×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কাকতালীয়! খুশি দিবসে সুবিচার পেল নির্ভয়া

    রজত কর্মকার | 20-03-2020

    প্রতীকী ছবি

    ২০ মার্চ শুক্রবার “ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ হ্যাপিনেস’। অর্থাৎ খুশি দিবস। কাকতালীয় ভাবে খুশির অবশ্যম্ভাবী কারণ হিসাবে এ দিনই নির্ভয়ার (যার ভালো নাম জ্যোতি সিং) ধর্ষক এবং খুনিদের মধ্যে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল। (এর আগে রাম সিং নামে অপর এক ধর্ষক তিহার জেলেই আত্মহত্যা করে। শেষ ধর্ষক ও খুনি নাবালক হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় তিন বছর পর।) গোটা দেশ যে দিনটার জন্য ৭ বছর ধরে অপেক্ষা করেছে, অবশেষে সে দিনটা এল হ্যাপিনেস ডে-তে।


    আরও একটা বিষয় কাকতালীয় রয়েছে। নির্ভয়ার নাড়ি-ভুড়ি ছিঁড়ে যখন ওই মহাপুরুষরা রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল, সে সময়ও লড়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে অসম্ভব যন্ত্রণা নিয়ে ২ সপ্তাহ লড়ে গিয়েছিলেন। পুলিশের কাছে একাধিকবার বয়ানও রেকর্ড করিয়েছিলেন ওই সময়ের মধ্যেই। দিল্লির সফদরজং এবং এইমসের চিকিৎসার পর তাঁকে যখন এয়ারলিফ্ট করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সে সময়ও লড়েছিলেন, নির্ভীক ভাবে। সে জন্যই জ্যোতি থেকে নির্ভয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়েছিলেন জ্যোতি। সাহসের সঙ্গে।


    জ্যোতির ধর্ষকরাও লড়েছে। তাদের আইনজীবী এ পি সিং-কে সঙ্গে নিয়ে ওরাও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালানোর চেষ্টা করেছে। রাত আড়াইটের সময় সুপ্রিম কোর্টের দরজায় টোকা দিয়েছে। খুনি-ধর্ষকদের জন্য ঘুম শিকেয় তুলে শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে বিচারপতিদের। এত তৎপরতা যদি বাকি মামলার ক্ষেত্রেও দেখা যেত তবে হয়তো সাড়ে তিন কোটি মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকত না।


    ভোর থেকেই বহু মানুষ জেলের বাইরে জমায়েত করে ফাঁসি সেলিব্রেটও করেন। একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান। অনেকেই বলছেন, দেরিতে হলেও অন্তত বিচার তো হল। হ্যাঁ হল। এই একটা মামলার ক্ষেত্রে হল। মাত্র ৭ বছরেই। মাত্র শব্দটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করা হল। কারণ এমন বহু মামলার উদাহরণ রয়েছে, যেখানে ধর্ষিতা মরে যাওয়ার বহু বছর পর মামলার রায় বেরিয়েছে। দীর্ঘসূত্রিতার এর চেয়ে বড় উদাহরণ খুব কমই মিলবে।


    নির্ভয়া মামলা এমন একটি মামলা যা গোটা দেশের সামনে পরিষ্কার ভাবে দেখিয়ে দিল, আইন ভাঙা যতটা সহজ, আইন মেনে তার শাস্তি দেওয়া ততটাই কঠিন এবং দূরূহ প্রক্রিয়া। ধর্ষক ও খুনিদের আইনজীবী বার বার প্রকাশ্যেই বিবৃতি দেন, তাঁর হাতে প্রচুর আইনি তাস রয়েছে, যা তিনি এক এক করে খেলবেন। তিনি খেলতে পেরেছেন কারণ রাষ্ট্রই তাঁর হাতে তাস তুলে দিয়েছে। আইন ব্যবস্থায় যদি দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র তাস খেলে ৭ বছর বেঁচে থাকা যায় তবে কে বাঁচতে চাইবে না বলুন? ওই তাস খেলার জন্য যাবতীয় খরচও কি রাষ্ট্র বহন করেছে? এই প্রশ্নটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। কারণ, ৪ ধর্ষক ও নৃসংশ খুনি, যাদের অপরাধ প্রমাণিত, নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত, সব জায়গায় সমস্ত আপিল করার খরচ কত হতে পারে তা একটু অঙ্ক কষলেই পাবেন। কখনও পাগলের নাটক করা, কখনও অসুস্থতার ভান করা, তার জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা, তাদের আলাদা সেলে রাখা, আলাদা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, সব মিলিয়ে খরচ কত হল? তথ্য জানার আইনে প্রশ্ন করলে হয়তো বা সঠিক তথ্য মিলতে পারে।


    আমাদের মতো দেশ, যেখানে অর্ধেক মানুষ অভুক্ত দিন কাটান, সেখানে ধর্ষক-খুনিদের আইনি সুরক্ষা দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কেন? এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কেন ওদের বাঁচিয়ে রাখার বোঝা চাপবে সাধারণ নাগরিকের ঘাড়ে?


    তবে আপাতত প্রশ্ন থাক। অন্তত বেঁচে থাকতে থাকতে একটা মামলার সুবিচার দেখার সৌভাগ্য তো হল, সেটাই বা কম কী!

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই আদর্শ ধারাবাহিক।

    যে কোনও চলে যাওয়া শূন্যতা তৈরি করে যায়। এস পি-র শূন্যতা ভরাট হওয়ার নয়।

    যারা গণধর্ষণে অভিযুক্ত, যারা দু’ জন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল, তারা জামিন পায় কী ভাবে?

    খাদ্য-খাদক সম্পর্ক না থাকলেও যে এ ভাবে অন্য প্রজাতির খাবার লোপাট করা যায়, তা দিল্লি গেলে বুঝবেন।

    এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ

    দেশের প্রধান সেবকের অনুগামীর সঙ্গে এমন চরম বালখিল্য আচরণ মানা যায়?

    কাকতালীয়! খুশি দিবসে সুবিচার পেল নির্ভয়া-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested