×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কলকাতা থেকে উধাও এক সময়কার শীতের বার্তাবাহক সার্কাসের তাঁবু

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 18-11-2021

    প্রতীকী ছবি

    কলকাতায় (Kolkata) শীত আসছে, এক সময় জানান দিত পার্ক সার্কাসের সার্কাসের তাঁবু (Circus Tent of Park Circus)কমলালেবু, ক্রিকেট ম্যাচ, নলেন গুড়, পাটালি গুড়, জয়নগরের মোয়াও ছিল শীতের বার্তাবাহকের তালিকায়। তবে ক্রিকেট ম্যাচ এখন সারা বছরের। সারা বছর বাজারে কমলালেবুও পাওয়া যায়। কিন্তু শহরে আর সার্কাসের তাঁবু নজরে আসে না। কলকাতা থেকে হারিয়ে গিয়েছে অনেক কিছু। হারিয়ে গেলেও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সার্কাসের তাঁবু মাঝেমধ্যে নজরে আসত। কিন্তু গত বছর করোনার জন্য কলকাতায় সার্কাসের একটি তাঁবুও নজরে আসেনি। এই বছরও পার্ক সার্কাস ময়দানে শেষ পর্যন্ত সার্কাসের তাঁবু নজরে আসবে কি না সেটা হলফ করে বলতে পারছেন না সার্কাস মালিকরা। তাই বলা যায় সার্কাস এখন আমাদের কাছে স্মৃতি।

     

    বাংলার নাম করা সার্কাসের দল অজন্তা সার্কাস (Ajanta Circus) পাণ্ডুয়াতে সার্কাস দেখাচ্ছে। আর দিন পনেরো সেখানেই অজন্তা সার্কাসের তাবু থাকবে। কিন্তু কলকাতায় কবে দেখা যাবে আবার সার্কাসের তাঁবু? তার কোনও উত্তর আপাতত অজন্তা সার্কাসের মালিকদের কাছে নেই।

     

    দীর্ঘ দিন ধরেই সার্কাস আমাদের মনের গভীরে একটা জায়গা করে নিয়েছিল তার নিজস্বতায়। এটা আজকের ঘটনা নয়। অষ্টাদশ শতকে ইংরেজদের ভ্রুকুটিকে পরোয়া না করে পরাধীন ভারতে প্রথম সার্কাসের দল তৈরি করেছিলেন প্রিয়নাথ বসু (Priyanath Basu)তবে বাঙালির প্রথম সার্কাসে হাতেখড়ি হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠাতা নবগোপাল মিত্রের (Nabagopal Mitra) হাত ধরেই। নবগোপাল মিত্রর ‘ন্যাশনাল সার্কাস’ (National Circus) কলকাতার ঠনঠনিয়াতে প্রথম সার্কাস দেখায়। পরে তা নবগোপাল মিত্রর বাড়িতে চলে আসে। টাট্টু ঘোড়া ছাড়া তাঁর সার্কাসে অন্য কোনও জন্তুজানোয়ার ছিল না। জিমন্যাস্টিকসের খেলা দেখানো হত বলে ‘ন্যাশনাল সার্কাস’-কে ঠিক সার্কাসের মর্যাদা দিত না সেই সময়কার কেউই। এর পর কিছু ইংরেজ ও ইউরোপের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নবগোপাল মিত্রের জামাতা রাজেন্দ্রলাল সিংহ ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস’ (Great Indian Circus) নামে একটি সার্কাসের দল তৈরি করেন। মির্জাপুরে তাঁবু খাটিয়ে তাঁরা সার্কাস দেখাতেন। কবি ও নাট্যকার মনমোহন বসু ছিলেন হিন্দুমেলার নবগোপাল মিত্রের অন্যতম সংগঠক। ন্যাশনাল থিয়েটারে (National Theatre) অভিনীত হত মনমোহন বসুর নাটক। এই মনমোহন বসুর পুত্র ছিলেন প্রিয়নাথ বসু। সার্কাসের দল গড়ার জন্য প্রিয়নাথ বসু বাড়ি ছেড়েছিলেন। এই প্রিয়নাথ বসুর ‘Professor Bose's Great Bengal Circus’-ই  বাঙালির প্রথম সার্কাস দল।

     

    আরও পড়ুন:কলকাতার পথ দুর্ঘটনা রুখতে গাড়ির গতি কমানোই একমাত্র পথ

     

    এর পর বাংলার সার্কাসের জগতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক মানুষের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে এমন বাংলার সার্কাসের দলও সেই অর্থে খুব একটা নেই, নেই সার্কাসের প্লেয়াররাও। কারণ তাঁদের মনোরঞ্জনের কথা কেউ সেই ভাবে ভাবেননি। আজ বাংলা তথা ভারতের সার্কাসের দলগুলির অনেকগুলিই আর নেই। এই পেশার মানুষরা আজ তাঁদের পেশা ছেড়ে বাঁচার তাগিদে অন্য পেশায় প্রবেশ করেছেন। তা-ও জীবন, পরিবার রক্ষা করতে পারছেন না তাঁদের অনেকেই।

     

    কথা হচ্ছিল ‘অজন্তা সার্কাস’-এর মালিক রবিউল হকের (Rabiul Haq) সঙ্গে। তিনি শোনালেন সার্কাসের সোনালী দিনগুলি কী ভাবে আজ ধূসর হয়ে গিয়েছে সেই গল্প। বাস্তবে দর্শকদের স্মৃতিতেও আজ অবশ্যই ধূসর সার্কাস। রবিউল হক না থেমেই টানা যা বলে গেলেন সেই কাহিনী খুব সুখের নয়।

     

    রবিউল হক বলছিলেন, ‘‘এক সময় ভারতে 250টি সার্কাসের কোম্পানি ছিল। এর মধ্যে 30 থেকে 32টি বড় সার্কাস কোম্পানি ছিল। গত 10 বছরে এই বড় 32টি সার্কাসের কোম্পানি কমে 10টিতে নেমে এসেছে। এর মধ্যে অজন্তা সার্কাস, ফেমাস সার্কাস, অলিম্পিক সার্কাস, সম্রাট সার্কাস, নটরাজ সার্কাস, এম্পায়ার সার্কাস  বাংলার। জেমিনি সার্কাস, অমর সার্কাস দক্ষিণ ভারতের। প্রভাত সার্কাস মহারাষ্ট্রের। এরা সবাই বড় বড় সার্কাস কোম্পানি। এই একই রকম বড় বড় সার্কাস কোম্পানি অনেক ছিল। গত 10 বছরে কেন্দ্রের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের জন্য এর মধ্যেও অনেক সার্কাস কোম্পানি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।’’

     

    রবিউল হকের অভিযোগ, ‘‘বন্যপ্রাণীর সঙ্গে আমরা নিষ্ঠুর ব্যবহার করছি, এই কারণ দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে বাঘ, সিংহ, হাতি-সহ সমস্ত বন্যপ্রাণী কেড়ে নেওয়া হয়েছে এই কেন্দ্রীয় আইনে। আচ্ছা বলুন তো, আমাদের আয় হত এই বন্যপ্রাণীদের দিয়ে খেলা দেখিয়ে। এই প্রাণীগুলির মাধ্যমে আমরা খেলা দেখিয়ে যেমন আয় করতাম তেমনই আমরা এদের পিছনে বহু পয়সা খরচ করতাম। এরা আমাদের সার্কাস কোম্পানির সদস্য হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ছেলেমেয়েদের চাইতেও এই প্রাণীদের আমরা বেশি যত্ন করতাম। আমরা এদের উপর অত্যাচার করতে পারি? সরকারকে আমরা এটা বোঝাতে পারলাম না।’’

     

    রবিউলু হক শোনালেন আরও করুণ কাহিনি। বললেন, ‘‘এই শেষ দু’বছরে করোনা ও লকডাউনের জন্য যে 10টি সার্কাসের কোম্পানি ছিল সেগুলোও শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা যে কী ভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছি সেটা আর বলার নয়। আমাদের জন্য কোনও সরকারি সাহায্য নেই। কেন্দ্রের ট্যাক্স আমাদের দিতে হয়। তার উপর হাতে গোনা যে ক'টা জায়গায় তাঁবু খাটাতে পারি সেখানেও আমাদের উপর প্রচুর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। এক কথায়, টাকা দিতে দিতে আমরা কাহিল।’’ রবিউল বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের পিএফ দিতে হয়। ট্যাক্স দিতে হয়। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের উপর থেকে বিনোদন কর তুলে দিয়েছিলেন। তাই সার্কাস কোম্পানিগুলো বেঁচে ছিল। বিজেপি সরকার কেন্দ্রে আসার পরে সে নিয়ম বদলে গিয়েছে।’’

     


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    মৃত্যুর ঘটনাটাকেই অস্বীকার করে তার দায়িত্ব থেকে হাত মুছে ফেলছে কেন্দ্র রাজ্য সমস্ত সরকার

     পড়া ছেড়ে কোথায় গেল মুর্শিদাবাদের গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসার পড়ুয়ারা?  

    বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের পূর্বাভাস, মাঠের ফসল প্লাবিত হয়ে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা  

    ভূত চতুর্দশীকে কেন্দ্র করে নানা ধর্মীয় রীতি সংস্কারের মধ্যে উৎসবের আদলেও একটা গা-ছমছমে ভাব এখনও রয়েই

    নোটবন্দির পাঁচ বছর পার। এখনও মানুষের ভরসা নগদ লেনদেনেই।

    Retro Fitting পদ্ধতিতে ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করায় মত নেই বিশেষজ্ঞদের।

    কলকাতা থেকে উধাও এক সময়কার শীতের বার্তাবাহক সার্কাসের তাঁবু-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested