×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মুখে ‘জয় শ্রী রাম’, মনে মধ্যযুগ

    রজত কর্মকার | 10-04-2020

    রামায়ণ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য।

    লকডাউনে অনেক কিছু ফিরে আসছে। মেরামত হচ্ছে। যেমন ধরুন তাজা মুক্ত বাতাস ফিরে আসছে বায়ুমণ্ডলে। জাত-ধর্ম ভুলে ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ চিন্তাধারাও আমজনতার মনে খানিকটা ফিরেছে। সম্প্রতি মায়ের স্কুটি চেপে লকডাউনে আটকে পড়া ছেলে 1400 কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরেছে। তেমনই লকডাউনে একটু ত্রেতা, একটু দ্বাপর যুগের ফিলিং ফিরিয়ে আনতে দূরদর্শন রামায়ণ-মহাভারত ফিরিয়ে আনা হয়েছেসাধু উদ্যোগ সন্দেহ নেই। দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই তো আদর্শ ধারাবাহিক।

     

    আহা, ‘এমনও বসন্ত দিনে...’ যদি ঘরে বসেই ত্রেতা বা দ্বাপর যুগে ফেরা যায়, তবে তো কথাই নেই! তবে শুনেছি ভক্তরা ত্রেতা-কে বেশি প্রেফার করে। মানে, ত্রেতা ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফিল আনে। জটিল চরিত্র নেই, পরকীয়া নেই, গন্ধর্ব বিয়ে নেই, নায়কের একাধিক বিয়ে নেই। ভিলেন হিরোইনের এক ডায়ালগে ঘায়েল, ‘ও আমায় টাচ করবে না’ আশ্চর্যের বিষয়, ভিলেন কিন্তু সত্যিই টাচ করেননি। শুধু বছরখানেক বন্দি বানিয়ে বাগানে ছেড়ে রেখেছিলেন। বাগান শুনে মোহনবাগান সমর্থকদের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বাগানের নাম অশোক ছিল, মোহন নয়।

     

    এগুলো নিয়ে বেশ সেফ খেলা যায়। ভক্তদের নানা উদাহরণ দিতে কাজে লাগে। মর্যাদা পুরুষোত্তম একাধারে হিরো, ঘরের বড় ছেলে, একনিষ্ঠ প্রেমিক। না প্রেমিক নয়, ওটা ভক্তদের কাছে নিষিদ্ধ ব্যাপার। ওসব প্রেম-ট্রেম পাপাচারীরা করে। যারা পুরুষোত্তম বা পবিত্র নারী তারা শুধু বিয়ে করে। প্রেম থাকুক বা না থাকুক তাতে কিস্সু আসে যায় না ভগবানের আশীর্বাদেই গর্ভবতী হন সেই পবিত্র নারী, সঙ্গমের প্রয়োজন পড়ে না। মানে, এমনটাই ধারণা ‘সরল’ ভক্তমনে। কিন্তু দেশের মধ্যে ধর্ষণের বিচারে আবার ‘চরম ভক্ত’ রাজ্যগুলির স্থান একেবারে উপরের সারিতে। এর কারণ কী, তা মা গঙ্গাই জানেন

    যে কোনও রোগের রামবাণ চিকিৎসা গরুর হিসু। বাত-আমাশা-ঘামাচি থেকে একেবারে ক্যান্সার পর্যন্ত। এইডস নিয়েও কথা চলছে। কোনও একজন রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারলেই ঘোষণা করা হবে। তবে কিনা ছোঁয়া নিয়ে ছুৎমার্গ রয়েছে তো, তাই এইডস রোগীদের কাছে ভক্তরা বিশেষ ঘেঁসে না।

     

    তুলনায় দ্বাপর কিন্তু অনেক ডেঞ্জারাস। কী সব চরিত্র দিয়ে মহাকাব্য তৈরি করেছেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস! নায়কদের গুণের সীমা নেই। প্রেমিকা ভাগিয়ে আনেন, প্রচুর প্রেমিকা নিয়ে ‘লীলা’ করেন, প্রচুর বিয়ে করেন, ছদ্মবেশে টপাটপ খুনটুন করেন, প্রাক্তন প্রেমিকের সন্তানকে দিয়ে বংশ রক্ষা করাতে সদ্যবিধবা রানিদের ব্যাসদেবের ঘরে পাঠান স্বয়ং শাশুড়ি। নাহ্, এ ঘোর অনাচার। এ পর্যন্ত যদি তাও নেওয়া যেত, কিন্তু এক নারীর পাঁচজন স্বামী! এটা জাস্ট নেওয়ার প্রশ্নই নেই। আর চারদিকে এত প্রেম-প্রেম গন্ধ যে ভক্তকুলের একেবারে গা গুলিয়ে ওঠার জোগাড়। এ সহ্য হয় না। এত প্রেম কিসের? শুধু বিয়ে করাই যথেষ্ট ছিল না? তাও ক্ষমাঘেন্না করে একাধিক বিয়ে মেনে নেওয়া যেত। আরে স্বয়ং মর্যাদা পুরুষোত্তমের বাবার চারটে বিয়ে ছিল। ফলে ও নিয়ে ট্যা-ফোঁ করে কাজ নেই। কিন্তু এত চিরকালীন বিষয় নিয়ে লেখা মহাকাব্য হজম করা কি সবার কম্ম?

     

    এ তো গেল ত্রেতা নিয়ে ভক্তদের সেন্টিমেন্টের কথা। কিন্তু যে কথাটা এ সব চিমটির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে, তা হল নারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দুই যুগেই নিজের জীবনসঙ্গী বাছার স্বাধীনতা ছিল নারীদের। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় হোক বা শূদ্র, প্রত্যেকের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হত। বিদ্যার উপর সকলের সমান অধিকার ছিল, নারী-পুরুষ ভেদ ছিল না। হরণের উল্লেখ থাকলেও দুই মহাকাব্যে ধর্ষণের উল্লেখ আছে বলে অন্তত শোনেনি এই বান্দা। এই বিষয়গুলি ভক্তরা এড়িয়ে যাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। না হলে আধুনিকতম যুগে এসে মহান নায়কের জন্মভূমির দেশে প্রধানমন্ত্রীকে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগান দিতে হত না। মেয়েকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার কথা বলে কোনও উকিল গটগট করে ঘুরে বেড়াতে পারত না।

     

    তাই মুখে জয় শ্রী রাম থাকলেও, মনে মধ্যযুগের অন্ধকার বাসা বেঁধে আছে ভক্তকুলের। একটু ক্ষমা-ঘেন্না করুন ওদের।

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    আন্তর্জাতিক খুশি দিবসেই ফাঁসিতে ঝোলানো হল নির্ভয়ার ধর্ষকদের। খুশির দিনই বটে!

    পেটের জ্বালায় মায়ের বুকে হয়তো একটু আশ্রয় খুঁজছিল শিশু মন।

    যারা গণধর্ষণে অভিযুক্ত, যারা দু’ জন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল, তারা জামিন পায় কী ভাবে?

    বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে চেরনোবিল সারা বিশ্বের বহু মানুষের কাছে কৌতুহলের বিষয়। ঠিক কী হয়েছিল সে রাতে?

    দাদা তো ঠিকই বলেছে। হাসপাতাল বানিয়ে কী হবে? তার চেয়ে মোড়ে মোড়ে মন্দির বানালে এ দেশের কোনও অমঙ্গল হ

    হলফ করে বলা যায়, সিরিজটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সিনেমার আকারেও তৈরি করা যেত।

    মুখে ‘জয় শ্রী রাম’, মনে মধ্যযুগ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested