×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এমন স্বতন্ত্র মিঠে গলা আর আসবে না

    রজত কর্মকার | 25-09-2020

    এসপি. বালাসুব্রহ্মনিয়াম

    সালটা 1989। সে বছর মহালয়ার ঠিক আগে বাবা একটি রেডিও কাম ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে এনেছিলেন। Sony-র কালো রঙের ক্যাসেট প্লেয়ারটা আমার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তখন বাড়িতে বাউল আর রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড়া অন্য গান কিছু চলত না বললেই চলে। হিন্দি সিনেমার গান তো নিষিদ্ধ পর্যায়ের ছিল।

     

    আমি নেহাতই শিশু তখন। বড় দিনের ছুটিতে পিকনিক করতে গিয়ে কয়েকটা গান মনে গেঁথে গিয়েছিল একেবারে। হিন্দি গান বাজছে, কিন্তু চটুল নয়। অত্যন্ত শ্রুতি মধুর। নারী কণ্ঠস্বর লতা মঙ্গেশকরের ছিল সেটা একবারেই চিনতে পেরেছিলাম। কিন্তু পুরুষ কণ্ঠস্বর অচেনা ছিল। গানটি ছিল আতে যাতে, হসতে গাতে, সোচা থা ম্যায়নে মন মে কই বার...মোহিত হয়ে শুনছিলাম। সিনেমার নাম পরে জেনেছিলাম, 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া'। এমন নয় যে একটি পিকনিকের দল সেই গান বাজাচ্ছিল। আশপাশের প্রায় সব মাইক থেকেই এই সিনেমার গান ভেসে আসছিল। সব গানেই ওই একই পুরুষ কণ্ঠস্বর। এ ভাবেই আমার এস পি বালাসুব্রমন্যম-এর সঙ্গে সাংগীতিক পরিচয়।

     

    একটু বড় হওয়ার পর দেখেছিলাম নব্বইয়ের দশকে ', ' লাভ ', 'হম আপকে হ্যায় কৌন' - সলমান খানের প্রায় সব সিনেমায় তাঁর লিপে এস পি মাস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। যেমনটা সত্তরের দশকে রাজেশ খান্নার জন্য ছিলেন কিশোর কুমার। এক এক সময় তো মনে হত সলমান বোধহয় নিজেই এত ভাল গান করেন! কিশোর মনের অনেক ভুল বড় হয়ে ভেঙে যায়। 1992 সালে প্রকৃতপক্ষে এস পি-র কণ্ঠের প্রেমে পড়েছিলাম। তখন গানের আর কী বুঝি! কিন্তু ' রোজা ' সিনেমায় তাঁর কণ্ঠে টাইটেল ট্র্যাক শুনে মনে হয়েছিল, গানেও এত ব্যথা থাকতে পারে। এত দরদ দিয়েও গাওয়া যায়! বড় হওয়ার পর এমন দরদি গান আরও অনেক আবিষ্কার করেছি। তবে শুরুটা এস পি-র হাত ধরেই হয়েছিল।

     

    নব্বইয়ের দশকের দ্বিতীয় ভাগে তাঁকে সাক্ষাৎ দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল। এক আত্মীয়ের অফিস অনুষ্ঠানে শিল্পী হিসাবে এস পি বালাসুব্রমন্যম আসছেন এ খবর জানতে পেরেছিলাম। বাড়িতে রীতিমতো নাছোড়বান্দা হয়ে ওই অনুষ্ঠান দেখার বায়না ধরেছিলাম। অতিকষ্টে কান্নাকাটি করে তবে যাওয়ার অনুমতি মিলেছিল। তখনও পর্যন্ত তাঁকে চাক্ষুশ দেখার সুযোগ হয়নি। জানতাম না তিনি কেমন দেখতে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছিল অনুষ্ঠান। প্রাথমিক অনুষ্ঠান শেষে তিনি যখন স্টেজে উঠলেন আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ইনিই এস পি। এত সাধারণ অ্যাপিয়ারেন্স! পাড়ার ছুটকো ছাটকা অনুষ্ঠানে ততদিনে দেখেছিলাম শিল্পী মানেই রংচঙে পোশাক, লম্বা চুল, কানে দুল, হাল ফ্যাশনের চশমা ইত্যাদি পরতেই হবে। গানের গলা যেমনই হোক চলবে, কিন্তু দর্শনদারিতে কমতি হলে কেউ পাত্তা দেবে না। পরে বুঝেছিলাম, যাঁর সংগীত কথা বলে, যাঁর গুণ যত বেশি হয় তিনি তত বিনয়ী, বিনম্র হন। গুণমুগ্ধ তো ছিলামই, সে বার মানুষ এস পি-র প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে গিয়েছিল।

     

    কথায় বলে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্য বেস্ট ইমপ্রেশন। ওই এক দিনের অনুষ্ঠান আমায় জীবনের অনেক বড় শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিল। তাঁকে গুরু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু তিনি শিখিয়েছিলেন গুরুর মতোই। 25 সেপ্টেম্বর, শুক্রবার গুরুচিরবিদায় নিলেন। ভারতীয় সিনেমা চিরদিনের মতো হারাল সংগীতের স্বতন্ত্র সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী সকলের শ্রদ্ধেয় এস পি বি-কে।

     

    গত মাসের গোড়ার দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হন। খবরে পড়েছিলাম। তবে কখনও ভাবতে পারিনি তিনি অসময়ে এ ভাবে চলে যাবেন। জীবনের প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সংগীত জীবনে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এস পি। পেয়েছেন দুই পদ্ম সম্মান পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ। পুরস্কার ছাড়া তিনি যা পেয়েছেন, তা সব শিল্পীর ভাগ্যে জোটে না। অনুরাগীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।

     

    তবে এস পি শুধুমাত্র প্লেব্যাক গায়ক হিসাবেই বিখ্যাত নন, দক্ষিণী ছবিতে এক সময় কমল হাসানের যে কোনও সিনেমার তেলুগু ডাবিংয়ে তিনি ছিলেন মাস্ট। গান্ধী ছবিতে বেন কিংসলে-এর হয়েও ডাবিং করেন এস পি। এ ছাড়াও বেশ কিছু দক্ষিণী ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। প্রভু দেবা-র আইকনিক ফিল্ম কাধালানবা হিন্দিতে যে ছবিকে আমরা হম সে হ্যায় মুকাবলানামে জানি, সে ছবিতে প্রভু-র বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন এস পি। যা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

     

    29 এপ্রিল ইরফান খানের হঠাৎ চলে যাওয়া যে ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল, এস পি-ও অনেকটা সে ভাবেই চলে গেলেন। তিনি নিশ্চিত ভাবেই তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমেই চিরকাল বেঁচে থাকবেন, তবে যে কোনও চলে যাওয়া শূন্যতা তৈরি করে যায়। এস পি-র শূন্যতা ভরাট হওয়ার নয়।

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    প্রয়োজন না থাকলেও একটু বেশিই মাছ কিনে ফেললাম। বাবা হিসাবে আর এক সন্তানের জন্য এটুকু তো করা যেতেই পার

    সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক

    দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই আদর্শ ধারাবাহিক।

    এমনিতেই মোদীবাবুর গুণের শেষ নেই। এত গুণের সঙ্গে তিনি কি ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও?

    আন্দোলনও হল, আবার চিনকে রামচিমটিও দেওয়া হল। বেশি কথা বলতে এলে পরিষ্কার বলে দাও, আমরা তোদের পকেটে নিয়

    এমন স্বতন্ত্র মিঠে গলা আর আসবে না-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested