পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি বাজারে বড় রকম প্রভাব ফেলতে চলেছে। সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, অক্টোবর মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। এর ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ ক্রেতাদের। পণ্যের দাম বাড়ালে তার প্রভাব ক্রেতাদের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। কিন্তু পণ্যদ্রব্যের দাম কমলে তার প্রভাব বাজারে প্রভাব ফেলতে কম করে 15 থেকে 20 দিন সময় নেয়। দাম বাড়লেও সেই একই অবস্থা হয়। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। যার ফলে পাইকারি বা খুচরো পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে বা কমলে তার প্রভাব বাজারে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের বাজারটা বেশির ভাগ সময়ই ঊর্ধ্বগামী। তাই দাম হ্রাসের ঘোষণার পর তা কার্যকর হতে হতে আবারও দাম বেড়ে যায়।
যার ফলে সব সময় সাধারণ ক্রেতারা দাম হ্রাসের প্রভাব ততটা দীর্ঘ সময় ধরে ভোগ করতে পারেন না, যতটা সময় ধরে দাম বৃদ্ধির প্রভাব ভোগ করতে হয়।
অর্থনীতিবিদ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অজিতাভ রায়চৌধুরী এই বিষয়ে একটি সরল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়: ‘‘পণ্যদ্রব্যের দাম কমলে তা কার্যকর হতে 15 থেকে 20 দিন সময় লাগে, কারণ বেশি দামের পণ্য আগে থেকেই বাজারে বিক্রির জন্য মজুত হয়ে থাকে। দেখা যায়, আমরা যে খুচরো বা পাইকারি বাজার থেকে জিনিস কিনি সেই এফএমসিজি পণ্যের প্যাকেটে উৎপাদনের যে দিনক্ষণ লেখা থাকে সেটা সাধারণত এক মাস আগের। তাই সেই পণ্য বাজার থেকে বিক্রি হয়ে যেতে স্বাভাবিক কারণেই সময় লাগে। তাই দাম হ্রাসের প্রভাব ক্রেতাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে 15 থেকে 20 দিন সময় লেগে যায়। আর এই সময়সীমার মধ্যে যদি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জিনিসের দাম ওঠানামা করে তা হলে দাম কমার যে প্রভাব, সেটা সাধারণ ক্রেতা বা উপভোক্তারা পান না।”
আমরা যদি একটু পিছন দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাব দামবৃদ্ধি কতটা বাজারকে প্রভাবিত করেছে। পাইকারি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির শতকরা হার সেই অর্থে কমেনি বললেই চলে।
মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংসের তথ্য অনুসারে —
• ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 4.17 শতাংশ
• মার্চে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 7.39 শতাংশ।
• এপ্রিলে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 10.14 শতাংশ।
• মে মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 13.11 শতাংশ।
• জুনে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 12.07 শতাংশ।
• জুলাইয়ে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 11.16 শতাংশ।
• অগস্টে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 11.39 শতাংশ।
• সেপ্টেম্বরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 10.66 শতাংশ।
• অক্টোবরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 12.54 শতাংশ।
অক্টোবরে খুচরো বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে 4.48 শতাংশ।
পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির ফলে যে সমস্ত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কারখানার তৈরি জিনিস 12.04 শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ 37.12 শতাংশ, অপরিশোধিত তেল 80.57 শতাংশ, খাদ্যদ্রব্য 1.69 শতাংশ।
এ ছাড়াও কারখানায় তৈরি জিনিস, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, অপরিশোধিত তেল, সব কিছুরই এই 9 মাস ধরে টানা দাম বেড়েছে। গত একমাসে এই বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
এই মূল্যবৃদ্ধির আঁচ সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। মানুষের সাধ্যের বাইরে গিয়েছে পছন্দের ও নিত্যকার দ্রব্য কেনা। এই পরিস্থিতিতে ভুগবেন সাধারণ মানুষ, এমনটাই জানিয়েছেন অজিতাভ রায়চৌধুরী। তাঁর মতে এই যখন বাজারের অবস্থা, তখন পেট্রলের দামে 5 টাকা ও ডিজেলের দামে 10 টাকা উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের প্রভাব খুব কমই পড়বে সাধারণ ক্রেতাদের উপর।
তবে কারও মতে, কেন্দ্র আরও আগে পেট্রল, ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক কমালে হয়তো মূল্যবৃদ্ধি এই জায়গায় যেত না। কারণ জ্বালানির দামবৃদ্ধির ফলে পরিবহণ খরচ বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। এর ফলে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে এক দিকে যেমন শিল্পোৎপাদন বিপর্যস্ত হয়েছে তেমনই আবার দাম বেড়েছে শাকসব্জি, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, নুনের মতো নিত্যকার দ্রব্যের। একই ভাবে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি আবার নতুন আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘‘পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে যে বোঝা শিল্পের উপর চাপছে, সেটা তারা সাধারণ ক্রেতার উপর ঠেলে দেবেই।”
কলকাতায় সার্কাসের তাঁবু উধাও। একসময় শহরে শীতের বার্তা নিয়ে আসত এই সার্কাসের তাঁবু।
অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া সিপিএম বিজেমূল ভুল বলে মেনেও যেন মানতে পারছে না।
কলকাতা পুর নির্বাচনে বামফ্রন্টের ইস্তাহার দেখে মনে হচ্ছে তৃণমূলের সাফল্য অনুসরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের পূর্বাভাস, মাঠের ফসল প্লাবিত হয়ে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা
পুজোর সময় পুরসভার গাফিলতির ফলেই কলকাতায় ডেঙ্গু সংক্রমণের বিপদ বাড়ল?
জ্বালানির দামবৃদ্ধির সঙ্গে এবারের অতিবৃষ্টি যুক্ত হওয়ায় শাক সবজি অগ্নিমূল্য, এখনই দাম কমার আশা নেই।