×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এক আঁটি শাক আর 14 জনের পরিবারের দুবেলা খাওয়া

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 30-10-2021

    প্রতীকী ছবি।

    এই তো এখনও স্পষ্ট  মনে আছে পুজোর ছুটিতে বাবার হাত ধরে গঙ্গার পার দিয়ে হেঁটে গড়িয়া বাজারে যাওয়ার কথা বাবার হাতে আমার জ্যাঠামশাই, যাঁকে আমি জ্যাঠাবাবা বলতাম, তিনি 15 টাকা দিয়ে বলতেন, কালা ভালো মাছ আনিসএকটা পেঁপেআর তুই বাকিটা বুঝে আনিস।' কালা ছিল আমার বাবার ডাকনামবাবা বাজারে ঢুকেই আগে 10 টাকার মাছ কিনতেনবাকি 5 টাকায় পেঁপে, আলু, অন্য সবজি, ঠাকুরের ফুল ও মা আর বড়মার জন্য পান কিনতেন বাজারের ব্যাগটা ভরে যেত কোনও কোনওদিন সন্ধ্যায় বাবা অফিস ফেরত রুমালে জড়িয়ে হয় একটা ইলিশ মাছ বা আস্ত একটা কাতলা মাছ নিয়ে আসতেন আমাদের 14 জনের যৌথ পরিবারে ওই 15 টাকার বাজারে দুইবেলা পেট ভরে খাওয়া হত

     

     

    এখন? এখন এক কিলো জ্যোতি আলু 20 টাকা চন্দ্রমুখী আলু 28 টাকা পটল 70 টাকা, ঢেঁড়স 70 টাকা, টমেটো 60 টাকা, ঝিঙে 70 টাকা, ওল 70 টাকা, এক আঁটি লাল শাক সরকারি সুফল বাংলা সবজির দোকানেই 15 টাকা

     

     

     

    বাবাকে দেখতাম পঞ্চাশ পয়সার ধনেপাতা কিনতেন গড়িয়া বাজার থেকেকখনও সবজিওয়ালা এমনিতেই একগুচ্ছ ধনেপাতা দিয়ে দিতেন বাবার বাজারের ব্যাগেবলতেন, ‘বাবু খেয়ে দেখবেন ধনেপাতাটা কত ভাল।' এখন সমপরিমাণ ধনেপাতার দাম কমপক্ষে 10 টাকা

     

     

    এসব দিন এখন অতীতবললে এই সময়ের তরুণ-তরুণীরা বলবেন, গল্প দিচ্ছেকিন্তু এটা গল্প নয়, সত্যি কথাআমি যে সময়ের কথা বলছি, সেটা 1983 সাল হবে

     

     

    আমি সেই সময় পাড়ার নারায়ণদার মুদি দোকান থেকে 50 পয়সার মুড়ি-চানাচুর কিনলে একা খেয়ে শেষ করতে পারতাম না 100 গ্রাম সর্ষের তেলের দামছিল 3. 50 টাকায়আজ যে আলু 20 টাকা প্রতি কিলো কিনি, সেই আলু কিনেছি অক্টোবরের এই সময়ে 2 টাকা প্রতি কিলো দামেসর্ষের তেল এখন 200 টাকা প্রতি কিলো

     

     

    আজকাল আমরা আধুনিক হয়েছিবাজারে গিয়ে দরদাম করে জিনিস কিনতে লজ্জা পাইআসলে সব সময় এখন আমাদের মনে হয়, আমি দরদাম করে বাজার করছি সেটা আমাদের ফ্ল্যাটের বা পাড়ার কেউ দেখে নিচ্ছেন না তো? কোথায় যেন একটা আরোপিত সম্ভ্রান্ত হওয়ার বাসনা মনের কোণায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে আমাদের সব সময় আর এর ফাঁক দিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের পকেট ভরে নিচ্ছে

     

     

    এখানেই প্রশ্ন, তাহলে প্রশাসন অর্থাৎ সরকার করছে কী?

     

     

    পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাজার বিষয়ক একটা টাস্ক ফোর্স আছে সেই টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে মেনে নিলেন বাজারদর অগ্নিমূল্য পাশাপাশি বললেন, ‘এই শীতে এখন একটা মাঝারি সাইজের ফুলকপির দাম 30 টাকাএবার মধ্যশীতে ফুলকপির দাম বড়জোড় 20 টাকায় নামতে পারেতার কমে আর নামবে নাগরমের সবজি যেমন পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়স ইত্যাদির দাম খুব একটা কমবে নাতবে শীতের সবজি বলতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি আর সহজলভ্য হবে না এবার শীতেগত 2020-তে মধ্য শীতে ফুলকপি মাঝারি মাপের একটার দাম ছিলথেকে 10 টাকাবাঁধাকপি, মটরশুটি, টমেটো, মুলো, পালং শাকের দাম ছিল নাগালের মধ্যে, এবার আর সেটা পাওয়া যাবে না।'

     

     

    কেন বাজারের এই অবস্থা? এর অন্যতম কারণ জ্বালানির দামবৃদ্ধিসঙ্গে এবারের অতিবৃষ্টিজ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য সবজির পরিবহন ব্যয় বাড়ছেতাই সবজি চাষের জমি থেকে বাজারে আনতে আগের তুলনায় খরচ অনেক বেশি লাগছেতাই সবজির মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে

     

    এছাড়াও এবারের অতিবৃষ্টির ফলে অনেক চাষের জমি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জলের তলায় তলিয়ে গেছেতাই সবজির চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এই সব কারণেই এবার সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে

     

     

    তবে রাজ্য সরকারগুলি যদি জ্বালানির ওপর জিএসটি লাগু করার দাবিতে জিএসটি কাউন্সিলে একযোগে সরব হত আর কেন্দ্রীয় সরকার যদি তাদের উৎপাদন শুল্ক কমাত, তাহলে হয়ত জ্বালানির দাম কিছুটা হলেও কমত এর ফলে সব কিছুরই দাম কমত সবজি সমেত, যেটা কোনও সরকারই করেনি

     

    আরও পড়ুন: মর্ত্য হতে বিদায়, পাতাল থেকে স্বর্গলোকে

     

    অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বা রাজ্যের রাজস্ব সংগ্রহের একটা বড় অংশ আসে এই জ্বালানি থেকে যত সমস্যাই হোক জ্বালানি কিনতে লাগবেই তাই দাম বাড়ালেও জ্বালানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবেই এই কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় থেকেই জ্বালানির দাম ক্রমেই বাড়ছে কারণ জ্বালানির দাম বাড়লেও বিক্রি তেমন প্রভাবিত হয় না আর জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিই অন্যান্য জিনিসের দামবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এর থেকে সবজিও বাদ যায় না

     

     

    তবে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার কোনও কোনও বাজারে দাম যাতে অস্বাভাবিক ভাবে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে না দেয়, তার জন্য এনফোর্সমেন্ট আধিকারিকরা আচমকা হানা দিচ্ছেনতবে এরপরেও দাম যেখানে পৌঁছেছে, তাতে সাধারণ মধ্যবিত্তের পকেটে টান পড়াই স্বাভাবিক

     

     

    আর এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্তের হেঁসেলে পৌঁছচ্ছে না অনেক সবজি লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম বাজারে একদিকে ক্রেতারা পূর্বের তুলনায় সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, অন্য দিকে সারাদিন বসে থেকেও পর্যাপ্ত ক্রেতা পাচ্ছেন না সবজি বিক্রেতারা, এটাই বাজারের বর্তমান চিত্র


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    নেতাজির 125তম জন্মদিন নিয়ে কমিটি, প্রধানমন্ত্রী চেয়ারম্যান, নেই কোনও বৈঠক।

    দুয়ারে পুর নির্বাচন, প্রচার-মিছিলে বাড়বে সংক্রমণ, আশঙ্কা চিকিৎসকদের

    গণতন্ত্র রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী হওয়ার বদলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন দলীয় কোন্দলে বিদীর্ণ।

    ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর জন্মহার বাড়ছে

    কলকাতা পুর নির্বাচনে বামফ্রন্টের ইস্তাহার দেখে মনে হচ্ছে তৃণমূলের সাফল্য অনুসরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

     পড়া ছেড়ে কোথায় গেল মুর্শিদাবাদের গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসার পড়ুয়ারা?  

    এক আঁটি শাক আর 14 জনের পরিবারের দুবেলা খাওয়া-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested