এ এক অবিন্যস্ত হয়ে যাওয়া সময়ের দিনলিপি। এই দিনলিপি সুরভিত নয়, পোড়া মাংসের গন্ধে ভরপুর। সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়েও সেই গন্ধকে ঢাকা যাচ্ছে না। কবি বলেছিলেন, ‘আমার এ ধূপ না পোড়ালে, গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে...।' এই সুগন্ধের জন্য অঙ্গার হয়ে জ্বলতে হবে আমাদেরই, অস্থির সময়কে দধীচি হয়ে আত্মত্যাগ করতে হবে। যারা আগাগোড়া ত্যাগের কথা বলে ভোগের উন্মত্ত খেলায় মেতেছেন, তারা দায়মুক্ত এখন। তাদের নির্বাচনী বৈতরণী ঘাটে ভিড়ল বলে। তারা আর দাঁড় টানবেন না। ভয় ভেঙে এই মারের সাগর পাড়ি দেবে জনগণ, যারা ওই ভোগীদের নৌকা জলে ভাসিয়েছিল।
এখনও শ্বাস নিচ্ছে এই সময়। বুকের ওঠাপড়ায় মালুম হয় কালগর্ভে হারিয়ে যাইনি এখনও। কিন্তু অপরাধী লাগে। মনে হয় প্রকৃতি উদার হস্তে যে মুক্ত বাতাস দিয়েছে, তাতে আমাদের অধিকার কতটুকু? ইশ! যদি নিজেদের শ্বাসটা বন্ধ করে আমাদের ভাগের অক্সিজেনটা শ্বাসকষ্টে ভোগা সময়কে দিতে পারতাম।
দেশজোড়া ধোঁয়ায় স্পষ্ট কিছু দেখা যায় না। ডাক্তারবাবু সময়কে ডেকে বললেন, ‘ধূমপান করেন?’ ‘নিজে করি না, কিন্তু অন্যদের থেকে ধোঁয়া নাকে আসে,’ সময় উত্তর দেয়। ডাক্তারবাবু চিন্তিত মুখে বলেন, ‘প্যাসিভ স্মোকিং তো আরও ভয়ঙ্কর। তাই ফুসফুসটার এই অবস্থা।' সময়ের আর দোষ কী! রামমন্দিরের ভূমিপূজন খুব কাছ থেকে দেখেছে সে, কর্পূর, ঘিয়ের গন্ধে ম ম করছে চতুর্দিক। মাঝরাতে মানুষ পোড়ার গন্ধ পেয়ে ঘুম জড়ানো চোখে সময় দেখেছে পুলিশ ঘন অন্ধকারে কাকে যেন একটা পুড়িয়ে দিচ্ছে। দিল্লি, গুজরাতেও শুধু মানুষ পোড়ার গন্ধ। ‘মানুষগুলো হিন্দু না মুসলিম, কিছু গন্ধ পেলেন?’ — ডাক্তারের কথায় সম্বিত ফেরে সময়ের। মাথা নেড়ে বলে, ‘না।' ডাক্তারবাবু বলেন সময় কোভিড সাসপেক্টেড, তাই হয়তো সে ঘ্রানশক্তি হারিয়েছে।
সময়ের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমছে। 97, 92, 90...। সময়ের ফুসফুসে এখনও 84 সালের মিথাইল আইসোসোয়ানেট। সেবারেও স্বঘোষিত ত্যাগীগুলো ধুকপুক করতে থাকা সময়কে ফেলে রেখে ভোগের খেলায় মেতেছিল। এবারে তো সেই ভোগের নেশা আরও বেশি। অবশ্য সময়কে এখনও বাঁচিয়ে রাখছে কিছু মুহূর্ত। মুমূর্ষু স্বামীকে বাঁচাতে মরিয়া স্ত্রী নিজের যাবতীয় প্রাণশক্তি উপুড় করে দিচ্ছেন। কিছু তরুণ ছেলেমেয়ে প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে বেরিয়ে পড়েছেন সময়কে বাঁচিয়ে রাখতে। আর রাষ্ট্র, আর তার পেয়াদারা? শুধুই ধোঁয়া উড়িয়েছে। ধূপের ধোঁয়ায় তার রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞাপন, আর বারুদের ধোঁয়ায় সেই রাষ্ট্রেরই আত্মগোপন। সময় সব দেখেছে, আর শুঁকে শুঁকে এই রোগ বাঁধিয়েছে।
সময়কে বাঁচাতে বারবার মানুষই এসেছে। সময় জার্মানির গ্যাস চেম্বারেই দমবন্ধ হয়ে মরে যেতে পারত। ভিয়েতনাম যুদ্ধের নাপাম বোমেই থেমে যেতে পারত তার পথ চলা। কিন্তু তা তো হয়নি। আমরা সময়কে মরতে দিইনি। সব প্রাণবায়ু উজাড় করে সময়কে বাঁচিয়েছি। আবার তাকে বাঁচাব। এত আঘাতে সময় একটু অসংলগ্ন, একের পর এক প্রিয়জনের চিতা জ্বালাতে সে কাঠ কুড়োচ্ছে। শাসকের লোক এসেছিল আগুন জ্বালিয়ে উপকার করতে। সময় মিশির আলির ভঙ্গিতে তর্জনী উঁচিয়ে বলেছে, ‘তফাৎ যাও, তফাৎ যাও, সব ঝুটা হ্যায়।' তর্জনীতে তখনও ভোটের নীল কালি। রাষ্ট্রের লোক তাই দেখে ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আমরা সময়কে বুঝেছি, সবকিছু এখনও ঝুটা হয়ে যায়নি। তাই শুনে সময় আবার অল্প অল্প করে শ্বাস নিচ্ছে। হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তার কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ চলে আসবে।
মুসলমানরা মিমকে এককাট্টা ভোট দিলে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির কোনও গুরুত্ব থাকবে না।
নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল যারা, তাদের প্রণাম।
খাদ্য, বস্ত্র যখন পয়সা দিয়েই কিনতে হয়, সংবাদ নয় কেন?
বাঙালির ঘরের উমা যে আটপৌরে শাড়ি পরে, জীবনযুদ্ধে লড়ে যেতে পারে, সমাজের শত শত দুর্গা যে এভাবেই বাঁচে।
মহাভারতের অর্জুন রামায়ণের রামচন্দ্রকে হারিয়ে ফিরে এলেন পুরনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে।
আপাতত রণে ভঙ্গ দিলেও সুনার বঙ্গালের কারিগরদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।