‘কমলিনী’ বন্ধ হয়ে গেল। সে যে অচল এই যুগে। এতদিনের সঙ্গীকে হারিয়ে প্রজেকশনিস্ট হরি তাঁর সন্তানসম প্রজেক্টরকে ছাড়তে চাইছে না। এ যে বন্ধু বিয়োগের কষ্ট। গল্পটা কৌশিক গাঙ্গুলির সিনেমাওয়ালা ছবির। রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফ যেন এই গল্পের মতোই মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে বর্তমান সময়ে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতা এবং মফঃস্বলের সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো।
উজ্জ্বলা, ভারতী, মিত্রা, রথীন্দ্র। ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গেল স্ক্রিন যেগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার তালিকাটা দীর্ঘ। দক্ষিণ কলকাতার পদ্মশ্রী বিক্রি করে দেওয়ার কথা চলছে ক্রমাগত লোকসানের ফলে। লেকটাউনের মিনি জয়া সিনেমা আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল কোনও অজানা কারণে। বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো বাড়িতে বসে নিজের সময় সুযোগ মতো সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখার সুবিধা করে দিয়েছে। ঝাঁ চকচকে মাল্টি স্ক্রিনগুলো তাও পাল্লা দিচ্ছে ওটিটির সঙ্গে। এখন এদেরই রমরমা বাজার। এই লড়াইয়ে সিঙ্গেল স্ক্রিন যে কতটা অযোগ্য সেটা যেন উপরোক্ত দু’টি জিনিস বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। ছুটির দিনে সিনেমা হলের বাইরে লম্বা লাইন, হাউজফুল বোর্ড সবটাই এখন অতীতের খাতায়। তাই ডিজিটালাইজেশনের যুগে সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো ধুঁকছে রীতিমতো। আর তাতে কফিনের শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে করোনা। একেই সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর যা আসন সংখ্যা তা পরিপূর্ন হয় না বর্তমান সময়ে, তার ওপর গত দেড় বছর ধরে করোনার ভয়, এত বিধিনিষেধ মেনে দর্শকরা হলে আসতেই চাইছেন না। আর ক্রমাগত এত লোকসানের সামনে হল মালিকদের আর সম্ভব হচ্ছে না এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার। ফলে একে একে ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে কলকাতার সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর।
আরও পড়ুন: সিনেমা: শেরশাহ
সিনেমা হলের মালিকেরা হয় এখন হল বেচে দিতে চাইছেন বা ভেঙে ফেলে মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল বানাতে চাইছেন। কিন্তু স্মৃতি? ঐতিহ্য? উত্তরার মতো হল, যার আদি নাম কর্নওয়ালিশ থিয়েটার ছিল, যেখানে প্রথম বাংলার সাদা কালো নির্বাক ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’ দেখানো হয়েছিল, সেই হলকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে শপিং মল বানাতে চাইছেন মালিক জন মান্টোস। প্রশ্ন এখানেই উঠছে, উত্তম সূচিত্রা, বা অতীতের নানা স্মৃতিবিজড়িত হলগুলোকে কি তবে কালের নিয়ম মেনে হারিয়ে যেতে হবে? কোনওভাবেই কি তাদের রক্ষা করা সম্ভব নয়?
দিনশেষে সিনেমা হলও একটি ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসা এবং ঐতিহ্যকে কি একসঙ্গে রক্ষা করা যায় না অ্যাডাপ্টিভ রিইউজ করে, যেমনটা মেট্রো, প্যারাডাইস, অজন্তা করেছে?
চিত্র পরিচালক সুব্রত সেন এই বিষয়ে কী ভাবছেন তা 4thpillarwethepeople-কে একটি জানালেন। তাঁর কথায়, ‘এটা পরিষ্কার যে অনেক আসন সংখ্যা বিশিষ্ট সিঙ্গেল স্ক্রিন হল করে বা চালিয়ে এখন আর লাভ নেই। কারণ আসন সংখ্যার 10 শতাংশও ভর্তি হয় না। তার থেকে 100-150 আসনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন হল তৈরি হলে তাতে তো আপত্তির কিছু নেই। বরং ভাল। কারণ শেষ অবধি এটাও তো একটা ব্যবসা। দিনের পর দিন কেউ লোকসান করে এটা চালিয়ে যেতে চাইবে না। বা সেটা হতেও পারে না। আর কোনও মালিক যদি ভাবেন তিনি তাঁর হল বিক্রি করবেন, সেখানে আমাদেরও কিছু বলার থাকে না। এখন তো কলকাতার প্রায় সব সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে গুটিকয়েক ছাড়া। হ্যাঁ, এটা ঠিক এই হলগুলোর সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে, হলগুলো বন্ধ হলে খারাপ লাগে, তবুও কালের নিয়ম মেনে এগিয়ে যেতে তো হবেই। সেটাই স্বাভাবিক।' প্রায় একই বক্তব্য চিত্রপরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসেরই সময় থাকে। মানুষের সুবিধার জন্য একটা সময় এই প্রেক্ষাগৃহ গুলো তৈরি হয়, বাজারে আসে আবার কাজ ফুরোলে দু-একটা শো-পিসের মতো থেকে যায়, বাকিগুলো হারিয়ে যায়। ঠিক তেমনই ঘটছে সিঙ্গেল স্ক্রিনের সঙ্গে। এখন এক জায়গায় অত লোক যায় না। সেই তুলনায় মাল্টিপ্লেক্সে একসঙ্গে তিন চারটে সিনেমা চলে, মানুষের কাছে বেশি অপশন থাকে, উন্নত মানের সুযোগ সুবিধাও আছে সেখানে। ফলে মানুষ সেখানে যায়। আবার ক’দিন পর মাল্টিপ্লেক্সেরও দিন ফুরোবে, তখন মানুষ ঘরে বসে ফোন, ল্যাপটপে সিনেমা দেখবে। এটাই তো নিয়ম। বদল ঘটবেই।'
আর সেই বদল মেনে একে একে স্মৃতির পাতায় জায়গা করে নিচ্ছে কলকাতা সহ মফঃস্বলের সমস্ত সিঙ্গেল স্ক্রিন। বয়স হলে যে রিটায়ারমেন্ট জরুরি।
আরবান হিট আইল্যান্ড এফেক্টের ফলে ক্রমশ কমবে শীতকাল, বাড়বে গরমের সময় এবং উষ্ণতর হবে রাত।
বর্ষাকালে এখন আর রোজ রোজ বৃষ্টি হয় না, মাঝে মাঝে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়।
পরবর্তীকালে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই হুমকি দিয়ে যায়
সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের পাশেই সংহতি আর মানবতার উজ্জ্বল ছবি বাংলায়।
হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শোনার কেউ নেই?
পার্টির দাদা দিদির সঙ্গে পরিচয় থাকলেই দ্রুত মিলছে করোনার টিকা, বাকিদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর