×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • না পেলেই আত্মহত্যা, না মানলেই বদলা

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 28-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার এবং মঞ্জুষা নিয়োগী, তিনজনেই টলিউডের সিরিয়াল জগতের সঙ্গে জড়িত। এবং তিনজনেই মাত্র কয়েকদিনের তফাতে নিজেদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দু’জনের আত্মহত্যার নেপথ্যে মনে করা হচ্ছে প্রেম ঘটিত কারণ রয়েছে এবং তৃতীয় জন বন্ধুর আত্মহত্যায় মারা যাওয়া মেনে নিতে পারেননি বলেই পরিবারের তরফে জানানো হচ্ছে।

     

    কাজের চাপ তার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেই এই তিন অভিনেত্রী এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন বলেই মনে করা হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে। কোনও সম্পর্ক পরিণতি পেল না, বা কেউ প্রত্যাখ্যান করল বলেই কি আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া যায়?

     

    পরিচালক সুব্রত সেন এই বিষয়ে বলেন, ‘মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল, এখনও পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে এমনটা বলা যায় না, তাই কাজ না থাকার কারণে এক অবসাদ তৈরি হতেই পারে। এছাড়া এই ইন্ডাস্ট্রিতে একটা চাপ তো থাকেই। একটু পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি হলেও এটাই বাস্তবতা যে অভিনেতা অভিনেত্রী মানেই তাঁদের সবসময় সুন্দর দেখতে হতে হবে। পরিপাটি থাকতে হবে। এর ফলে খরচ বাড়ে। সেখান থেকেও একটা চাপ তৈরি হয়। আর অনেকেই সেটা সামলাতে পারেন না।’

     

    তাহলে গ্ল্যামার, চাকচিক্যের পিছনে কি অন্ধকার লুকিয়ে রয়েছে, যে কারণে নিজের খরচ করার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটা দারুন ভাল, ঝাঁ চকচকে লাইফস্টাইল মেনটেন করতে গিয়ে দেনার শিকার হতে হচ্ছে, যেমনটা পল্লবীদের ক্ষেত্রে হয়েছিল? কিংবা প্রায় দু’বছর আগে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে? এবং পরবর্তীকালে সেটাই অবসাদ, হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

     

    মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় এই বিষয়ে বলেন, ‘সিরিয়াল জগতের তিন অভিনেত্রীর বদলে আমাদের তিন সহনাগরিক আত্মহত্যায় মারা গিয়েছে এমনটা ভাবতে হবে। আত্মহত্যার ঘটনা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। এর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। কৃষক, আইটি সেক্টর, আইআইটির ছাত্র বা সমাজের যে কোনও স্তরের যাঁরাই এই চরম পথ বেছে নেন, তাঁদের হতাশা, অবসাদ, ইত্যাদি ছিল বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সেই অনুমান কতটা ঠিক আমরা জানি না। ফলে আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর সঙ্গে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের আলাদা কোনও যোগাযোগ আছে বলে মনে করি না। সবার জীবনেই চাপ থাকে, অনেকেই প্রেমে আঘাত পান, পরীক্ষায় ব্যর্থ হন, কিন্তু সবাই তো আত্মহত্যার পথ বেছে নেন না। যাঁরা বেছে নেন তাঁরা ইম্পালসে করেন সেটা। জীবনযাপন যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে, কোনও পরিস্থিতিকে আর পাল্টানো যাবে না বলে মনে হতে থাকে, তখন নিজেকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার তীব্র ইম্পালস হয়। আর তার বশবর্তী হয়েই অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।’

     

    নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে অনেকে যেমন এই সিদ্ধান্ত নেন, তেমন অনেকেই আবার প্রেমে আঘাত পেয়ে বা প্রত্যাখ্যাত হলে বা পার্টনারের থেকে একই রকম প্রতিক্রিয়া না পেলে ইদানিংকালে আত্মহননের পথ বাছছেন, যেন প্রেমটাই জীবনের এক এবং অদ্বিতীয় বেঁচে থাকার কারণ, ওটাই উদ্দেশ্য। কিন্তু এমনটা কেন?

     

    আরও পড়ুন:কাজের চাপে বাড়ছে অবসাদ

     

    মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ এই বিষয়ে বলেন, ‘বাহ্যিক অভিঘাতের সঙ্গে শরীরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু প্রেরকের ভারসাম্যের বিঘ্ন আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। বিষন্নতা মনের একটি অসুখ। আর আত্মহত্যার নেপথ্যে অনেক সময় বিষন্নতার হাত থাকে।’ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পর পর তিনটি আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পছন্দের কোনও কিছুর প্রতি আমরা যতটা যত্নশীল থাকি, পরিচর্যা করি, অনেক সময় সেটা আমরা আমাদের কাছের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে করি না। সেগুলোকে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হিসেবে নিয়ে নিই। আর ইদানিং তো সম্পর্ক যেন চাইনিজ জিনিসের মতো হয়ে গিয়েছে, টিকল তো চলল বহুদিন, নইলে না চলার আশঙ্কাই প্রবল। এখন সম্পর্কের গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। এছাড়াও আমরা অনেক সময় সম্পর্ককে অতিরিক্ত আগলে রাখতে চাই। এর ফলে তৈরি হয় অতিরিক্ত প্রত্যাশা, অতিনির্ভরতা। যা কখনওই কাম্য নয়। সম্পর্কে প্রত্যাশা থাকবে কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট সীমা ছাড়ালেই সমস্যা। সম্পর্ক তখন অবসেশনের রূপ নেয়। তখন অন্যজনের দমবন্ধ হয়ে আসে সম্পর্কে, সে দূরে যেতে চায়, আর বিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রবল হয়।’

     

    কিন্তু এখন কেন এই সমস্যা বেড়েছে? মোহিত রণদীপ বলেন, ‘আমাদের শৈশব বা কৈশোরে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকত। সেখানে আমরা জেতার পাশাপাশি হার কী করে মেনে নিতে হয় সেটাও শিখতাম। কিন্তু আজকালকার প্রজন্ম না খেলাধুলা করে সেই অর্থে, না তারা হার মানতে শিখেছে। আমাদের শৈশবে সহজে সব পাওয়া যেত না, না পাওয়ার তালিকা ছিল লম্বা। ফলে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মতো সহ্যক্ষমতা ছিল আমাদের। কিন্তু এখন সব কিছু সহজে পেয়ে যাওয়ার ফলে, মনের মতো কিছু না ঘটলেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন অনেকেই। আর তাই সম্পর্কে থাকাকালীন না পাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেন না তাঁরা।’ এমন হলে কী করা উচিত? রণদীপ বাবু বলেন, ‘পেশাদার মনোবিদের কাছে বললে অনেক সময় হালকা হওয়া যায়। স্নায়ুপ্ররকের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ওষুধ দারুন ভূমিকা পালন করে। দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে মনোবিদের সাহায্য নিলে একবার মাত্র পাওয়া জীবনটা সাময়িক কারণের জন্য বরাবরের মতো দিয়ে ফেলার অঘটন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সবটার মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে থাকে সেটা প্রতিরোধ করার সম্ভাব্য কিছু।’


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং অত্যাচারী বসের কারণে অবসাদ হতাশায় ভুগছে অনেকেই

    পৃথিবীর বাইরেও এই প্রথম কোথাও, কোনও গ্রহে হেলিকপ্টার উড়বে এবং তার নেপথ্যে থাকবে একজন ভারতীয়। 

    ওমিক্রন ছড়াচ্ছে, সতর্কতা কই?

    চাঁদের কারণে আগামী দশকে পৃথিবী ভাসতে চলেছে।

    করোনা আবহে ভার্চুয়াল পিকনিকেই ভরসা রাখছে স্কুলগুলি

    প্রায় সারাদিনটাই গল্পের বই পড়াতেই আটকে আছি!

    না পেলেই আত্মহত্যা, না মানলেই বদলা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested