×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিজেমূল ভুল বলাটা কি আরেকটা ভুল  

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 02-12-2021

    প্রতীকী ছবি।

    কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল? ভুল স্বীকার করাটাই কি ভুল? হেঁয়ালি নয়, সিপিএম-এর রাজনৈতিক অবস্থান এখন এই রকমই বিভ্রান্ত। 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর সিপিএম বিস্তর বিশ্লেষণের পর দলগতভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে, বিজেপি ও তৃণমূলের সমঝোতা নিয়ে নির্বাচনে তাদের প্রচারে ভুল ছিল, বিজেমূল তত্ত্ব ঠিক নয়। এই দলগত সিদ্ধান্ত কিন্তু দলের পলিটব্যুর সদস্য থেকে শুরু করে নীচু তলার কর্মী পর্যন্ত একটা বড় অংশ মানতে প্রস্তুত নয়

     

     

    সিপিএম-এর সাম্প্রতিক পার্টি চিঠি 2-তে লেখা হয়েছে, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ইস্যুই মানুষের থেকে সিপিএমকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ, এই স্লোগান আমরা দিয়েছিলাম সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের সময়। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনেও আমরা এই একই স্লোগান দিয়েছি। এর ফলে মানুষের মনে জমি অধিগ্রহণের সময়কার স্মৃতি জেগে উঠেছে। আর এই বিষয়টিই সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে মানুষের থেকে সিপিএমকে বিচ্ছিন্ন করেছে। “সিপিএম এখন চাইছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়নের নীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে অন্য পথের খোঁজে পথে নামতে।”

     


    তবে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাত, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ, এই ভাবনা নিয়ে সিপিএম দলের মধ্যে দলের এখনও যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। সিপিএমের একটা অংশ, দলের তরুণ ব্রিগেড, শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষনেতারা এখনও মনে করেন, সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা হওয়া উচিত ছিল। এটা নিয়ে তারা এখনও রীতিমতো প্রচারও চালান মাঠ-ময়দান থেকে শুরু করে সোশল মিডিয়াতে। বঙ্গ সিপিএমের এই তরুণ ব্রিগেড ও শ্রমিক সংগঠন এমন কি সিপিএমের কোনও কোনও পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এখনও "বিজেমূল’ স্লোগানে বিশ্বাস ও ভরসা রাখেন, এর স্বপক্ষে প্রচারও করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
     


    এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার দাবি, "মিথ্যা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কারণে জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস ছাড়া জোট করতে উদ্যোগ নিচ্ছেন? মমতার এই পদক্ষেপ আসলে মোদী-শাহের কংগ্রেস মুক্ত ভারত গঠনের যে ভাবনা তাকেই সুবিধা করে দিচ্ছে। এটা যদি দিদি-মোদী জোট না হয় তো এটা আসলে কি? দলের তো এটা বুঝতে হবে!’ বাংলার সিআইটিইউ সংগঠনের এক শীর্ষ নেতা স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন, “সিপিএম বলছে  বলে কিছু নেই। আমি এসব মানি না। আমি সিটু করি। আমি বিশ্বাস করি বিজেমূল স্লোগান ঠিক ছিল। বিজেপি-তৃণমূল আঁতাত আছে।”
     


    তবে দলের মধ্যে "বিজেমূল’ এবং "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’, স্লোগান নিয়ে যাতে বৈপরীত্য সৃষ্টি না হয়, সেই কারণেই পার্টি চিঠিতে লিখিত ভাবে এই দুই বিষয় থেকে সরে আসার অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলেই সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্য জানিয়েছেন। তবে তিনি নিজে এই কথা বলার পরেও বিশ্বাস করেন  "বিজেম অর্থাৎ বিজেপি-তৃণমূল আঁতাত ছিল, আছে। বাইরে তৃণমূল-বিজেপি যে লড়াই চলছে সেটা আসলে ছায়াযুদ্ধ।



    তাহলে সিপিএম কি তাদের দলিলে যা লিখছে সেটাকে দলের একটা অংশ আজকাল আর মান্যতা দেয় না? এই প্রশ্ন উঠছে দলের অভ্যন্তরে। না হলে একটা সংগঠিত দলে একই বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীরা এত বেশি মাত্রায় ভিন্ন মত পোষণ করেন ক করে? আসলে 1946থেকে এই পর্যন্ত টানা 75 বছরে সিপিএমের এমন ভয়াবহ নির্বাচনী বিপর্যয় হয়নি, যা 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনে হয়েছে। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ বোঝাতে গিয়েই পার্টি চিঠিতে, অর্থাৎ দলের দলিলে পরাজয়ের কারণ এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ওই দলিলে সংশয় প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, নির্বাচনের আগে সংযুক্ত মোর্চার আহ্বানে ব্রিগেড যে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল তার প্রতিফলন কেন ইভিএমে পড়েনি? 2011 -তে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের কাছে পরাজয়ের পর  2016-তে 19.75 শতাংশ  এবং 2021-এ 4.73 শতাংশ ভোট পাওয়া প্রমাণ করছে মানুষের সমর্থন ক্রমেই কমে যাচ্ছে সিপিএমের উপর। কেন এই ঘটনা হচ্ছে? কেন একটা সংগঠিত, ক্যাডার নির্ভর দল মানুষের পাশে থেকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না? উঠেছে সেই প্রশ্নও।
     


    পার্টি চিঠিতে দলের কর্মীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, রাজ্যে এখন তৃণমূল ও বিজেপি-ই মূল রাজনৈতিক শক্তি। তাই বলে এটা ভাবলে চলবে না যে এই দ্বিমেরু রাজনীতির আবহ তৃণমূল আর বিজেপির গোপন বোঝাপড়ার ফল। অথচ গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএমের প্রচারের মূল স্লোগানই ছিল রাজ্যে দ্বিমেরু রাজনীতির আবহ আসলে তৃণমূল-বিজেপি বোঝাপড়ারই ফল। তাই প্রশ্ন উঠছে পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে সিপিএম কি দিশাহারা? পথভ্রষ্ট? দিকভ্রান্ত?
     

    আরও পড়ুন: সভাপতি নেই, কম্যান্ডও নেই, কংগ্রেস যেন সারথিবিহীন রথ


    তাহলে এখন উপায়? বেশ কিছু উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে এই পার্টি চিঠিতে। তাতে প্রথমেই জনসংযোগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জেলা এবং এরিয়া কমিটির নেতাকর্মীদের বেশি করে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী, তফসিলি, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে এই সমস্ত এলাকায় রাতে থাকতে হবে। অর্থাৎ মাটি কামড়ে ধরে সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। এছাড়াও জনস্বার্থে দীর্ঘস্থায়ী গণআন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আর এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে রাখতে হবে। তবে জঙ্গি আন্দোলন বলতে সিপিএম কি আবার চলছে না, চলবে না বলে পুরনো ছন্দে পথে নেমে বাস, ট্রাম ভেঙে, পুড়িয়ে জঙ্গি আন্দোলনে যাবে? আবার কি পড়ুয়াদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গিয়ে স্কুল, কলেজের গেটে ধর্মঘটের পথে এই জঙ্গি আন্দোলন করবে? সেটা স্পষ্ট করে পার্টি চিঠিতে বলা নেই।



    এখন প্রশ্ন হচ্ছে সিপিএমে এই ভাবে আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য রাজ্যস্তরে সিপিএমের সেই যোগ্য নেতা আছে কি? যদি এই আন্দোলন সিপিএম করতেই পারবে তাহলে 2011- তে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সিপিএম এই 10বছরে বহু এমন সুযোগ পেয়েছে ও পাচ্ছে যা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জঙ্গি আন্দোলন সিপিএম করতে পারত, কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। কেন হয়নি? সেই প্রশ্নের উত্তরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক লড়াকু নেতা বলেছেন, “34 বছর ক্ষমতায় থেকে সিপিএমের মধ্য থেকে এখনও প্রভুত্ব করার অভ্যাস যায়নি। তাই পথে নেমে আন্দোলনের বিষয়টা গত 10 বছরে যেমন হয়নি আগামী দিনেও সঠিক নেতৃত্বে উঠে না এলে এই আন্দোলন হবে না।”    

     


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    Retro Fitting পদ্ধতিতে ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করায় মত নেই বিশেষজ্ঞদের।

    ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর জন্মহার বাড়ছে

    নোটবন্দির পাঁচ বছর পার। এখনও মানুষের ভরসা নগদ লেনদেনেই।

    নেতাজির 125তম জন্মদিন নিয়ে কমিটি, প্রধানমন্ত্রী চেয়ারম্যান, নেই কোনও বৈঠক।

    মৃত্যুর ঘটনাটাকেই অস্বীকার করে তার দায়িত্ব থেকে হাত মুছে ফেলছে কেন্দ্র রাজ্য সমস্ত সরকার

     পড়া ছেড়ে কোথায় গেল মুর্শিদাবাদের গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসার পড়ুয়ারা?  

    বিজেমূল ভুল বলাটা কি আরেকটা ভুল  -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested