×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সরকারি চাকরির পরীক্ষা? গ্রাম এখনও বৈষম্যের শিকার

    রিম্পা বিশ্বাস | 23-12-2021

    প্রতীকী ছবি।

    সরকারি চাকরির (government jobs) চাহিদা কেমন তা কমবেশি আমাদের সবার জানা। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে এখনও দেশের 82 শতাংশের বেশি ছেলেমেয়ে কারিগরি শিক্ষা (technical education) গ্ৰহণ করতে পারে না। এই ছেলেমেয়েরা কোনও রকমে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর থেকে শুরু করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। গত বছর থেকে এই বছর, অর্থাৎ কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলি আমাদের সামনে দেশের পরিকাঠামোগত বৈষম্যের চিত্রই তুলে ধরছে। যে বৈষম্যের শিকার হন মূলত গ্রামীণ বা মফ:স্বল এলাকায় বসবাসকারী সরকারি চাকরির পদপ্রার্থীরা।

     

     

    আপনি বাজারে যেখানেই বিনিয়োগ করুন না কেন সেখান থেকে নিশ্চয়ই ফেরত আশা করবেন। বস্তু বা পণ্যের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি ফেরত পাওয়া যায় বা আশা করা হয় শিক্ষার ক্ষেত্রে তা আশা করা যায় না বা পাওয়া যায় নাকারণ শিক্ষায় স্বল্পমেয়াদি ফলাফলের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক জন সরকারি চাকরির পরীক্ষার্থী সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করেন, অপেক্ষা করে থাকেন সেই কাঙ্খিত দিনের। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে যখন যান চলাচল একেবারে অস্বাভাবিক তখন এই পরীক্ষার্থীদের দুরবস্থার কথা এক বার ভেবে দেখেছেন?

     

     

    নদিয়া অথবা সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দা, যাঁকে চাকরির পরীক্ষা দিতে কলকাতায় আসতে হয়, এই কোভিড পরিস্থিতিতে কী ভয়াবহ দুর্দশা হয় তাঁর! পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূরে বসবাস করা ছেলেমেয়েদের সেন্টারে রিপোর্টিং টাইম সকাল সাড়ে 7টা-8টা। এই অযৌক্তিক ব্যবস্থাকে বাস্তব করতে তাঁদের আগের দিন রাতে কলকাতায় পাড়ি জমাতে হয়, থাকতে হয় কোনও চেনাপরিচিতের বাড়ি অথবা স্টেশনে। যেমন, সুন্দরবনের মৌসুনি গ্রামের বাসিন্দা গুরুপদ দাসের কথাই ধরা যাক। গত নভেম্বরে হয়ে যাওয়া ইউজিসি-র পরীক্ষা দিতে তাঁকে কলকাতার নিউটাউনে আসতে হয়েছিল। রিপোর্টিং টাইম সকাল 8টায় হওয়ায় তাঁকে আগের দিন কলকাতায় আসতে হয় এবং শিয়ালদহে তাঁর এক বন্ধুর মেসে থাকতে হয়।

     

    অথবা নদিয়ার বাসিন্দা প্রীতম বিশ্বাসের কথা বলা যাক। গত সেপ্টেম্বরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে তাঁকে মধ্যমগ্রাম আসতে হয়। সেই সময় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় তাঁকে রীতিমতো গাড়ি ভাড়া করে 100 কিমি পথ পাড়ি দিতে হয়।

     

    আর মেয়েদের ক্ষেত্রে? গ্রাম, মফস্বলের না জানি কত মেয়ের কোভিড পরিস্থিতিতে পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানে শহরে এসে পরীক্ষা দেওয়া সমাজের চোখে বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নয়। বৈষম্যের শ্রেণিবিভাগ আর কি!

     

     আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের গবেষণাগারে হিন্দুত্ববাদের চাষ

     

    পশ্চিমবঙ্গে, এমনকি দেশের যে কোনও রাজ্যে সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষার সেন্টারগুলি হয় শহরাঞ্চলে, কারণ কেন্দ্রের যে কোনও চাকরির পরীক্ষা বর্তমানে কম্পিউটার নির্ভর হয়, এতে পরীক্ষার্থীদের সুবিধাই হয়ে থাকে। তবে সমস্যা হল এই সব সেন্টার নিয়ে। প্রযুক্তিনির্ভর যে ক’টি আইটি ল্যাব আছে তার সবক’টিই শহরে অবস্থিত। এই কারণে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দিতে শহরে আসতেই হয়।

     

    শহর ও গ্রামে আয়ের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য দেখা যায় সেই একই বৈষম্য দেখা যায় শিক্ষাক্ষেত্রে। এক জন শহরবাসীর কাছে শিক্ষা বিষয়টি যতটা সহজলভ্য, এক জন গ্রামবাসীর কাছে শিক্ষা ততটাই দুর্লভ। পাহাড় সমান বাধা কাটিয়ে গ্রামের একটি ছেলে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর শুরু হয় তার আরও একটি লড়াই। কোভিডের আগে যখন সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলি হত তখন পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে ভোর থেকে দেখা যেত ছেলেমেয়েদের। সতর্কতা অবলম্বনের কারণে কোভিড পরিস্থিতিতে এই দৃশ্য আর দেখা যায় না ঠিকই, তবে পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষা করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরের নিয়ম আবার আরও করুণ। নিজস্ব জলের বোতল সেন্টারের ভেতর নিয়ে যাওয়া যায় না, এক ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে আরও তিন ঘণ্টা অনাহারে কাটাতে হয়।

     

    একটি পরীক্ষা, যার উপর কার্যত গোটা ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেই পরীক্ষা দিতে গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের এতটা বৈষম্যের শিকার হতে হয় শুধুমাত্র পরিকাঠামোগত ত্রুটির কারণে। এই বৈষম্যের প্রতিকার কবে হবে জানা নেই, তবে যত দিন তা না হচ্ছে তত দিন আর যাই হোক, দেশে নতুন করে মধুসূদন ও বিদ্যাসাগরদের আর দেখা যাবে না।

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    দেশে আসলে চলছে ধনকুবেরদের শাসন প্লুটোক্র্যাসি, মোদী-শাহরা নাটকের চরিত্র মাত্র

    হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।

    স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম অনুরাগী ছিলেন

    নিম্ন মানের কৃষি বীজ এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বাজার দেশে প্রাকৃতিক চাষের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

    সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হন গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা।

    দেশের মহানগরগুলিতে নারী সুরক্ষার জন্য গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকায় শহরে শুধুমাত্র আলো দেখা যায়।

    সরকারি চাকরির পরীক্ষা? গ্রাম এখনও বৈষম্যের শিকার-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested