বেশিদিন না, এই মাস দেড়-দুই আগের কথা। নেতা নেত্রী, অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া এবং দল বদলানোর হিড়িক দেখা গিয়েছিল। কারণ? তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান! কিন্তু আদতে যখন তাঁদের কাজ করার সুযোগ এল, তখনই কে যেন তাঁদের ভ্যানিশ করে দিল গিলিগিলি গে করে! আর সাধারণ মানুষ? তারা নিজেরাই নিজেদের ভরসা, সহায় হয়ে উঠল।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যে আইসিইউ বেড সহ সাধারণ বেড, অক্সিজেন, রেমিডেসিভির সবই বাড়ন্ত। একটা বেড জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমত কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু এমন বিপদের সময় দেখা নেই জনপ্রতিনিধিদের। তখন সাধারণ কিছু মানুষই ঝাঁপিয়ে পড়ল বাকিদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে।
শেষ দু-তিন সপ্তাহ জুড়ে বঙ্গবাসী আবারও দেখছে সোশাল মিডিয়া ঠিক কতটা শক্তিশালী হাতিয়ার বর্তমান প্রজন্মের কাছে। যাদের অনেকেই ‘স্বার্থপর, সেল্ফ সেন্ট্রিক’ প্রজন্ম বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, তারাই আজ অনবরত খোঁজ রেখে যাচ্ছে রাজ্যের কোন প্রান্তে কোন হাসপাতালে বেড খালি, কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে, কোথায় কার খাবার ওষুধ লাগবে। হ্যাঁ, সোশাল মিডিয়ায় এখন আর না মীম চোখে পড়ছে, না বিনোদনমূলক ছবি বা ভিডিও। এখন গোটা সোশাল মিডিয়ায় শুধু সাহায্যের আর্তি। এই বিপদে সাধারণ নাগরিকরাই একে অন্যের সহায় হয়ে উঠেছে।
অরবিন্দ মূলে, আইআইটির গবেষক, তাঁর ক’জন বন্ধুকে নিয়ে একটি সাইট তৈরি করে ফেলেছেন, রাতারাতি যেখানে গেলেই এক ক্লিকে জানা যাবে কোথায় বেড আছে, কোথায় অক্সিজেন। অনিরুদ্ধ বল এবং তাঁর টিম একটি লিস্ট বানিয়েছে যেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট করা হচ্ছে সমস্ত তথ্য। স্বর্ণাভ দে সকলের কাছে আর্তি জানিয়েছেন তাঁর পাশে থাকার, যাতে তিনি 20টি বা তার বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে যাদের দরকার তাদের কাছে পৌঁছতে পারেন। বেশ কয়েকটি সংস্থা বিনামূল্যে খাবার এবং ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে রোগীদের বাড়ি। দীপায়ন প্রামাণিক, শুভঙ্কর দেব, অর্পণ গুপ্ত, অভীক রায়, নির্মাল্য সেনগুপ্ত- এঁরা কেউ পেশায় ফটোগ্রাফার, তো কেউ কোনও সংস্থার কর্মী, তো আবার কেউ লেখক, তো কেউ সাংবাদিক। তাঁরা বর্তমানে তাঁদের কাজের পাশাপাশি একটা দীর্ঘ সময় মানুষের পাশে থাকার জন্য ব্যয় করছেন।
সঙ্গে আরও একটি ছবি স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠছে। যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছেন, তাঁরা বর্তমানে নিখোঁজ হলেও বেশ কিছু তারকা কিন্তু এই দুঃসময়ে তাঁদের সবটুকু উজাড় করে মানুষের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। পরিচালক সৃজিত মুখার্জি সহ অভিনেত্রী অনিন্দিতা রায়চৌধুরী, অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, গায়ক তিমির বিশ্বাস সমানে তাঁদের অনুরাগীদের অবহিত করে চলেছেন, কোথায় গেলে বেড মিলবে, কোথায়ই বা অক্সিজেন আছে। কেউ তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে কাউকে তাঁরা খালি হাতে ফেরাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে রূপম ইসলাম এবং তাঁর টিমের নামও যোগ করতেই হয়। তাঁরা শুধুই অক্সিজেনের সরবরাহ করছেন না রোগীদের কাছে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসও পৌঁছে দিচ্ছেন। সঙ্গে রাজ্যের কোথাও রক্তের প্রয়োজন হলেও রূপম ইসলামের টিম ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই রক্ত জোগাড় করে দিচ্ছে। হ্যাঁ, এমন উদাহরণ এই সময় অনেকই দেওয়া যেতে পারে।
ফলে এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলার সাধারণ নাগরিকরা নিজেরাই নিজেদের সহায় হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই ভয়ঙ্কর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে কোথাও স্থান নেই তথাকথিত জনপ্রতিনিধি, বা ‘আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’ বলা বক্তাদের।
ছোটু আর বান্টির স্বপ্ন কি ওদের গিন স্কিন পূরণ করতে পারবে?
জীবনে সফল হয়ে তারা যেন গর্ব ভরে বলে, 'রোল কাকুর জন্যই আমাদের এই সফলতা।'
রাজ্যটা এখন চিড়িয়াখানা নাকি সার্কাসে পরিণত হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মনেই ধন্দ।
বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে আসে, নাকি লোকালয় বাড়তে বাড়তে তাদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে?
ওজোন স্তরে একটি বিশালাকার ফাটল তৈরি হয়েছে, যা ক্রমশ আরও বেড়ে চলেছে।
বাড়ির কাজের লোককে আমরা ঠিক কতটা সম্মানের চোখে দেখি বা বিশ্বাস করি? সত্যি করে বলুন তো?