‘স্যর, আজ চারটে পার্টি আসছে। কথা হয়ে গেছে। আমার এ মাসের টার্গেট কিন্তু এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই পূরণ করলাম স্যর। পরের বছর অ্যাপ্রাইজালের সময় একটু দেখবেন...।’
‘হ্যাঁ, ঠিক আছে, ঠিক আছে। সবই তো ঠিক আছে সেন, তবে বিশ্বাসও কিন্তু ভাল পারফর্ম করছে। মুখার্জি-র স্ট্রাইক রেটও খুব ভাল। ওরা কিন্তু তোমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। তা ছাড়া এখন জনতা যে রকম ভয় পেয়ে আছে, তাতে হালকা টুপি পরিয়ে ওদের এখানে ভরতি করানো কোনও ব্যাপার নয়। এখন এটাকে দেখে হাসপাতাল কম, আখের রস বের করার যন্ত্র বলে বেশি মনে হয়। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ... দেখ, এক এক করে কেমন আসছে আর ছিবড়ে হয়ে বাড়ি ফিরছে।’
বোস বাবুর পসার এমনিতে ভাল। পার্টির ভিড় লেগে থাকে চেম্বারে। চড়া ফি দিয়ে তাঁকে দেখানোর জন্য দু’ মাস আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। লকডাউনের মাঝে ভয় পেয়ে লোকজন বাড়ি থেকে বের হননি খুব একটা। তবে তাতে তাঁর পসারে বিশেষ একটা ফারাক হয়নি। আর এই করোনার মরশুমে তো চরম বাড়বাড়ন্ত। হাসপাতালে তাঁর অধীনে চার জনের একটা দল রয়েছে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব চেম্বার রয়েছে। তবে হাসপাতালের হায়ারার্কি অনুযায়ী তাঁদের রিপোর্টিং বস বোস বাবু। যেমনটা কর্পোরেটে হয় আর কী! কলকাতার নামী বেসরকারি নার্সিংহোমে করোনার জন্য বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। তার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে কয়েকজন সিনিয়রদের উপর। তাঁদের মধ্যে বোস বাবুও রয়েছেন।
প্রত্যেক সিনিয়রের আলাদা টিম। তাঁদের আলাদা টার্গেট। প্রত্যেক মাসে যা পূরণ করতে এঁরা সকলেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। এঁরা অনেকটা জেলেদের মতো। জালে মাছ উঠলে তা পাইকারদের হাতে তুলে দেন। তার পর মাছের কেমন পিস হবে, কী ভাবে রান্না হবে, তা ঠিক করে আড়তদাররা। মানে কর্তৃপক্ষ হিসাবে যাদের ধরে নেওয়া যেতে পারে।
গত তিন দিন ধরে সেই হাসাপাতালের লবিতে দিনের মধ্যে 15 ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছেন অনেক রোগীর আত্মীয়রা। বিলিং কাউন্টারে এঁদের মধ্যে অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘দাদা, প্রভিডেন্ট ফান্ড তোলার জন্য অ্যাপ্লাই করেছি। আপনারা খরচের জন্য চিন্তা করবেন না। আমার সন্তানকে অন্তত বাঁচিয়ে দিন।’ অথবা ‘আমার মঙ্গলসূত্রও বিক্রি করার চেষ্টা করছি। দয়া করে আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে তুলুন। যদি তিনিই না থাকেন, তবে এটা দিয়ে আর কী হবে!’
কথাগুলি শুনে অত্যন্ত গম্ভীর মুখে বিলিংয়ে বসা ‘স্যর’ বা ‘ম্যাডাম’ বলেন, ‘কোনও চিন্তা করবেন না। উনি ভাল হয়ে যাবেন। আপনার আউটস্ট্যাডিং বিলটা রেডি করেছি, আর ফার্মেসির বিলও আনাতে বলেছি। কালকের মধ্যে টাকাটা দিয়ে বিল নিয়ে যাবেন, কেমন?’
বিলে যা হিসেব থাকছে, তাতে টাকার পঁচাত্তর ভাগই খরচ হচ্ছে বিভিন্ন রকম টেস্ট করাতে। এমন এমন কঠিন নাম যে সাধারণের পক্ষে উচ্চারণ করাই মুশকিল। জিভে প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে। হাসপাতালের ভেতরের লোকেদের ব্যস্ততা দেখে আত্মীয়রা ভীষণ খুশি। আহা, মানবসেবায় এত মানুষ কত কষ্ট করছেন, খুশি তো হওয়ারই কথা। ‘অজানা মাদারির অদৃশ্য ডুগির তালে’ পুরো সিস্টেমটা কাজ করে চলেছে। রোগী, স্টাফ, আত্মীয় এবং ব্যাঙ্ক। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য মহাজন বা সোনার দোকানের মালিকও কিছুটা কাজ করছেন। টাকার জোগান তো সেখান থেকেই আসছে। সকলেই খুশি।
সিস্টেম থাকলে তবেই তো দেশ উন্নতি করবে। এ জন্য আমরা সকলে কর্তৃপক্ষের কাছে ঋণী। বেঁচে থাকুন আপনারা। কী সেবাটাই না করছেন।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এই লেখার কথোপকথন সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এই লেখা সেই সব ব্যক্তিদের জন্য (লেখার মধ্যে ডাক্তার শব্দটি একবারও ব্যবহার করা হল না) যাঁরা এই পেশাকে প্রতিদিন চরম অপমান করে চলেছেন। এঁদের জন্য শ্রীযুক্ত নচিকেতা চক্রবর্তীর একটি বিখ্যাত গানের দু’টি লাইন রইল, ‘কসাই জবাই করে প্রকাশ্য দিবালোকে, তোমার আছে ক্লিনিক আর চেম্বার...’
এঁদের মাঝে বহু ভাল চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁরা স্রোতের উল্টো দিকে হেঁটে পেশা ও সেবাব্রতর সম্মান রক্ষা করছেন। এ লেখা তাঁদের জন্য নয়। তাঁদের জন্য হাতজোড় করে প্রণাম।
অভিনেতাদের ক্রিটিকদের প্রশংসাতেই সুখী থাকতে হয়। ইরফান সেই প্রবাদের মুখে ঝামা ঘসেছিলেন।
সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক
দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই আদর্শ ধারাবাহিক।
হঠাৎ কোনও বিপর্যয় বড়সড় মহামারীকেও ভুলিয়ে দিতে পারে। আমপান সেটা হাতেনাতে প্রমাণ করে দিল।
এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ
এ এমন এক অন্ধকার, যা সূর্যের আলোতেও দূর হওয়ার নয়। গ্রহণের সময় তো আবার সেই আলো কমে যায়।