×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ওমিক্রন, ভয়, বন্দিদশা…

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 23-12-2021

    নিজস্ব ছবি

     

    বর্ষশেষের সূচনা হয়ে গিয়েছে। কলকাতাবাসীদের অভিমুখ এখন পার্ক স্ট্রিট (park street), সেন্ট পলস চার্চ হয়ে সালদানহা (Saldanha), নাহুমস(Nahoums)। সবাই তৈরি এই বিচ্ছিরি 2021-কে বিদায় জানিয়ে 2022-কে বরণ করে নিতে। দুর্গাপুজো, ইদের মতোই যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন নিয়ে মেতে আপামর বঙ্গবাসী। কিন্তু এর মাঝে যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন(omicron) হাত নেড়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার উপস্থিতি, সেটার কী হবে? আমরা কি খেয়াল করছি তাকে? খুব সম্ভবত না। আর ওমিক্রনের এই উপেক্ষাই কি আগামী দিনের বড় কোনও বিপদ ডেকে আনতে চলেছে?

     

    আজ বাদে কাল থেকেই শুরু হয়ে যাবে সপ্তাহান্ত, সঙ্গে ক্রিসমাস। ভিড় বাড়বে পার্ক স্ট্রিট সমেত শহরের নানা অঞ্চলে। বাড়িতে, পাবে, রেস্তরাঁয় চলবে দেদার পার্টি, পিকনিক। কিন্তু মাস্ক? বার বার হাত ধোয়া? সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, এই কথাগুলো কি মনে থাকবে আমাদের? আবারও উত্তর হবে, না। যেখানে বাসে-ট্রামে অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক থাকে না, থাকলেও সেটা কানের পাশে, থুতনির কাছে ঝোলে সেখানে পার্টি পিকনিকে মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রাখার আশাটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে!

     

    এই তো সে দিনই অফিস ফিরতি পথে বারাসত-গড়িয়া রুটের একটি বাসে দেখলাম দুটো পিঁপড়ে অবধি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে না এত ভিড়, সেখানে মানুষ তো...হেঁ হেঁ! করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের রেশ কেটে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে থেকে সচেতনতাটাও যেন মন্ত্রবলে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে! মানুষ ভুলে গিয়েছে সেই অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার, মৃত্যুমিছিল।

     

    আরও পড়ুন:বিজ্ঞানের গবেষণাগারে হিন্দুত্ববাদের চাষ

     

    আমাদের পাড়াতেই থাকেন কার্তিককাকু। রোজ সকালে পাড়ার মুদি দোকানে আসেন, অবশ্যই মাস্ক ছাড়া। তাঁকে সে দিন একপ্রকার বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করি, মাস্ক পরে আসেন না কেন? উত্তর এল, ‘‘এই তো পাশের গলিতেই থাকি, মাস্ক পরে আর কী হবে? এ সব মাস্ক-স্যানিটাইজার-ভ্যাকসিন সব বুজরুকি। তোরা বুঝবি না। কোম্পানিগুলোর, সরকারের মুনাফা করার ধান্দা বই কিছু না! হওয়ার হলে এমনিই হবে। ও সব পরতে-টরতে পারব না।’’

     

    এটা শুধু কার্তিককাকুর মনোভাব নয়, খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার আপনার আশপাশে এমন অনেক মানুষ পাবেন। তাঁরা পাড়ার দোকান হোক, বা দূরের কোনও বাজার বা যেখানেই হোক, মাস্ক পরে যান না। লকডাউনের কথা তুললেই আবার বলেন, ‘‘বললেই হল লকডাউন করবে? ও প্রথম বার যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আর মানব না। ও সব লকডাউন বড়লোকদের জন্য!’’ কিন্তু এটা অনেকেই বোঝেন না তাঁর অসচেতনতা লকডাউনের কারণ হতে পারে!

     

    আরও পড়ুন:হিমবাহেই লুকিয়ে আছে বিপদ, প্রহর গুনছে ভুবন

     

    ভারতে ইতিমধ্যেই ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা 236, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটি 6। বিজ্ঞানীমহলের একাংশ জানাচ্ছেন ওমিক্রন করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর মতো মারাত্মক না হলেও এর ছড়ানোর ক্ষমতা অত্যধিক। ডেল্টার তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রন। খুব সহজেই এক জন থেকে আর এক জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে যদি এই উৎসব পার্বণের কারণে আবারও হু হু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে তা হলে কি ভারত সরকার আবারও লকডাউনের পথে হাঁটবে? যদি হাঁটে তা আমাদের কতটা প্রভাব ফেলবে? কারণ আমরা তো নিজে থেকে সচেতন বা সাবধান, কোনওটাই হব না, বাড়াবাড়ি হলে সরকারকেই মধ্যস্থতা করতে হবে।

     

    জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘আর হয়তো সম্পূর্ন লকডাউন (lockodwn) হবে না। রোগ হুহু করে ছড়াতে থাকলে আবারও কিছু বিধিনিষেধ আসবে। কারণ এ ভাবে বার বার লকডাউন করলে অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে। বেশি কড়াকড়ি করলে মানুষও আর মানবে না।’’

     

    তা হলে করণীয় কি? ডক্টর দলুই বলছেন, ‘‘ওমিক্রন কতটা ক্ষতিকর এটা এখনও প্রমাণিত নয়। তবে এর থেকেও বেশি জরুরি এটা মনে রাখা যে ওমিক্রনের সংক্রামক ক্ষমতা অত্যাধিক। এই বিপুল জনসখ্যার দেশে যদি এক বার ছড়াতে শুরু করে তখন কিন্তু বিপদ হবে। 100 জনে যদি 2 জনও গুরুতর অসুস্থ হন সেটাও কিন্তু মারাত্মক। আবারও তাতে বেডের, অক্সিজেনের হাহাকার পড়বে। তাই সেই অবস্থা যাতে না আসে তার জন্য ভ্যাকসিন নিতেই হবে। ভ্যাকসিন নিলে রোগ হবে না এমনটা নয়, কিন্তু তার ভয়াবহতা কম হবে।’’ তাঁর অভিমত, এ ছাড়া মাস্ক পরতেই হবে। দূরত্ববিধি বজায় রাখতে হবে। এখন সবটাই সাধারণ মানুষের হাতে। তাঁরা যদি সচেতন থাকেন, সব কিছু মেনেই আনন্দ, আহ্লাদে মেতে ওঠেন অসুবিধা নেই। কিন্তু করোনাবিধি না মানলেই কিন্তু আবারও আগের মতো রেস্ট্রিকশন চালু হবে।

     

    চিকিৎসকেরা বার বার সচেতন করছেন যেন আমরা করোনাবিধি মানতে ভুলে না যাই, প্রায় সেই একই কথা টুরিজিম, হোটেল, রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীদেরও। এই ইন্ডাস্ট্রিই বোধহয় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেষ দু’টি লকডাউনে। একটি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার বিনায়ক আবির চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সত্যি আর লকডাউন চাই না। অনেক কষ্টে এই ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এটার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িয়ে থাকেন, ড্রাইভার থেকে হোটেলের কর্মচারী, গাইড। তাঁদের সবার কথাও ভাবতে হবে। সবার কাছে এটুকুই অনুরোধ, এমন কিছু করবেন না যাতে অতীতের দুঃসহ দিনগুলো ফিরে আসে। সচেতন থাকুন, মাস্ক পরুন। আমরাও টুর অ্যারেঞ্জ করার আগে আরটিপিসিআর টেস্ট করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখছি, ভ্যাকসিন তো মাস্ট। নিতেই হবে। এর পাশাপাশি আর যা যা জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন টুরিস্টদের জন্য সব নেওয়া হচ্ছে।’’

     

    ওমিক্রন যতই কম শক্তিশালী হোক তবুও সেটা একটি রোগ যা দ্রুত ছড়ায়, প্রাণহানি না করলেও বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই ভয় না পেয়ে আগে থেকেই সচেতন হোন। আপনার এখনকার সচেতনতার অভাব যেন ভবিষ্যতের অনেক দিনের জন্য গৃহবন্দি হয়ে থাকার কারণ না হয়। আমরা কেউই আর লকডাউন নামক বন্দিদশা চাই না। চাই পৃথিবী দ্রুত রোগমুক্ত হোক, তার জন্য আমাদেরই সচেতন থাকতে হবে। সতর্কতা, সাবধানতা মেনে চলতে হবে যেমনটা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    পদক পেলে তবেই উন্নয়ন দোরগোড়ায় আসবে, নতুবা নয়।

    সরকারি স্কুলের বাচ্চারা তো স্কুলে ফিরল, বেসরকারি স্কুলের বাচ্চাদের কী হবে?

    বাঁধ দিয়ে সুন্দরবনের সদ্যোজাত নিচু দ্বীপগুলি বাঁচানো সম্ভব নয়, জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই সমাধান

    জুজু’র মতো করোনার ভয়কে নস্যাৎ করে বাঙালি বেরিয়ে পড়ছে আবারও ‘অজানারে জানতে’

    পরবর্তীকালে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই হুমকি দিয়ে যায়

    বারবার আরটিপিসিআর টেস্ট করলেই হতে পারে বিপদ! 

    ওমিক্রন, ভয়, বন্দিদশা…-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested