উত্তর কলকাতার দমদমে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি অ্যাভিনিউ। ঠিক যেখানে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির মূর্তিটি আছে, তার পাশে রয়েছে একটি মাঠ, মাঠ পেরিয়ে দেখা যায় একটি বিশাল প্রাচীন বাড়ি। বাড়িটি প্রাচ্য ও জর্জিয়ান নকশার সংমিশ্রণে তৈরি। বাড়িটিকে 2004 সালে জাতীয় সৌধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রবার্ট ক্লাইভ (Robert Clive), যিনি বাংলার প্রথম গর্ভনর জেনারেল হিসেবে পরিচিত এটি তাঁর বাড়ি, পলাশির যুদ্ধের পর থেকে ভারতে এই বাড়িটিই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠে। বর্তমানে ছোট ছোট কয়েকটি ঘর-বাড়ির সমন্বয়ে সৌধটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি পৃথক জগৎ।
এই জগতের সূচনা হয় 1948 থেকে। যশোর রোড সংলগ্ন এই এলাকাটি তৎকালীন সময়ে ছিল একেবারে জনমানবহীন। দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে কুড়ি-পঁচিশটি পরিবার এই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এই বাড়িতে বসেই রবার্ট ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছিলেন। তাঁরই বহু পরবর্তী প্রজন্মের ব্রিটিশ কর্মচারী Cyril Radcliffe-এর পরোক্ষ ভূমিকায় বাড়িটি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জায়গায় পরিণত হয়। 1948 থেকে 1981 পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের একাংশ ওই স্থানে নিজেদের উদ্যোগে বসতি স্থাপন করেন।
নব্বুইয়ের দশকে বাড়িটির একটি অংশ সামান্য ধসে পড়ার কারণে বেশ কিছু পরিবার কলকাতার অন্যত্র চলে যায়, তবে বাকি পরিবারগুলি থেকে যায়। ওই সব পরিবারের সদস্যরা আইনত এখন এ দেশেরই নাগরিক, তাঁদের নির্বাচনে মত প্রকাশের অধিকার আছে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ ভারতের সম্পদ। তবে এত বছর পরেও তাঁদের সঙ্গে অন্য ভারতীয়দের অর্থনৈতিক পার্থক্য রয়ে গিয়েছে। বাড়িটির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে ওঠার কারণে এখন ক্লাইভের বাড়ির একটি দেওয়ালের সঙ্গে আরও দু’টি দেওয়াল জুড়ে তাঁরা নিজেদের একটি অন্য জগৎ তৈরি করেছেন। একটি করে ঘর এবং তাতে চার-পাঁচ জনের পরিবার।
আরও পড়ুন:রেলগাড়ির গল্প, একদিন-প্রতিদিন
ঔপনিবেশিক শাসনের শেষে ব্রিটেন কর্তৃক পৃথিবীব্যাপী যে ক’টি লাইন (সীমান্তরেখা) টানা হয়েছে তার ভয়াবহ পরিণতি এখনও সেই সব দেশকে ভোগ করে যেতে হচ্ছে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ আজকের ক্লাইভ হাউস। Archeological Survey Of India দ্বারা মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে, এই বাড়িটিকে পুনর্নির্মাণ করে একটি মিউজিয়ামে পরিণত করা হবে, তবে তার আগে এখানে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে। বহু বছর পূর্বে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও বিগত দশ বছরে তার কোনও রকম উদ্যোগ আর দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে প্রায় 50 থেকে 70 জন মানুষ এই বাড়িকে ঘিরে বসবাস করছেন। এর মধ্যে তিনটি পরিবার একেবারে ক্লাইভের বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। এখানকারই বাসিন্দা স্বরূপ বসু বললেন, ‘‘শীতকালে আমরা ভাল থাকি তবে বর্ষা এলে দুশ্চিন্তা বাড়ে।’’ ক্লাইভ সম্পর্কে তাঁদের কোনও কৌতূহল নেই। লোকমুখে প্রচলিত কিছু কথা প্রচার হয়ে যেমন এক মৌখিক ইতিহাস গড়ে ওঠে, ক্লাইভ সম্পর্কেও তাঁরা কিছু গালগল্প গড়ে তুলেছেন। যার পুরোটাই ইতিবাচক! তাঁদের পলাশির লুন্ঠন নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই, সত্তরের মন্বন্তরের জন্য যে ক্লাইভকে পরোক্ষ ভাবে দায়ী করা হয় এ সবে তাঁদের বিন্দুমাত্র আগ্ৰহ নেই। তাঁরা শুধু জানেন ক্লাইভ নামে এক ইংরেজের বাড়িতে তাঁরা থাকেন। যে বাড়ি না থাকলে হয়তো আজও তাঁরা শরণার্থী হয়ে থেকে যেতেন।
বাড়িটি যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য সরকারের তরফ থেকে কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ক্লাইভ হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত সঞ্জয় সরকার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘পুনর্নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে তা না জানলেও বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকার যথেষ্ট দায়িত্বশীল।’’ এই দায়িত্বের কারণ যথেষ্ট আছে। বাড়িটির নীচের অংশে কুষাণ ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, বাড়িটি ঐতিহাসিক দিক থেকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যার দরুণ Archeological Survey of India বাড়িটিকে জাতীয় সৌধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সভ্যতা কীভাবে মানুষের পাগলামিকে ব্যবহার করেছে ?
পুরুষতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় নারীদের উচ্চশিক্ষা মানায় না
স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম অনুরাগী ছিলেন
উত্তর কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাড়ি বর্তমানে যা রাষ্ট্রীয় সৌধ হিসেবে পরিচিত তাকে কেন্দ্র করে স্বাধীনত
হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।
সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হন গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা।