কলকাতা (Kolkata) কি বড় রকমের ডেঙ্গু (Dengue) সংক্রমণের দিকে এগোচ্ছে? এই মুহূর্তে কলকাতার যা অবস্থা, তাতে ডেঙ্গু সংক্রমণের দিক থেকে মহানগর নতুন বিপদের দিকেই যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। পুজোর সময় আমরা বাঙালির সেরা উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি করেছি। এই ভুল করা থেকে বাদ যায়নি কলকাতার পুর প্রশাসনও। তার উপর প্রকৃতিও বাদ সেধেছে। পুজোর আগে প্রবল বৃষ্টি নাকাল করেছে কলকাতাকে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রধানত পুর প্রশাসনের পুজোর মধ্যেকার গা-ছাড়া ভাব। ফলে কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ভাল রকমের ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর আসছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ বার আবার কলকাতায় ডেঙ্গু 2018-19 সালের জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।
পুরসভার 98 নম্বর ওয়ার্ডে চার জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। 112 নম্বর ওয়ার্ডে এক জনের ডেঙ্গু হয়েছিল। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কলকাতা পুরসভার 99 নম্বর ওয়ার্ড থেকেও গত এক মাসে প্রায় 8/10 জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ভবানীপুর অঞ্চলের 70 নম্বর ওয়ার্ড থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে অনেকটাই। কলকাতার অন্যতম ডেঙ্গুপ্রবণ অঞ্চল হচ্ছে ভবানীপুর। তাই বলা যায় কলকাতা ডেঙ্গুর বিপদের দিকে এগোচ্ছে।
কেন এই সমস্যা? কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ, ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ কি কাজ করছে না? যদি কাজ করে থাকে, তাহলে কেন শহর কলকাতা আবার ডেঙ্গুর দিকে এগোচ্ছে। করোনা মহামারী থেকে আমরা এখনও মুক্তি পাইনি। তার উপর ডেঙ্গু কি গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জাঁকিয়ে বসতে চাইছে?
গত 10 জুলাই কলকাতা পুরসভা জানিয়েছিল, 2020-র প্রথম 6 মাসের তুলনায় 2021-এর প্রথম 6 মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ 50 শতাংশ কমেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলকাতা পুরসভার যে ভূমিকা ছিল এটা তারই ফল, এমনটাই কলকাতা পুরসভার কর্তাব্যক্তিদের দাবি।
এ দিকে কলকাতা পুরসভার শাসক দলের ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, পুজোর সময় কাজকর্মে যে ঢিলেমি হয়েছে তার ফলে ডেঙ্গুর মতো রোগবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ, পুজোর আগে টানা বেশ কয়েক দিন কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে। তার পরই পুজো এসে যাওয়ার বৃষ্টির জমা জল সব জায়গা থেকে সরানোর কাজ করে ওঠা হয়নি। তাই ওই জমা জল মশার আঁতুরঘর হয়ে উঠেই বিপদ ঘটাচ্ছে। তবে এখন চেষ্টা চলছে দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের।
পুরসভার 98 নম্বর ওয়ার্ড থেকে ডেঙ্গুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই ওয়ার্ডের বিরোধী দলের কো-অর্ডিনেটর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী দাঁড়িয়ে থেকে স্থানীয় এলাকা ও নেতাজি নগরে মেয়েদের কলেজ স্যানিটাইজ করিয়েছেন। 112 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদার নিজে তাঁর এলাকায় ঘুরে কাজ করছেন প্রায় রোজ, 114 নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর রত্না শূরও এক কথায় রাস্তায় নেমেই কাজ করছেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে।
কলকাতা পুরসভার 144টি ওয়ার্ডের মধ্যে ভবানীপুর এলাকার 70 নম্বর ওয়ার্ডে প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এ বারেও তাই হয়েছে। এই ওয়ার্ড থেকে এখনও পর্যন্ত 6 থেকে 7 জন গত 10 দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে 70 নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের কো-অর্ডিনেটর অসীম বসু বলছেন, "টুকটাক ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা তাঁর ওয়ার্ডে ঘটছে, এটা সত্যি। যে বাড়িতে ডেঙ্গু হচ্ছে সেই বাড়ি ও তার চারপাশের বেশ কিছু বাড়িতে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে।' অসীম বসুর কথায়, "এর থেকে আর বেশি কী করতে পারি বলুন? পুজোর আগের বৃষ্টি, সেই জল ছোট ছোট পকেটে জমে যাওয়া, তার পর পুজো আসার পর সেই দিকে তেমন ভাবে নজর না পড়ার ফলেই মশা বেড়েছে। ডেঙ্গু হচ্ছে। তবে আমরা সামলে নেব।'
কলকাতা পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পুরভোট এখনও হয়নি। প্রশাসক দিয়ে পুরসভার কাজ পরিচালনা করা হছে। সেই কারণে কাউন্সিলরদের এখন নিজস্ব উদ্যোগ ছাড়া প্রশাসনিক ভাবে কাজ করার সাধ্য নেই। তার উপর শুধু ভেক্টর কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট নয়। স্বাস্থ্য, রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশি সব ক্ষেত্রেই কাজ আটকে আছে। কারণ কন্ট্রাক্টররা কাজ করে টাকা না পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন। নতুন করে পুর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার ডাকলেও কন্ট্রাক্টররা তাতে অংশ নিচ্ছেন না। তাই কাজটা হবে কীভাবে? এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুর অঞ্চলে ডেঙ্গু যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কিছু দিনের মধ্যে কলকাতায় ডেঙ্গু বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন কলকাতা পুরসভার শাসক ও বিরোধীদলের কো-অর্ডিনেটর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী।
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একটাই, সাধারণ মানুষের চাইতে প্রশাসনকে তো আগাম সতর্ক হতে হবে। কারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই জাতীয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা নিরসনে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। কেন তা হলে পুজোর আগে বৃষ্টির ফলে জমা জল পরিস্কারের ব্যবস্থা পুরপ্রশাসন করল না? তা হলে নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য পুরসভার ও স্থানীয় প্রশাসনের কি আর কোনও প্রয়োজন নেই? সমগ্র পুর প্রশাসনিক ব্যবস্থা যে কোন পর্যায় পৌঁছেছে, এটাই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শাসক দলের একাধিক কোঅর্ডিনেটর নিজেরাই বলছেন, "পুজোর সময় ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজে ঢিলেমির জন্য ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে।'
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, 2018-19 সালে কলকাতায় যে ভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল, কলকাতা কি আবার সে দিকেই এগোচ্ছে? কেননা 2020-তে মশাবাহিত রোগ কম হলেও কলকাতায় তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তখনও আমরা দেখেছি, করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর আক্রমণ কলকাতা পুরসভার কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: কার স্বাস্থ্যের কীসের সাথী?
পুরসভা সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, 2019-এর তুলনায় 2020-তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমেছিল 60 শতাংশ। 2020-র প্রথম 6 মাসের তুলনায় 2021-এর প্রথম 6 মাস কলকাতায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমেছে প্রায় 46 শতাংশ। 2020-র পয়লা জানুয়ারি থেকে 27 জুন পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন 96 জন। সেখানে 2021-এর এই একই সময়ের মধ্যে কলকাতায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন 52 জন। বর্ষা আসতেই শহরে দেখা দিয়েছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ। অথচ শুরুতে এই বছরের ছবিটা ততটা অস্বস্তির ছিল না। তবে এ বারের অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি ও পুজোর সময় পুরসভার গাফিলতি আবারও কি আমাদের ডেঙ্গুর বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
পুরকর্তারা নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য পরোক্ষে করোনা পরিস্থিতিকেই কারণ হিসেবে সামনে নিয়ে আসছেন। পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেকেরই উপসর্গ বোঝা যায় না। ফলে শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। জেলার কোনও এক ব্যক্তিকে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা কামড়ানোর পরে ধরুন, সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেন অথচ উপসর্গ টের পেলেন না। এ বার ওই ব্যক্তি কলকাতায় এলেন। তিনি এখানে আসার পর আবার আর একটি মশার মাধ্যমে তাঁর শরীর থেকে জীবাণু চলে যেতেই পারে অন্যের শরীরে। এটা তাঁরা কীভাবে আটকাবেন?
তবে কলকাতা পুরসভার কর্তাব্যক্তিদের কাছে একটাই প্রশ্ন, তা হলে এডিস ইজিপ্টাই মশা যাতে জন্মাতে না পারে, তার জন্য পুরসভার কর্তব্যটা কি তাঁরা ঠিক ভাবে, ঠিক সময়ে পালন করতে পেরেছিলেন? নাকি পুজোর সময় জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে কাজ হয়নি? তাই কি নিজেদের ব্যর্থতার দায় এখন জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন?
গণতন্ত্র রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী হওয়ার বদলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন দলীয় কোন্দলে বিদীর্ণ।
মৃত্যুর ঘটনাটাকেই অস্বীকার করে তার দায়িত্ব থেকে হাত মুছে ফেলছে কেন্দ্র রাজ্য সমস্ত সরকার
ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর জন্মহার বাড়ছে
পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গুলিহেলনে নিযুক্ত গ্রিন পুলিশ শাসকের সহায় হতে পারে, জনগণের নয়।
অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া সিপিএম বিজেমূল ভুল বলে মেনেও যেন মানতে পারছে না।