×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সোশাল রাজ্যে পৃথিবী মিথ্যাময়

    বিতান ঘোষ | 02-05-2020

    প্রতীকী ছবি

    করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে নেমে আসলে দু'টো মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে। অপর মহামারীটি হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যাকে ইনফোডেমিক' বা মিথ্যা তথ্যের মহামারী' বলে অভিহিত করছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, ফেক নিউজের বাড়বাড়ন্তে এই দুঃসময়েও সত্য-মিথ্যার গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে আমাদের।

     

     

    মিথ্যার সঙ্গে একপ্রকার আপস করে নেওয়ার প্রশ্নে, সংবাদমাধ্যমের একাংশ ইতিমধ্যেই নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু দেশের সোশাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে মূলত যে দুটি সংস্থা, সেই ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ (বর্তমানে এটিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন) গণসংযোগের মাধ্যম (Mass Media) হিসেবে তাদের দায়িত্ব কি যথার্থভাবে পালন করছে? এর আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তির সমর্থনে মিথ্যা ও বিকৃত প্রচার চালানোর অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। গত 21 অক্টোবর ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকায় জনৈক সাংবাদিক জুলিয়া ক্যারি ওয়াং একটি প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে রাশিয়া এবং ইরানের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য ফেসবুককে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়। সেই প্রতিবেদনে দেখানো হয় কীভাবে নকল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এইভাবেই ফেসবুক তার ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের স্বার্থ সুরক্ষিত করছে। এই কাজে সে তার বিশ্বজোড়া প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যার চাষ করছে।

     

     

    আমাদের দেশে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তৈরি করার জন্য পেশাদার নিয়োগ করা হচ্ছে এবং ফেসবুকের সাহায্যেই সেই সব মিথ্যাকে আমার আপনার ড্রয়িং রুমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনব্যবস্থা বটে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের চাপে সংখ্যালঘুর স্বর যেন অবদমিত না হয়, সেটা দেখাও গণতন্ত্রের পাহারাদারদের অন্যতম এক কর্তব্য। ফেসবুকে বিরুদ্ধ ও অপ্রিয় কোনও মত ভেসে উঠলেই, ‘সংগঠিত' পক্ষ থেকে পালা করে সেখানে রিপোর্ট করা হচ্ছে। শুধু সংখ্যার দাপটে সাদামাটা লেখাকেও ফেসবুক তার কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরোধী বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠছে। অথচ সেই সংগঠিত' পক্ষের মিথ্যা প্রচারের বিষয়ে ফেসবুক নীরব। কারণ, সংঘবদ্ধ ভাবে তাদের আপত্তিকর পোস্টগুলির প্রতি প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, সত্য-মিথ্যা কিংবা সাদা-কালোকে মেপে নেওয়ার যে মাপকাঠিটা ব্যবহার করছে তাতে সমস্যার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি, মূল বক্তব্যের সমর্থক সংখ্যা-নিরপেক্ষ গুণাগুণ (merit) যাচাইয়ের গুরুত্ব অনেক কম। সংঘবদ্ধ ভাবে সংখ্যালঘু স্বরের টুঁটি টিপে ধরলে ফেসবুক অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই সংখ্যাগুরুর পাশে এসে দাঁড়াবে। সম্প্রতি কলকাতার এক যুবক মুসোলিনিকে মাস মার্ডারার' বলে 7 দিনের জন্য ব্লকড্ হয়েছে। সত্যজিৎ এই সময়ে সোনার কেল্লা' বানালে নিশ্চয়ই সংলাপটা কিঞ্চিৎ বদলে দিয়ে এভাবে সাজাতেন, "ভবানন্দের চ্যালা তোমার কী শাস্তি হবে জানো? 7 দিনের ফেসবুক ব্লক আর 3 মাসের অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভেশন!

     

     

    ফেসবুক সহ সমস্ত সোশাল মিডিয়া তার নিজ নিজ অ্যালগোরিদম মেনে কাজ করে। অর্থাৎ, আমরা যা দেখতে চাই, দেখতে পছন্দ করি, ফেসবুক আমাদের সেইটুকুই দেখায়। তাই নিজেদের অজান্তেই আমরা এমন একটা ক্ষুদ্র ভার্চুয়াল ভুবন বানিয়ে ফেলি যে, সেটাকেই সারসত্য বলে ভ্রম হয়। সেই জগতে আমরা এতটাই মগ্ন থাকি, বাকি জগৎটাকে আমরা দেখতে চাই না। সমাজের বিশিষ্ট মানুষরাও যেরকম ণত্ব-ষত্ব বিচার না করেই ফেসবুকে মিথ্যা খবর ছড়ান, তাতে সমাজ জীবনে বড় ক্ষতি হয়ে যায়। কেননা, তাদের একটা বক্তব্য জনমানসে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। আবার হোয়াটসঅ্যাপেও কোনওরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই, হরেকরকম মেসেজ পাঠিয়ে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করা হয়। একটু ময়নাতদন্তে গেলে দেখা যায়, একই ভুল বানান ও বক্তব্যের মেসেজগুলি পেশাদারি কায়দায়, ঝড়ের বেগে শেয়ার হতে থাকে। বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের চটকদার শিরোনামের সঙ্গে ভিতরের লেখার কোনও তালমিল পাওয়া যায় না। অথচ ততক্ষণে সেই লেখার শিরোনাম আমার আপনার ফেসবুক দেওয়ালে শোভাবর্ধন করতে শুরু করেছে।

     

     

    সমাজে কিছু মানুষ মিথ্যাচারকে আশ্রয় করে আপন ভাগ্য গড়ে তুলবেন, ইতিহাসে এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সত্যাশ্রয়ী বিবেকবান কিছু মানুষ রুখে দাঁড়বেন, এটাও ইতিহাসেরই শিক্ষা। প্রযুক্তির কল্যাণে যেমন বলদর্পী শাসকের হাতে মানুষকে প্রভাবিত করার অনেক হাতিয়ার, তেমনই প্রযুক্তির সুবাদেই একক ব্যক্তিও এখন নিজের মত প্রচারে অনেক শক্তিধর। সেই একক ব্যক্তিও ফেসবুকের মতে অতি বৃহৎ বাণিজ্যিক উদ্যোগের উপভোক্তা। তার স্বার্থ কেন উপেক্ষিত হবে?

     

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    তোমার শিল্প নেই, সংস্কৃতিও ঘুচতে বসেছে, ভদ্রজন, তাই কি তোমার এই কৌলীন্য রাখার দায়?

    বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র জয়ে প্রমাণ হল শাসক দলে ভিড়লে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হওয়া যায়!

    বুকের মাঝে আস্ত একটা দেশকে যারা লালন করতে ব্যর্থ, তারাই ভাগাভাগির কথা বলে।

    তালিবানি মৌলবাদের রোগ পালটা মৌলবাদী দাওয়াইতে সারবে না, এটা দেশের রাজনৈতিক তালেবরদের বুঝতে হবে।

    প্রকারান্তরে, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের মতো রাজ্যের দুই-ভাষা নীতিতেই সিলমোহর দিল কেন্দ্র।

    গত ভোটে মরুরাজ্যে যাও বা মরূদ্যানের দেখা মিলেছিল, সেটাও বোধহয় মরীচিকা হয়ে মিলিয়ে যেতে চলেছে।

    সোশাল রাজ্যে পৃথিবী মিথ্যাময়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested