×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মহানগর এক তপ্ত কড়াই

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 23-08-2021

    প্রতীকী ছবি

    ‘আজ বাইরে বেরিয়ে দেখ না, রোস্ট হয়ে বাড়ি ফিরবি’, বা ‘ছাতাটা সঙ্গে নিয়েছিস তো? বাইরে যা গরম এবার সেদ্ধ হয়ে যাব মনে হচ্ছে।' গরমকালে এ হেন কথাবার্তা আমরা, বিশেষত কলকাতাবাসীরা প্রায়শই শুনে থাকি। এবং মনে করি সঙ্গে ছাতা, জল, সানগ্লাস প্রভৃতি থাকলে বোধহয় গায়ে ফোসকা পড়ার মতো গরম থেকে একটু হলেও নিষ্কৃতি পাব। কিন্তু ক’দিন পর সেটাও আর হবে না। তখন যতই আমরা ছায়ায় থাকি, যতই সঙ্গে জল, ছাতা থাকুক কিচ্ছু হবে না। মৃত্যু অনিবার্য তখন। এবং উপরোক্ত প্রতিটা কথাই সত্যি হবে। না না, এসব আমি বলছি না, বলছে আইপিসিসির রিপোর্ট। এবং বাকি আরও যা বলছে সেই রিপোর্ট, তা রীতিমত শিউরে ওঠার মতো। 

     

    1950 থেকে 2018 এর মধ্যে কলকাতার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 2.6 ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা কিনা একই সময়ে গোটা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যতটা বেড়েছে, তার প্রায় আড়াই গুণতাপমাত্রার বৃদ্ধি পৃথিবার এক এক জায়গায় এক এক রকম। দক্ষিণ গোলার্ধের সমুদ্র তীরবর্তী অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যেমন সেটা 0.21 ডিগ্রি, তেমনই মধ্য এশিয়ার ইরানের তেহরানে তা প্রায় কলকাতার সমান, 2.33 ডিগ্রি সেলসিয়াসগোটা পৃথিবীর গড়ের তুলনায় কলকাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি। এমনতিই গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের তাপমাত্রা বেশি থাকে নানা কারণে, বর্তমানে তা যেন আরও বেড়েছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেটোলজির গবেষক পল্লবী সরকার বলছেন, ‘কলকাতা এখন কংক্রিটের জঙ্গল। গাছপালা কেটে ধ্বংস করে আর কিছুই বাকি নেই। নেই জলাশয়। ফলে সূর্যের যে তাপ এখানে প্রবেশ করছে তা আর বেরোতে পারছে না। থেকে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে হিট আইল্যান্ড। আশপাশের অঞ্চলের তুলনায়, মূলত উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতায় তাপমাত্রা বাড়ছে হুহু করে। এর পাশাপশি অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য বায়ু চলাচল করতে পারছে না ঠিক করে। গঙ্গার বাতাস যদি ঠিক ভাবে চলাচল করতে পারত, তাহলে এতটা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেত না হয়তো। কিন্তু সমস্যা এখানেই তৈরি হয়ে বসে আছে। যেভাবে নগরায়ন হয়েছে তাতে বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।' এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আমরা গরম থেকে মুক্তি পেতে এসি চালাই, কিন্তু তাতে আখেরে পরিবেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসি, রেফ্রিজারেটর থেকে যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে।'

     

    আরও পড়ুন: জলের গ্রহে আগুনের তাণ্ডব

     

    আগামীদিনে শুধু যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে তা নয়, কমবে শীতকালের সময়, এবং পাল্লা দিয়ে বাড়বে গরমের দিন। রাতও হবে উষ্ণতর। অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে ঘনঘন। বৃষ্টি হবে না, হলে ভয়ঙ্কর হবে।

     

    শহরে গ্রামের তুলনায় তাপমাত্রা বাড়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে ধোঁয়াশা। এখানে ধুলোকণার পরিমাণ বেশি, দূষণও বেশি। দুইয়ে মিলে ধোঁয়াশা তৈরি করছে, যা সূর্যের যে তাপ মাটিতে আসছে, তা ফিরে যেতে পারছে না। উল্টে কংক্রিটের জঙ্গল সেটা শুষে নিচ্ছে। তাই গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাপপ্রবাহ। যা আগামী সময়ে আরও বাড়বে।

     

    আইপিসিসির তথ্য অনুযায়ী ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার যদি 35 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তাহলে যতই সতর্কতা নেওয়া হোক যাই করা হোক, মৃত্যু অনিবার্য। হিট স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়বে। এই বছর আমেরিকার উত্তর পশ্চিমের কিছু দেশ তার সাক্ষী থেকেছে। 2015 সালেই ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে যখন ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার 30ডিগ্রি পেরিয়েছিল তখনই প্রায় 4হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। একই ভাবে 2003 সালে ইউরোপে ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার 25 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতেই 50হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল সেখানে। আইপিসিসির তথ্য বলছে 2019 থেকে গোটা বিশ্বে 3লাখের বেশি মৃত্যু ঘটেছে গরম এবং তাপপ্রবাহের কারণে। আগামী দিনে সেই ঘটনা আরও বাড়বে, এবং জীবন দুঃসহ করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার পর সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটবে অতিরিক্ত গরমের কারণেই, এমনটাই দাবি করা হয়েছে আইপিসিসির রিপোর্টে।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    করোনা আবহে ভার্চুয়াল পিকনিকেই ভরসা রাখছে স্কুলগুলি

    ভাষণের দিন শেষ, রাজনৈতিক প্যারোডিই এখন প্রচারের নতুন ভাষা

    আর্বানাইজেশন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারণে দিল্লি তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে

    সুন্দরবনের একটি অতি সাধারণ মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেখানকার স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন একা হাতে।

    বহুদিনের খোঁজের পর অবশেষে মিলল বিকল্প তাপশক্তির উৎস।

    প্রতিবাদের স্বর সরকার বা কর্তাদের কানে পৌঁছতে হলে প্রতিবাদীকে হতে হবে ভাইরাল

    মহানগর এক তপ্ত কড়াই-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested