×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • করোনাকে বলি ধরো না

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 24-08-2020

    প্রতীকী ছবি।

    "আরে ও কার্তিক দা চললেন কোথায়?'
    "বাজারে যাই। ইলিশ উঠেছে অনেক।'
    "তা মাস্ক কই আপনার?'
    "মাস্ক আবার কে পরে? মাস্ক পরে লাভ হচ্ছে কিছু?'

    ঠিকই তো, ঠিকই তো। মাস্ক পরে কী আর এমন লাভ হচ্ছে! সংক্রমণ তো বাড়ছেই। কার্তিক দা তো ঠিকই বলেছেন, লোকে মাস্ক পরছে কানে, গলায়, থুতনিতে। আরে বাবা, পরছে তো! শরীরেরই কোনও না কোনও অংশেই আছে সে। কাজ হওয়ার হলে তাতেই হত। কিন্তু হচ্ছে না তো। আর এই করোনা কী রোগ, অ্যাঁ? সেদিন রাতে বৌদির সঙ্গে আলোচনায় বসে কার্তিক দা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, "দেখো, এসব মহামারী সব ভাঁওতা। লোককে বাড়ি আটকে রাখার ধান্দা।
     মাস্ক কোম্পানি আর ওষুধের দোকানগুলোর রমরমা বাড়ানোর জন্য। আরে বাবা মায়ের কাছে শোনোনি, মহামারী হলে গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত, কত লোক রাস্তায় পড়ে থাকত। এখন কি হচ্ছে এসব? তবে এটা মহামারী হল কী করে?' বৌদি যদিও বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে ইতালি, আমেরিকা-সহ খাস আমাদের দেশে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন করোনার জন্য, কিন্তু ওই "চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি', কার্তিক দা-ও তেমনই বৌদিকে "দুষ্ট বালিকে'(!?) বলে থামিয়ে দিয়েছে। 

    আরে বাবা মহামারী একটা গম্ভীর ব্যাপার সবাই বোঝে, নাকি? এসব হাসপাতালে চিকিৎসা হয় নাকি? এই নিয়ে কথা চলে একমাত্র পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে। আর রোগ হলে হবে এসব মাস্ক পরে শ্বাস কষ্ট বাড়িয়ে রোগ আটকানো যায় নাকি? সে দিন তো দোকানে এক প্রস্থ ঝামেলাই হয়ে গেল, কেন কার্তিক দা মাস্ক পরে আসেনি। এক "বাবু' দোকানিকে হুমকি দিল, "অ্যাই দেখুন ওকে মাস্ক ছাড়া দোকানে অ্যালাউ করলে আমরা কেউ কোনও জিনিস কিনব না।' আরে কিনবেন না তো কিনবেন না। আপনাদের অনলাইন দোকান আছে, আমাদের তো দোকান বলতে পাড়ার দোকান। আর আমাদের জিনিস দেবে না? কত বছর ধরে এই দোকানে বাকিতে খাবার খাই! বললেই হল জিনিস দেবেন না। সে কী তর্ক বাবা! অবশেষে কার্তিক দা হাত তুলে বুঝিয়ে দিল, "দেখুন আমরা গরিব মানুষ, ধুলোবালিতে মানুষ। রাস্তায় কাজ করে খাই, ঠাণ্ডা ঘরে তুলোয় মুড়ে বসে থাকি না। তাই আমরা করোনার যম, ও আমাদের নয়। আমাদের তো আর ননির শরীর নয় তাই ও আমাদের কিচ্ছুটি করতে পারবে না। ও সব বাবুদের রোগ, তাদের হয়। বুঝলেন? আপনাদের ওই করোনাকে আমি পকেটে নিয়ে ঘুরি। আমাদের ডাইরিয়া, জ্বর, সদ্দি হয় বড় জোর!' কার্তিক দার এমন কথা শুনে সেই বাবু আর দাঁড়াননি, পাইপাই করে দৌড়ে পালিয়েছিলেন। তাহলেই বুঝুন কেমন যুক্তি দিয়েছিল। করোনাকে নাকি পকেটে নিয়ে ঘোরে, ভাবা যায়!

    আজ কার্তিক দা ক্লাবে চলেছেন, যথারীতি সেই মাস্ক ছাড়া। আজ যে খুঁটি পুজো। মা আসছে। কার্তিক দা পাড়ার ক্লাবের হেড, সবাই খুব মানে টানে আর কী! কার্তিক দা এবার বলেছেন, "অ্যালুমিনিয়ামের মাস্কে' সাজবেন তাদের পাড়ার দেবী। কত্ত লোক হবে। বেশ নাম ডাক হবে। যদিও পাড়ায় শেষ এক সপ্তাহে আটটি করোনা রোগী ধরা পড়েছে, তাতে কী? কার্তিক দা হচ্ছে আমাদের স্বয়ং দুগ্গা মায়ের ছোট সন্তান, ওই বরপুত্তুর যাকে বলে, সে আছে যখন আর কী হবে। আর তাছাড়া তো করোনা বড়লোকদের হয়, মহামারী তো আর না বলেই দেওয়া হয়েছে! তাই পুজো হবে, হবেই।
     

    পুজোর দিন, ছোট প্যাণ্ডেলটার বাইরে কার্তিক দাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। মায়ের বরপুত্তুরকে করোনা আশীর্বাদ দিয়েই গেল অবশেষে। তাই সে এখন হাসপাতালে, বড়লোকদের সঙ্গে। মায়ের আর রূপোর মাস্ক পরা হয়নি। 

    ওদিকে কার্তিক দার কথা অগ্রাহ্য করে মাইকে বেজে চলেছে, "দূরত্ব বজায় রাখুন, সঠিক ভাবে মাস্ক পড়ুন। মণ্ডপের গায়ে হাত দেবেন না। স্যানিটাইজার মাখুন।'


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    ডিপ্রেশন যে একটা রোগ, যাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন সেটাই এই গল্প দেখাল।

    কলকাতা কেন্দ্রিক দক্ষিণবঙ্গ দিন দিন বাজ পড়ার হটস্পট হয়ে উঠছে।

    হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়।

    সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের পাশেই সংহতি আর মানবতার উজ্জ্বল ছবি বাংলায়।

    এক মহিলার রাজ্যেই অন্য মেয়েরাই নিরাপদ নয়, কারণ তিনি ধর্ষণের অজুহাত দিতে ব্যস্ত! 

    ওষুধ, খাবার, মাদক, মারণ বোমা সবই ডেলিভারি দিচ্ছে ড্রোন– এবার তাকে সামলাতে হবে!

    করোনাকে বলি ধরো না-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested