×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জৈব চাষে মাত্রাজ্ঞানই আসল

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 27-04-2022

    নিজস্ব ছবি

    মাত্রাজ্ঞানই হল শেষ কথা। যে ওষুধের দু ফোঁটায় শান্তির ঘুম নেমে আসে, সেটাই ঢকঢক করে গলায় ঢাললে প্রাণঘাতী বিষ। যে বিষের জ্বালায় আজ জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। যে জৈব চাষ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের কারণে বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ, তারই মাত্রাজ্ঞানহীন অপরিকল্পিত প্রয়োগে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে চলেছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা 

     

    পুরুলিয়ার একটি গ্রামে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত আছে। কজন বন্ধু মিলে সেখানকার বিরহড় উপজাতিভুক্ত কিছু মানুষকে চাষের কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয় সেখানে। তারা আগে চাষ করতে জানত না, যেহেতু শিকারই তাদের মূল এবং একমাত্র পেশা ছিল। পুরুলিয়ার রুক্ষ মাটিতেই তাদের জৈব উপায়ে চাষ করা শেখানো হয়েছে। এখন তারা সম্পূর্ন জৈবিক ভাবে উৎপাদিত ফসল খান। যে ধরনের জৈব ফসল কলকাতার সুপারমার্কেটে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়।

     

    নিজেদের অভিজ্ঞতায় জৈব চাষের সাফল্য দেখার পর তার সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার ছবিটা মেলানো সত্যিই বেশ কঠিন। তাহলে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম বিষমুক্ত ফসল ফলাব, যা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত হবে তার কী হবে? সেটা কি ভুল?

     

    উত্তরটা হল, জৈব চাষ বাস্তবের মাটিতেই হয়। তাই বিশুদ্ধ পদ্ধতি হিসেবে সেটিকে বিচার করার বদলে প্রয়োজন, পরিপ্রেক্ষিত, তার জন্য অর্থনীতি ও সমাজের প্রস্তুতি এ সবই বিবেচনা করতে হবে। তা না করার ফলেই শ্রীলঙ্কার এই পরিণতি।  বছর দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে রাতারাতি 20 লাখ কৃষককে জৈব চাষ শুরু করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং তা করতে তাদের বাধ্য করেছিলেনকিন্তু রাসায়নিক চাষ থেকে জৈব চাষে যেতে সময় লাগে কৃষক, জমি, সেচ ব্যবস্থা সব কিছুকেই তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। কৃষিপণ্যের উপভোক্তা সাধারণ মানুষকেও তার খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু কেউই সেই সময় পায়নি। যার ফলে সব জিনিসের জন্য সাধারণ নাগরিকদের হাহাকার চরম সীমায় পৌঁছেছে। 1 কেজি দুধের বর্তমান দাম 1980 টাকা, চিনি প্রতি প্রায় 300 টাকা, চাল? মাত্র 500টাকা প্রতি কেজি! বিশেষজ্ঞদের মতে এরম চলতে থাকলে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য।

     

    আরও পড়ুন:জ্বালাময়ী এপ্রিল

     

    জৈব চাষ স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব সন্দেহ নেই। কিন্তু সোওয়া দু কোটি মানুষের একটা গোটা দেশের পক্ষে মাত্র দুই বছরের মধ্যে প্রথাগত চাষ ছেড়ে পুরোপুরি জৈব চাষে যাওয়া কি সম্ভব? কৃষি অর্থনীতিবিদ সুব্রত সাহা বলেন, "রাসায়নিক ছাড়া এত মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। জৈব কৃষি শুনতে ভাল, পরিবেশের জন্য ভাল। এর অনেক সুফল আছে। ছোট ছোট করে নিজের জমিতে এই উপায়ে চাষ করাই যায়। আজকাল অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে একটা গোটা দেশের সকল নাগরিককে খাওয়ানো যায় না। তাদের কাছে খাবার পৌঁছানো যায় না। এতে ফলন কম হয়।" জৈব উপায়ে চাষ করে কোটি কোটি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে গেলে প্রচুর পরিমাণে অর্থ, পরিকাঠামো এবং দীর্ঘমোয়াদী পরিকল্পনার দরকার হয় যা এখন শ্রীলঙ্কায় নেই।

     

    অর্থাৎ এখন "ডেভেলপিং" বা "ডেভেলপড" দেশগুলোতে এই উপায়ে চাষ করে সকল নাগরিককে খাওয়ানো সম্ভব নয়। উৎপাদন কম হবে। কারণ এখন জনসংখ্যা অনেক বেশি। অতীতে এই পদ্ধতিতে চাষে, পরিবারের লোকজন খেত কেবল, যাকে সাবসিস্টেন্স ফার্মিং বলে। কিন্তু এভাবে বড় দেশের সমস্ত কৃষি উৎপাদন চলতে পারে না বর্তমান সময়েপুরুলিয়ার একটা গ্রামে সামান্য কিছু মানুষ নিজেদের খাবার জন্য জৈব চাষ করে সুফল পাচ্ছে সেটা অবশ্যই ঠিক কিন্তু সেটা দেশ জুড়ে করতে হলে চাই একটা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব। প্রশাসনিক ফতোয়ায় বিপ্লব হয় না।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    পৃথিবীর বাইরেও এই প্রথম কোথাও, কোনও গ্রহে হেলিকপ্টার উড়বে এবং তার নেপথ্যে থাকবে একজন ভারতীয়। 

    বাঁধ দিয়ে সুন্দরবনের সদ্যোজাত নিচু দ্বীপগুলি বাঁচানো সম্ভব নয়, জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই সমাধান

    সুন্দরবনের একটি অতি সাধারণ মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেখানকার স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন একা হাতে।

    জীবনের প্রতিপদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েও সব বাধা জয় করে এগিয়ে চলেছেন অমৃতা ‘ন হন্যতে’ মুখার্জি।

    বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গলে যাচ্ছে কুমেরুর বরফ, বাড়ছে জলস্তর। তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর

    জুজু’র মতো করোনার ভয়কে নস্যাৎ করে বাঙালি বেরিয়ে পড়ছে আবারও ‘অজানারে জানতে’

    জৈব চাষে মাত্রাজ্ঞানই আসল-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested