×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পাগলামিই সভ্যতাকে ক্রমশ উন্নত করে

    রিম্পা বিশ্বাস | 09-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    ‘পাগলামি হল সেটাই যা তথাকথিত সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অস্বাভাবিক’, মনোরোগ নিয়ে এটি সবচেয়ে পুরোনো একটি মতবাদ। এই মতবাদের জনক মিশেল ফুকো (Michel Foucault) তাঁর Madness and Civilization গ্রন্থে সেকালের এমন কিছু চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেন যা বর্তমান সমাজের কাছে প্রতিবিম্ব হিসেবে কাজ করে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে কোনটা অস্বাভাবিক সেটা ঠিক অন্য একদল মানুষ। কোভিডে মানুষের জীবন এরকম অনেক অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছে। প্রকট হয়েছে মানসিক রোগ। বলা যায় মনেরও যে রোগ হয় এই বিষয়টি কোভিডে অনেক মানুষের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে, গুরুত্ব পেয়েছে সরকারের কাছেও।  

     

     

    সেই কারণে এই বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে (Union Budget) প্রথম মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হল। বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ন্যাশান্যাল টেলি মেন্টাল হেলথ নামে একটি প্রকল্পের কথা বলা হয়। এই  প্রকল্পে থাকবে তেইশটি মেন্টাল হেলথ সেন্টার। ব্যাঙ্গালোরের নিমহানস (National Institute Of Mental Health and Neuro Science)-র সঙ্গে এই হেলথ সেন্টারগুলির সংযোগ থাকবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ফোনকলের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে বলে বাজেট অধিবেশনে জানান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মানসিক স্বাস্থ্যে সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে যে বিষয়টি ভাবাচ্ছে তা হল টেলি কাউন্সিলিং (Tele Counseling)মানসিক রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসক বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। অনেকের আশঙ্কা, টেলি কাউন্সিলিং এরকম একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে মানুষ আবার গিনিপিগে পরিণত হবে আর শাসক হবে লাভবান। এই প্রসঙ্গেই আসে মিশেল ফুকোর সভ্যতা ও পাগলামির তত্ত্ব। 

     

    আরও পড়ুন:কার স্বাস্থ্যের কীসের সাথী?

     

    ফুকো প্রথম যুক্তিসঙ্গতভাবে সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে পাগলামির সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সভ্যতাকে তিনি দেখেছেন একধরনের পাগলামি হিসেবে। অর্থাৎ মানুষ যত বেশি পাগল হয়েছে সভ্যতা তত বেশি আধুনিক হয়েছে। সভ্যতার মানুষের পাগলামিকে ব্যবহার করার একটি ধারাবাহিকতা আছে। অতীতে কুষ্ঠরোগী, পাগল এবং অপরাধীদের সমাজের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হত। সমাজের কোনও কাজে আসবে না এই কারণে শাসকেরা পাগলদের দ্বীপান্তরে পাঠিয়ে দিত। এরপর রেনেসাঁ যুগে সমাজে পাগলদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ধীরে ধীরে পাগলা গারদ তৈরির বিষয়টি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নির্বাচনের বিষয় হয়ে ওঠে। রেনেসাঁ পরবর্তী যুগে খেত খামারের সংখ্যা বাড়লে লোকবলের প্রয়োজনও বাড়ে। এখানে থেকেই সমাজে পাগলা গারদের বাড় বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল। সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এমন ব্যক্তি, ব্যক্তিগত শত্রু, বিরোধী দলের সদস্য এদের সকলকে দিয়ে ভর্তি করা হল পাগলা গারদ।এরপর বিনা বেতনে তাদেরকে খেত খামারে খাটানো হল। সভ্যতার অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে পাগলদের বেগার খাটানোর বিষয়টি ফুকোই সর্বপ্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। ফুকোর কাছে এটাও সভ্যতার এক ধরনের পাগলামি। 

     

     

    মানসিক স্বাস্থ্যকে টেলি কাউন্সিলিং এর সঙ্গে যুক্ত করাকেও সভ্যতার এক নতুন ধরনের পাগলামি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। অসুখ হবে বলে বছরের পর বছর ধরে মানুষদের ঘর বন্দী করে রাখা কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। ঘর বন্দী থাকার কারণে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা গিয়েছে। এর সমাধান হিসেবে মানুষকে যতটা সম্ভব কোভিড পূর্ব জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। শারীরিক দূরত্বের পরিবর্তে সামাজিক দূরত্বের দ্বারা মানুষের কাছ থেকে সমাজকেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্নতার ফলে দেখা দিয়েছে মানসিক বিভিন্ন সমস্যা। এখন এই সমস্যার সমাধানও হবে দূরত্ব বজায় রেখে। 

    আরও পড়ুন :নরকের নাম হাসপাতাল

     

    বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ মোট অর্থের কতটা মানসিক চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা হবে এ বিষয়েও কোনও সঠিক তথ্য এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়নি। দৈহিক চিকিৎসার মতো মানসিক চিকিৎসায়ও একইভাবে চিকিৎসক ও রোগীর পারস্পরিক সম্পর্কটি গুরুত্বপূর্ণ। টেলি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এই সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন না করে মানসিক চিকিৎসায় টেলি কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থাকে শাসক দলের একটি প্রোপাগান্ডা বলে মনে করছেন মনসমাজকর্মী মোহিত রনদীপ। তাঁর ধারণা, "টেলি কাউন্সিলিং এ রোগীর সমস্যা না মিটলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার সমস্যা মিটবে।' এটি একটি সম্ভাবনা হলেও বর্তমান শাসক দলের কর্পোরেট প্রীতির কারণে যে কোনও সময়ে তা বাস্তব হতে পারে। ভারতের মতো দেশে সরকারি ভাবে টেলি কাউন্সিলিং কে মান্যতা দেওয়া ভবিষ্যতে মানসিক চিকিৎসাকে জনসাধারণের কাছে সাধারণ ও আবশ্যক করে তুলবে।


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    খাদ্যের অতিরিক্ত সংরক্ষণ এবং তার ব্যবহারের কারণে মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীও অসুস্থ।

    একুশ যেভাবে ভাবতে শেখায়...

    নিম্ন মানের কৃষি বীজ এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বাজার দেশে প্রাকৃতিক চাষের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

    উত্তর কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাড়ি বর্তমানে যা রাষ্ট্রীয় সৌধ হিসেবে পরিচিত তাকে কেন্দ্র করে স্বাধীনত

    গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার সপরেও বেঁচে ফিরে রফিজা নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে মেয়েকে ঘিরে। 

    সভ্যতা কীভাবে মানুষের পাগলামিকে ব্যবহার করেছে ?

    পাগলামিই সভ্যতাকে ক্রমশ উন্নত করে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested