×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জমি দখলের অন্য কাহিনী

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 06-01-2022

    নিজস্ব ছবি।

    এও এক জমি দখলের কাহিনী, তফাৎ বলতে পীড়িতরা পতাকা হাতে রাস্তা অবরোধ করতে পারে না!

     

    সম্প্রতি সুন্দরবন(sunderban) এলাকায় বারবার জনবসতির মধ্যে রয়াল বেঙ্গলের (royal bengal tiger) আবির্ভাবের রোমহর্ষক খবর চমকিত করছে আমাদের। আসছে। লোকালয়ে বারবার বাঘের হানা বলেই সাধারণভাবে এই ঘটনাকে আমরা বর্ণনা করি। বাস্তবটা কি উল্টো নয়? বাঘের বসতি মানুষ কি ক্রমাগত দখল করছে না? বাঘের নিজস্ব এলাকায় মানুষ জীবিকার সন্ধানে গিয়ে কি তার শান্তি নষ্ট করছে নাশুধু সুন্দরবনের বাঘ নয়, উত্তরবঙ্গ ও আসামের হাতি, হিমালয় সন্নিহিত বনাঞ্চলের ভালুক, পাইথন, বাইসন, চিতাবাঘ থেকে নীলগাই– বাঘের মতে নিজেদের জমি রক্ষার লড়াই লড়তে হচ্ছে সকলকেই। 

     

    সম্প্রতি আমরা সবাই সাক্ষী থাকলাম কী ভাবে রয়াল বেঙ্গল টাইগাররা বারবার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়েছে। বনকর্মীদের নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে তাদের ধরার জন্য। কুমিরমারি, কুলতলি, গোসাবায় কখনও বাঘিনী, কখনও বা বাঘ এসে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেরিয়েছে, তো কখনও পুকুরপাড়ের ঝোপে আশ্রয় নিয়েছে। ঘুম পাড়ানি গুলি দিয়ে বা অন্য উপায়ে তাদের আটক করে সেবা শুশ্রূষার পর আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গে হাতির উপদ্রব তো ছিলই। নতুন সমস্যা হয়েছে ভালুকের আগমন। তার সঙ্গে বাইসন। বিভিন্ন চা বাগানে দেখা মিলছে তাদের। অন্যদিকে লখনউ শহরের পথে দেখা মিলেছে চিতাবাঘের, নয়ডায় নীল গাইয়ের। কিন্তু কেন বারবার এভাবে বন্য পশু লোকালয়ে চলে আসছে? 

     

    আমরা কথায় কথায় অধিকাংশ সময়ই বলি লোকালয়ে হানা বাঘের’, ‘হাতির উপদ্রব। কিন্তু একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ওরা নয় বরং আমরাই ওদের জায়গায় ঢুকে বসে আছি। বাসস্থান, চাষের জন্য বনাঞ্চল জবরদখল করে কখনও বা প্ল্যানমাফিক দখল করে তা কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পিচের পাকা রাস্তা, ট্রেন লাইন। ফলে বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে পশুদের থাকার জায়গাও। একই সঙ্গে কমছে তাদের খাবারও। বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাদের অবাধ চলাচল। এর ফলে পশুরা খাবারের খোঁজে জঙ্গল থেকে যেমন বেরিয়ে আসছে কখনও কখনও, তেমনই বিপদের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের। 

     

    শুধু খাবার নয়, কখনও সঙ্গীর খোঁজেও বন্য প্রাণীরা, বিশেষত রয়াল বেঙ্গল টাইগার জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসে। 

     

    বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ হীরক নন্দী বলেন, ‘’আমরা যতই মনে করি ওরা আমাদের জায়গায় ঢুকছে আদতে আমরাই ওদের জায়গায় ঢুকে বসে আছি। তবে এই যে বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে চলে আসছে তার কারণ কিন্তু ভিন্ন। প্রথমে ধরা যাক রয়াল বেঙ্গল টাইগারের কথা। ওরা লোকালয়ে আসে মূলত টেরিটরি ফাইটের কারণে। এক জায়গায় দুটি পুরুষ বাঘ থাকতে পারে না। কখনও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তখন যে পরাজিত হয় তাকে নতুন জায়গা খুঁজতে হয়। এই নতুন জায়গা খুঁজতে গিয়েইওরা অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। সুন্দরবনের গ্রামগুলোর বৈশিষ্ট্য আছে, জঙ্গলের মধ্যে কিন্তু কোনও গ্রাম নেই, সব গ্রামই জঙ্গলের বাইরে। ফলে দূর থেকে বাঘ যখন নদী সাঁতরে এপারে আসছে তখন কিন্তু সে দূর থেকে বুঝতে পারে না এদিকে বসতি আছে। এসে যখন দেখে তখন ভয় পেয়ে যায়। এবং আরও গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে। কখনও আবার খাবারের খোঁজেও আসে। অন্যদিকে হাতির খোরাকি অনেকটা। ফলে তারা এক জায়গায় বেশিদিন থাকলেই সেখানে খাবারের ঘাটতি দেখা যায়। তখন তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যেতে হয়। হাতিরা মদ খেতে খুব পছন্দ করে, মদের গন্ধ পেলে তারা সেখানে এসে হাজির হয় এবং ভাঙচুর করে। আর পশ্চিম বা উত্তর ভারতের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ওখানে জঙ্গলগুলো খুব ঘন নয়, উপরন্তু জঙ্গলের কাছেই লোকালয়। ফলে বন্যপশুরা খুব সহজেই লোকালয়ে চলে আসে।‘’ এর পাশাপাশি হীরকবাবু চিতাবাঘ সম্পর্কে এক দারুন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, চাবাগান চিতাবাঘের জন্য একদম আদর্শ জায়গা। সেখানে চিতাবাঘ সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে, আবার অন্যান্য পশুর ভয় নেই। চাবাগানের মাঝে যে নালাগুলো আছে সেখানে তারা সহজেই প্রসব করতে পারে, নিশ্চিন্তে। কিন্তু যখন মানুষের মুখোমুখি হয়, তারা তখন প্রাণ রক্ষার খাতিরে এবং ভয়ে তারা আক্রমণ করে। মানুষ খাওয়ার জন্য নয়। 

     

    ফলে, কোনও বন্য প্রাণী যখন হঠাৎ লোকালয়ে চলে আসে তখন কয়েকটি কথাই শোনা যায়, প্রাণ, জিনিস পত্রের, চাষের ক্ষতি, আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু কেন তারা আসছে এটা নিয়ে কজন ভাবে? কজন খুঁজতে যায় আসল কারণ? খুঁজলে হয়তো তাদের দোষের বদলে মানুষের দোষই নজরে আসবে বেশি, যেমনটা বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ হীরক নন্দীর কথায় ধরা পড়ল

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    সোমবার বেহালার ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপুজোর শেষ দিন।

    দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ শ্বেতাকাত্তির জয়ের স্বীকৃতি এক দিনের জন্য কানাডার কনসাল জেনারেল পদ।

    শিশু মনেই পাকাপাকিভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বীজ বপন করছে সরকারি NCERT পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে?

    ভূত চতুর্দশী নিয়ে উন্মাদনা আজ আর নেই, রমরমিয়ে বাড়ছে সাহেবেদের আদলে হ্যালোউইনের পার্টি।

    ঘরবন্দি মানুষ সাইবার প্রতারণার সহজ শিকার হচ্ছেন।

    সমকামিতার ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞাপন তুলে নেবে না জানিয়ে সদর্থক বার্তা ক্যাডবেরির।

    জমি দখলের অন্য কাহিনী-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested