×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • যত্ত সব মাকড়ার দল!

    রজত কর্মকার | 17-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    দাদা রে তোর পায়ের নীচে পোকামাকড় যায় রে পিষে
    তুই বলিস ভাবলে এত, বেঁচে থাকা দায়...

     

    সকাল সকাল রেডিওতে গানটা শুনছিল ভক্ত শিরোমণি। মহালয়ার আগে বাড়িতে রেডিওর খোঁজ পড়ে। সকালে বারান্দায় বসে রেডিওটা একটু ঝাড়পোছ করছিল সে। অন্যান্য দিন এমন সময়ে নন্দ-এর দোকানে বার কয়েক গলা থেকে চা নামিয়ে দেয়। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেদার প্যাক খেতে হচ্ছে তাকে। পাড়ার কিছু চ্যাংড়া ছেলেপুলে ঠারেঠোরে বাড়ির সামনে আওয়াজ দিয়ে যায়। যার মধ্যে GDP শুনলেই খচে বোম হয়ে যায় শিরোমণি।

     

    ছেলেগুলোর খেয়েদেয়ে কাজ নেই। পড়াশোনা করে খালি। বেশি পড়লে দেশদ্রোহী এলিমেন্ট তৈরি হবেই। সে দিকেই যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এত বড় সাহস ওদের, রাতবিরেতে জানালার নীচে দাঁড়িয়ে ও জিডিপি কাকু, ও বেকারত্ব কাকু, ও পরিযায়ী কাকু...ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই সাইকেলে চেপে বেমালুম হাওয়া। ইয়ার্কি হচ্ছে! দেশের প্রধান সেবকের অনুগামীর সঙ্গে এমন চরম বালখিল্য আচরণ মানা যায়? শিরোমণি মনে মনে ভেবে রেখেছে, একবার বাছাধনদের ধরতে পারলে হয়, সারা গা-হাত-পায়ে জিডিপি-বেকারত্ব আর পরিযায়ী শ্রমিকদের ছাপনিয়ে বাড়ি ফিরবে।

     

    শিরোমণির সঙ্গেও জনাকয়েক ছেলে থাকে। কয়েকবার চেষ্টাও করেছে লুকিয়ে থেকে নচ্ছার গুলোকে উত্তম-মধ্যম দেওয়ার। কিন্তু যে দিনই পাহারা বসায়, সে দিন ও সব কিচ্ছু হয় না। বিরক্ত শিরোমণি তাই এ কদিন বাড়ি থেকে বিশেষ একটা বের হয়নি। একা তো একেবারেই নয়। সকাল-বিকেল পচা-কালুয়ারা এসে নীচ থেকে জ্যায় সিরি রাম শিরোমণি দাহাঁক পাড়লে তার পর বাইক নিয়ে বের হচ্ছে শিরোমণি। এখন আর আগের মতো নন্দ-এর দোকানের ঠিক সামনে আলো করে বক্তিমে ঝাড়ছে না। দোকানের ভেতরেই বসছে। এই সুযোগে হতচ্ছাড়ারা মাঝে মধ্যে বাইরে থেকে আওয়াজ দিয়ে পালিয়ে যায়। চোখে না দেখলে তো যার তার দিকে তেড়ে যাওয়া যায় না।

     

    বহুদিন বাদে একখানা মনের মতো সাবজেক্ট পেয়েছে সে। তাই বিকেলে দোকানের সামনেই বেঞ্চিটা টেনে বসল শিরোমণি। খানিক উচ্চগ্রামেই বলতে শুরু করল সে, ‘আজব দেশ মাইরি আমাদের। গণ্ডা গণ্ডা মানুষ পোকামাকড়ের মতো এ রাজ্য সে রাজ্য করে বেড়াবে, তার পর তাদের খাওয়া-দাওয়া, মরা-বাঁচার হিসেব রাখতে হবে সরকারকে। খেয়েদেয়ে যেন কাজ নেই আর। আরে এ সব লোকেদেরও যদি রোজনামচার হিসেব রাখতে হয় তবে তো দিনের মধ্যে 48 ঘণ্টা কাজ করতে হবে অবতার জি-কে। এমনিতেই দিনে 18 ঘণ্টা কাজ করেন। একটু জিরোনোর সময় নেই লোকটার। তার মধ্যে আবার এ সব জ্বালাতন! কথায় কথায় খালি ক্ষতিপূরণ দাও, টাকা দাও, চাল দাও, খেতে দাও... খালি দাও আর দাও। এত দিয়ে দিয়ে তো দেশটা গোল্লায় গেছে। এত টাকা এমনিই বিলিয়ে দিলে দেশের হাল কী আর হবে? এ তো হওয়ারই ছিল। এখন দোষ গিয়ে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ!

     

    দ্বিতীয় রাউন্ড চায়ের গেলাসটা রেখে গেল নন্দ। পচা-কালুয়া এ সবের আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। শিরোমণিকে জিজ্ঞেস করতেও ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ কী নিয়ে এত উত্তেজনা ভাবতে ভাবতেই শিরোমণির চোখ গেল ওদের উপর। কী রে, তোরা এমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছিস কেন?’ জিজ্ঞেস করে শিরোমণি। উত্তরে পচা একটু সাহস করে বলে, ‘দাদা, প্রতিদিন নিয়ম করে গোঁসাই ঠাকুর আর সুধীর ভাই-এর চ্যানেল দেখে যাচ্ছি। কিন্তু আপনি যা বলছেন ঠিক বুঝতে...কথা পুরোপুরি শেষ না হতেই ধমকে ওঠে শিরোমণি।

     

    আরে ওগুলো আমাদের চ্যানেল। ওখানে এ সব শুনবি কোথা থেকে। কিছু বিলিক-ছিলিক চ্যানেল-খবরের কাগজ-পোর্টাল আছে, তারা এ সব নিয়ে পড়ে আছে। কে কোথায় মরল, কে কোথায় বেকার হল, জিডিপি কত ইঞ্চি কমল, এ সব কুটকাচালি না হলে ওদের ভাত হজম হয় না। রিয়া বলে মেয়েটা তো একেবারে... (যে বিশেষণ বলা হল, তা লেখার যোগ্য নয়)। ড্রাগ দিয়ে-কালা জাদু করে ছেলেটাকে মেরেই ফেলল। আরে এত বড় একজন মানুষ আত্মহত্যা করল, বেঁচে থাকলে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী হতে পারত, সেরা অভিনেতা হতে পারত, সেরা সেরা আরও অনেক কিছু হতে পারত। তার দিকে কোনও খেয়াল আছে ওদের? এ রকম সেরা পোতিভা ছেড়ে কোথাকার কে অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, এদের কথা নিয়ে মাতামাতি। তার উপর রঘুরাম রাজনও মাঝে মধ্যে ফুট কাটে। বিদেশি বউ বিয়ে করে নোবেল পেয়ে বড় বড় ফুটুনি মারছে। রাজন তো কাজ সামলাতে না পেরে পালিয়েই গেল। এদের কথার কোনও দাম আছে? দরদ দেখিয়ে আবার সংসদে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রশ্ন করছে ঘাস-পাতা পার্টি। আরে পরিযায়ী পাখিদের হিসেব কেউ রাখে? এ জন্যই তো ওরা পরিযায়ী। কথার মানে বোঝার খ্যামতা নেই, সাংসদ হয়েছে। আচ্ছা করে ঝামা ধরে দিয়েছে আমাদের সন্তোষ গাঙ্গোয়ার। প্রশ্নের গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটিয়ে ছেড়েছে। দেশটাকে একা হাতে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অবতার জি, এরা খালি খুঁত ধরতেই ব্যস্ত। এরা নাকি কিছুই বাড়তে দেখে না।

     

    ফেকুর দাড়িটা কিন্তু বেশ বাড়ছে’, বলেই মাস্ক পরা কয়েকজন ছেলে সাইকেল চালিয়ে সেখান থেকে বেমালুম হাওয়া। কিছু বুঝে ওঠার আগেই। দোকনের ভেতর চাপা হাসির রোল। পচা-কালুয়ারাও হেসে ফেলে আর কী! রাগে গজগজ করতে করতে বাছা বাছা চার অক্ষর ছয় অক্ষর বলে চলল শিরোমণি। খাতায় লিখে নিস...নন্দকে কথাটা বলেই বাইক স্টার্ট করে শিরোমণি। পচা-কালুয়ার অপেক্ষা না করেই হুশ করে বেরিয়ে যায় সে।

     

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    এ এমন এক অন্ধকার, যা সূর্যের আলোতেও দূর হওয়ার নয়। গ্রহণের সময় তো আবার সেই আলো কমে যায়।

    দেশের প্রধান সেবকের অনুগামীর সঙ্গে এমন চরম বালখিল্য আচরণ মানা যায়?

    এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ

    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    যারা আমায় মনের মধ্যে রাখতে পারে না, তারাই চিৎকার করে আমার ভক্ত বলে পরিচয় দেয়।

    করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান

    যত্ত সব মাকড়ার দল!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested