×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় হিট!

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 08-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    ঘড়ির কাঁটা বলছে পৌনে এগারোটা। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (Kolkata Municipal Corporation) 119 নম্বর ওয়ার্ডের কেএফআর মাঠের মূল ফটক দিয়ে প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের বাচ্চাদের হাত ধরে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেল। দৃশ্যটা ছোটবেলার স্পোর্টস ডের কথা মনে করিয়ে দিল নিমেষেই

     

    বাড়ির পাশেই বেহালা গার্লস হাই স্কুল। মহামারীর (Covid-19) আগে মর্নিং এবং ডে শিফটের সময় বাচ্চা গার্জেনদের গল্প, কথায় পাড়া মুখর হয়ে থাকত। টিফিন টাইমে চিৎকার ভেসে আসত স্কুল থেকে। ইদানিং কোনও সরকারি পরীক্ষার সিট পড়লেই সেই পুরনো স্মৃতি ফিরত, তা-ও ক্ষণিকের জন্য। কিন্তু কাল যেন আবার সেই চেনা ছবি, আমেজটা ফিরে পেলাম। বাচ্চারা বাবা মায়েদের হাত ধরে স্কুলে আসছে আবারও। ওহ! স্কুলে নয়, স্কুলের কাছের মাঠে। কাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় (Paray Paray Shikkhalay) শুরু হল। 

     

    119 নম্বর ওয়ার্ডের পৌরমাতা বাচ্চাদের কেক, বিস্কুট দিচ্ছেন

     

    বেহালার গার্লস স্কুলের ইনফ্যান্ট এবং ক্লাস ফাইভের ক্লাস ছিল প্রথম দিন। বাচ্চারা লাইন করে এসে হাত স্যানিটাইাজ করে এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে আগে থেকে পেতে রাখা শতরঞ্চিতে বসে পড়ে। তারপর এগারোটা বাজতেই শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। তারপর প্রধান শিক্ষক মলয় চৌধুরী বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে আমরা এভাবেই ক্লাস করব। বন্ধুদের সঙ্গে মিশব। আন্টিদের সঙ্গে কথা বলব, তাদের থেকে পড়া বুঝব। কেমন?' বাচ্চারাও সমস্বরে হ্যাঁ বলে ওঠে। ঠিক যেন সেই চেনা ক্লাসরুমের পরিবেশ। শুধু জায়গাটা বদলে গিয়েছে। 

     

    গাছতলাকেই দেওয়া হয়েছে ক্লাসরুমের আকার

     

    শুরু হয় ক্লাস। পঠন পাঠন। এরই মাঝে কাউন্সিলর কাকলি বাগ পরিদর্শন করে যান। কিন্তু খোলা মাঠ, পাশ দিয়ে স্থানীয়রা যাতায়াত করছে, বাচ্চাদের অসুবিধা হবে না? এই প্রশ্নে মলয় বাবু জানান, "না। আমাদের টিচাররা বাচ্চাদের ঘিরে রাখবে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব যাতে ওদের মনসংযোগ নষ্ট না হয়। দেখুন না আজই 86 শতাংশ ছাত্র ছাত্রী (ক্লাস 5 অবধি এই স্কুলে ছাত্ররাও পড়ে) উপস্থিত আছে। অর্থাৎ বাবা মায়েরা বিষয়টা সানন্দে গ্রহণ করেছে। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে এই 86 শতাংশকে 100 করা যায়। তাই তো আজ মিড ডে মিলে ওদের পছন্দের ফ্রায়েড রাইস আর আলুর দম আছে। রোজই নিত্য নতুন জিনিস থাকবে। বাচ্চাদের বাড়ি থেকে টিফিন বক্স আর চামচ আনতে বলা হয়েছে। এখান থেকে স্কুলে গিয়ে খেয়ে তারপর বাড়ি যাবে। বলেই তদারকিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ নজর রেখে চলেছেন তিনি। সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষিকাদের নির্দেশ দিচ্ছেন সমানে কী করতে হবে না হবে। 

     

    অপেক্ষমান

     

    প্রায় একই ছবি ধরা পড়ল 82 নম্বর ওয়ার্ডের চেতলা অগ্রণী মাঠে। যদিও সেখানে এক প্রকার মেলা বসে গিয়েছিল। একসঙ্গে নয়টা স্কুলের ক্লাস চলছে সেখানে। আলাদা আলাদা ছাউনি করে টেবিল চেয়ার পেতে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা ছাউনিতে স্কুলের নাম লেখা রয়েছে। ক্লাস চলছে। শিক্ষিকারা কেউ রোল কল করছেন। তো কেউ বোর্ডে এঁকে, লিখে অঙ্ক কষছেন। বাচ্চারা মনোযোগ দিয়ে তা দেখছে, শিখছে, পড়ছে। 

     

    স্যার ক্লাস নিচ্ছেন

     

    চেতলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সত্যবতী নাথকার জানান, "9টা স্কুলের ক্লাস চলছে। প্রতিটা স্কুলের 30-40জন ছাত্র ছাত্রী থাকতে পারবে একটা ক্লাসে। নইলে ভিড় হবে, সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। তাই রোটেশন পদ্ধতিতে বাচ্চাদের আনা হবে। দু'বছর বাচ্চারা স্কুলে আসতে পারেনি, ফলে ওদের স্কুলের প্রতি যে টান সেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এই পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়ের মাধ্যমে সেটা আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।' কিন্তু পাড়ার মাঠে ক্লাস করানো গেলে স্কুলে নয় কেন? চেতলা বয়েজের প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা দত্ত জানান, "বদ্ধ ঘরে ক্লাস করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। আর ওরা তো এতদিন চার দেওয়ালেই বন্দি ছিল, তাই একটু অন্যরকম পরিবেশ পেলে ওদের আগ্রহ বাড়বে। উৎসাহ পাবে অনেক বেশি।' একদম যেন বিশ্বকবির বলে যাওয়া বা ভাবনার শান্তিনিকেতন

     

    পাশাপাশি ক্লাস চলছে 9টি  স্কুলের

     

    হইহই করে গোটা মাঠ জুড়ে তখন ক্লাস চলছে। কোথাও অঙ্ক ক্লাস, তো কোথাও বিজ্ঞান। কেউ আবার মন দিয়ে বাংলা পড়ছে। কৈলাশ বিদ্যামন্দিরের দুই খুদে সাইকেল নিয়ে মাঠে প্রবেশ করছিল হাসিমুখে। তাদের একজনকে প্রশ্ন করতেই জানাল, "আমার নাম সুজয় সরকার। ফাইভে পড়ি। এতদিন পর স্কুলে আসতে পেরে দারুন লাগছে।' কিন্তু তার পরনে স্কুল ইউনিফর্ম নয়, অন্য সাধারণ জামা। প্রশ্ন করতেই লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, ‘নতুন জামা পাইনি তো। পুরনো জামা ছোট হয়ে গেছে। তাই এটা পরে এলাম। সুজয় একা নয়, অনেকের গায়েই স্কুল ড্রেস দেখা গেল না। কারণটা যদিও সবারই এক। তবে সরকারের তরফে জানানো হল এপ্রিল মাসে সবাই নতুন পোশাক পাবে। 

     

    পিটি ক্লাল চলছে

     

    বেহালা চেতলা, দক্ষিণ কলকাতার দুই জায়গার পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়ের ছবি দেখে বোঝা গেল মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনা দুয়ারে সরকারের মতোই মানুষ দারুন ভাবে গ্রহন করেছে। বাচ্চারাও এতদিন পর স্কুলে ফিরে দারুন আনন্দিত। মাস্ক মুখে সবাই মন দিয়ে ক্লাস করছে। যদিও হিসেব করলে বা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রতিটা ক্লাস সপ্তাহে দু ঘণ্টা করে ক্লাস পাচ্ছে, যেটা অনেকটাই কম সময়। তবুও মুঠোফোনে নির্বাক চেয়ে থাকার থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে ক্লাস করা, ইন্টারঅ্যাকশন করা অনেক বেশি জরুরি। তাদের অন্য ভাবে সাহায্য করবে। ঠিক যেটা 119 নম্বর ওয়ার্ডেরকাউন্সিলর কাকলি বাগের কথায় উঠে এল। তিনি 4thpillarwethepeople-কে বললেন, "আমরা বাচ্চাদের সামগ্রিক বিকাশের কথা মাথায় রাখছি  এই খোলামেলা পরিবেশে মনের বিকাশ ঘটবে। শুধুই তো পড়াশোনা নয়, নাচ, গান, খেলা এগুলোও জরুরি। ফলে সবটা মিলিয়েই আমরা বাচ্চাদের একটা সুস্থ পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করছি। ওদের প্রোটেকশনের দায়িত্ব সরকারের।' কিন্তু সব বাচ্চা কি আদৌ স্কুলে ফিরবে? এই বিষয়ে চেতলা গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা সত্যবতী নাথকার বলেন, "জোর নেই। যাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের স্বইচ্ছায় পাঠাবেন সেই বাচ্চারাই ক্লাস করবে। কিন্তু স্কুল বিশেষভাবে নজর রাখছে এবং রাখবে যাতে সমস্ত কোভিড বিধি মানা হয়, সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকে।'

     

    আরও পড়ুন:চন্দ্রমুখীর সন্ধানে হিমালয়ের কোলে

     

    ফলে আজ সকালের ছবি দেখে এটা স্পষ্ট বাচ্চা থেকে বাবা মায়েরা সবাই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল যেন। পাঠশালা আবারও খুলল যদিও অন্য ভাবে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন থেকে গেল। সরকারি স্কুলের তো ব্যবস্থা হল বেসরকারি স্কুলের নার্সারি থেকে ক্লাস সেভেনের বাচ্চাদের কী হবে? তারা কি এখনও গৃহবন্দি থাকবে? কিছু হাতে গোনা বেসরকারি স্কুল একই পন্থা অবলম্বন করলেও বাকিরা কী করবে? তার নির্দেশিকা কই? কে দেবে? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    এক মহিলার রাজ্যেই অন্য মেয়েরাই নিরাপদ নয়, কারণ তিনি ধর্ষণের অজুহাত দিতে ব্যস্ত! 

    যে জৈব চাষ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ, তারই মাত্রাজ্ঞানহীন অপরিকল্পিত প্রয়োগে

    এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে

    শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অবদান কমছে ভারতে

    ডেভিড এবং তাঁর স্ত্রী মানুষ করে চলেছেন ২২০জন সন্তানকে, আগলে রেখেছেন ওদের সস্নেহে।

    ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের নাচ দেখিয়ে রাম নবমী পালন

    পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় হিট!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested