু, অর্থাৎ শুকনো গরমকাল, এবং শীতকালে বৃষ্টি বা বরফপাত হয়। এই গরমকালের তাপমাত্রা ও দৈর্ঘ্য ইদানিং বেড়েই চলেছে, যা এই অঞ্চলের জলবায়ুতে একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছে। ক্যালিফোর্নিয়া এমনিই শুষ্ক অঞ্চল, বিশ্ব উষ্ণায়ন তাকে আরও শুষ্ক করে তুলছে। ফলে দাবানলের ঘটনা বেড়েই চলছে যা সেখানকার মানুষের জীবন এবং দৈনন্দিন কাজে সমস্যা তৈরি করছে।'

     

    এই মহামারী আবহে দাবানলের এই ভয়ঙ্কর রূপ স্থানীয়দের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেককেই ইতিমধ্যে সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। বহু মানুষের সেই কালো ধোঁয়া এবং পোড়া গন্ধে শ্বাস কষ্টও শুরু হয়েছে। নিজেদেরই তৈরি করা সমস্যায় মানুষ এখন নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে, যার ফল ভয়ানক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় যে এর থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই। এরপরেও মানুষ আদৌ সচেতন হবে কিনা তা সময়ই বলবে।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    নিজেদেরই তৈরি করা সমস্যায় মানুষ এখন নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে

    ওমিক্রন ছড়াচ্ছে, সতর্কতা কই?

    কেন ওর বাবার মৃত্যুর পরও মিথ্যা খবর দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? কেন এতদিন দেরি করল ওরা বাবার শেষকৃত্য কর

    পেশা ছেড়ে নেশাকে বেছে নিয়েছিলেন পৌষমী।

    দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে সামিল নারীরা প্রাণদান করেছেন বয়স, সমাজ, সংসার সমস্ত বাধা উড়িয়ে দিয়ে।

    বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের খালবিলে থিকথিক করছে রাক্ষুসে সাকার মাছ

    প্রকৃতি নয়, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের নেপথ্যে মানুষই-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested