×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অতঃপর হারলেন মন্টি-মকবুল-পান সিং তোমর

    রজত কর্মকার | 29-04-2020

    প্রয়াত ইরফান খান

    2007 সালের কথা। একটা উঁচু বিল্ডিংয়ের জলের ট্যাংকের ওপর উঠেছেন শ্রুতি আর মন্টি। সংসার-অফিস, জামাইবাবুর এক্সট্রা-ম্যারিটাল নিয়ে তিতিবিরক্ত শ্রুতিকে দেখালেন, কী ভাবে নিজের সার্ভিসিং করতে হয়। আ...আআআআআআআআআআআআ......... একটা দীর্ঘ আর্তনাদের মতো শোনালো। মন্টির সঙ্গে যোগ দিলেন শ্রুতি। আর্তনাদ তখন কান্না। পচাগলা মৃতদেহের মতো চোখের জল গড়িয়ে এল শ্রুতি-র গাল বেয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে মন্টি তখন বলছেন, নিকাল দো সব, নিকাল দো। লো, অব তুমহারি সার্ভিসং ভি হো গয়ি...। মুগ্ধ চোখে কঙ্কনা সেনশর্মা এবং ইরফান খানের যুগলবন্দি গিলেছিলাম Life In A Metro সিনেমায়।

     

    1990 সালে FTII পুনের ছাত্ররা এই সিনেমাটি তৈরি করেন, যেখানে অভিনয় করেছইলেন ইরফান

     

    29 এপ্রিল দুপুর 12 টায় 13 বছর আগের শোনা সেই আর্তনাদ ফের একবার শুনতে পেলাম। নিজের ভিতর। ইরফান খান প্রয়াত? ফেক নিউজের যুগে খবরটা প্রথমে উড়িয়েই দিয়েছিলাম। না, একেবারে উড়িয়ে দিইনি, কিন্তু মন থেকে তো দিতেই চেয়েছিলাম। গতকাল তিনি হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন, সে খবরও জানতাম। তাই মনটা মুচড়ে উঠেছিল। খবরটা সত্যি জেনে ওই আর্তনাদটাই একমাত্র সঙ্গী হল। খানিক ক্ষণ গুম হয়ে বসে থাকা ছাড়া, আর কোনও অভিব্যক্তি ছিল না।

     
    স্ত্রী সুতপার সঙ্গে ইরফান

     

    সিনেমার ভক্ত, তাই সে সম্পর্কে অল্পবিস্তর খোঁজখবর রাখি। বছর দুয়েক আগে 2018-র 5 মার্চ ইরফানের একটা টুইট দেখে মন খারাপের শুরু। লিখেছিলেন, মাঝে মাঝে জীবন একেবারে নাড়িয়ে ঝাঁকিয়ে দিয়ে যায়। গত 15 দিন আমার নিজের জীবন একটা সাসপেন্স স্টোরি হয়ে গিয়েছে। আমি কখনও ভাবিনি যে দুর্লভ গল্প আর চরিত্র খুঁজতে গিয়ে একটা দুরূহ রোগ খুঁজে পাবো। আমি কোনও দিন হেরে যাইনি। নিজের স্বপ্ন, পছন্দের জন্য সব সময় লড়েছি এবং লড়বই। এই লড়াইয়ে আমার পরিবার-বন্ধুরা সঙ্গে রয়েছেন। এটা খুব কঠিন সময়। দয়া করে কেউ কিছু ধারণার বশবর্তী হবেন না, আমিই দিন দশেকের মধ্যে আপনাদের সঙ্গে সমস্ত কিছু শেয়ার করব। আরও কিছু টেস্টের রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে। তত দিন পর্যন্ত দয়া করে আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।

     

    আরও দেখুন: ইরফানচরিত

     

    তিনি না চাইলে কী হবে, তাঁর টুইট নিয়ে নানা খবর শোনা গিয়েছিল সে সময়। উর্দুতে একটা প্রবাদ আছে, খেয়ালি পোলাও, সেটাই রান্না করে পরিবেশন করা হয়েছিল। দশ দিনের মাথায় ইরফান নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে নিউরো এন্ডোক্রাইন টিউমার। তত দিন পর্যন্ত হিন্দি সিনেমায় সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঘাতক রোগ হিসাবে কৌলীন্য ছিল একমাত্র লিম্ফোসারকোমা অফ দ্য ইন্টেস্টাইন-এর। 29 এপ্রিল 2020 থেকে অবশ্য সে কৌলীন্য আর থাকবে না। এমন কুলীন অভিনেতাকে যে রোগ ছিনিয়ে নিতে পারে, তার চেয়ে ঘাতক রোগ আর কীই বা হতে পারে?

     

    দারুণ ক্রিকেট খেলতেন ইরফান। সি কে নাইডু ট্রফিতে সিলেকশনও হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে টুর্নামেন্ট আর খেলা হয়ে ওঠেনি। ভাগ্যিস...। এটা খুব বিশ্বাস করি, অভিনয় শিখলেই কেউ অভিনেতা হন না। কিন্তু ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্কলারশিপ নিয়ে পাস করা ইরফান কি আদৌ অভিনয় করতেন? মকবুল থেকে হায়দার, হাসিল, লাইফ অফ পাই, স্লামডগ মিলিয়নেয়ার, পান সিং তোমর, লাঞ্চবক্স, সাত খুন মাফ, দ্য নেমসেক, পিকু, হিন্দি মিডিয়াম – তাঁর কোনও সিনেমা দেখে একবারের জন্য মনে হয়নি, তিনি অভিনয় করছিলেন। তাঁর অভিনয়ের নব্বই শতাংশই করত তাঁর চোখ। অসম্ভব এক্সপ্রেসিভ। এমনকী আন, বিল্লু, রোগ, চকোলেট-এর মতো মনে না রাখার মতো সিনেমাও শুধুমাত্র ইরফানের ওই চোখের জন্যেই মনে রয়েছে। থাকবেও।

     

    আরও দেখুন: ইরফানচরিত

     

    এ দেশে সুপারহিরোদের স্থান একেবারে উপরের সারিতে। অভিনেতারা সমালোচকের প্রশংসাতেই সুখী থাকতে বাধ্য হন। ইরফান সেই প্রবাদের মুখে ঝামা ঘসেছিলেন। আন-বান-খান না থাকলেও শুধুমাত্র কনটেন্ট আর অভিনয়ের জোরে একটা সিনেমা দারুণ সাফল্য লাভ করতে পারে, সেটা ইরফানের মতো আর মাত্র গুটিকতক অভিনেতাই বোঝাতে পেরেছেন। একটা কথা ভুললে চলবে না, ইরফান 35 বছর আগে অভিনয়ের জগতে এসেছিলেন। সে সময় মশলামুড়ি সিনেমা ছাড়া আর সমস্ত সিনেমা আর্ট ফিল্মের তকমা পেত। নাচ-গান, কুমিরপোষা ভিলেন, ক্যাবারে না থাকলে সে সমস্ত সিনেমা সাধারণ মানুষ পাতে দিতেন না। এখনও সে সংখ্যাটা বিরাট। তবে ভাবনায়, শিল্পে, গল্পে আজকের সিনেমা অনেকটা সাবালক হয়েছে। আর যাঁদের হাত ধরে এই পরিবর্তন, তাঁদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন ইরফান। রয়েছেন বললাম ইচ্ছে করেই, কারণ সেই স্থান নেওয়ার মতো অভিনেতা এ দেশে খুব একটা নেই। তাই স্থানটা আগামী বহু বছর তাঁর জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।

     

    আনন্দ সেহগল-এর অমর ডায়ালগটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে জীবনের ক্ল্যাপস্টিক ফেললেন ইরফান খান। বাবু মশাই, জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি।

     

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে চেরনোবিল সারা বিশ্বের বহু মানুষের কাছে কৌতুহলের বিষয়। ঠিক কী হয়েছিল সে রাতে?

    করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান

    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    এঁরা ঘুমের সুযোগ পান না এ কথা তাঁদের অতি বড় বন্ধু বা সমর্থকও বলতে পারবেন না। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত

    বৃহস্পতিবার দুপুরে “রামের নামে” ফের চলল গুলি। ৭২ বছর পরেও যে নাথুরাম গডসে জীবিত রয়েছে

    দাদা তো ঠিকই বলেছে। হাসপাতাল বানিয়ে কী হবে? তার চেয়ে মোড়ে মোড়ে মন্দির বানালে এ দেশের কোনও অমঙ্গল হ

    অতঃপর হারলেন মন্টি-মকবুল-পান সিং তোমর-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested