×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হিন্দি চাপানোর রণে ভঙ্গ দিল IACS

    বিতান ঘোষ | 27-03-2021

    প্রতীকী ছবি।

    বিতর্কের মুখে হিন্দি নিয়ে নিজেদের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা থেকে পিছু হটল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স। 24 মার্চের নতুন নির্দেশিকায় বলা হল, এটা স্রেফ নিয়মমাফিক একটা প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি। গত 19 মার্চ এই মৌলিক বিজ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠানের তরফে কার্যনির্বাহী রেজিস্ট্রার পূর্বাশা ব্যানার্জি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, ফাইলে লেখাপত্রের অন্তত 33% হিন্দিতে করতে হবে। মোট উপস্থিত পড়ুয়ার অন্তত 55% শতকে হিন্দিতে তাঁদের কাজ পরিচালনা করবেন। ফাইলের নামে হিন্দি এবং ইংরেজি দুই ভাষার কথা বলা হলেও হিন্দি অগ্রাধিকার পাবে। হিন্দিতে আসা চিঠির উত্তর হিন্দিতেই দিতে হবে। এমনকি একজন অস্থায়ী হিন্দি-পরিদর্শক এই সবকিছুর ওপর নজর রাখবেন। এইসব কিছুর পিছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাও সেই নির্দেশিকায় উল্লিখিত হয়েছিল। সরকারি ভাষা আইনের 3 নং ধারার 3 নং অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে প্রশাসনিক কাজে 100%  ‘সরকারিভাষার ব্যবহারের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিঠটান দিলেও এবং কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের (DCS) প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশ্বভারতী হোক বা IACS— কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাষ্ট্রভাষার দোহাই দিয়ে, বারবার হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে



    কিন্তু সত্যিই কি কোনও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ফরমান চাপিয়ে দেওয়া যায়? আইনজীবী তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, ‘এটা অনৈতিক কাজ। সংবিধানের 344(1) এবং 351 নং ধারায় যে অষ্টম তপশিল রয়েছে, তাতে হিন্দি ছাড়াও আরও 22টি আঞ্চলিক ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই ভাষাগুলোর মধ্যে যে কোনও একটায় পড়াশোনা কিংবা প্রশাসনিক কাজকর্ম করা যেতে পারে।' একইসঙ্গে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে আক্রমণ করে তাঁর সংযোজন, ‘বিজেপির ঘোষিত লক্ষ্য হল হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান। ওরা চায় ওদের মতে এবং পথে সবাই চলুক। তাই এসব করে বেড়াচ্ছে।পাশাপাশি তিনি এটাও জানালেন যে, তিনি এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ সুর নরম করে জানিয়েছে, এটা একটা রুটিন কাজ। কারও ওপর কোনও ভাষা তারা চাপিয়ে দিচ্ছে না



    বাসন্তী দেবী কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা চিলিকা ঘোষের মত, ‘এই দেশে রাষ্ট্রভাষা বলে কিছু নেই৷ যেটা আছে, সেটা হল সরকারি ক্ষেত্রে কাজের ভাষা বা সংযোগরক্ষাকারী ভাষা। প্রশাসনের মাথায় বসে থাকা বিজেপির নেতারা বোধহয় জানেন না দক্ষিণ ভারত কীভাবে হিন্দি আধিপত্যের ওপর গর্জে উঠেছিল। এই বৈচিত্র্যময় দেশে কোনও বিশেষ একটি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত।' একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা তো এখন নিজেদের ভাষা বাংলাটাও ভাল জানে না। এই হিন্দি আধিপত্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়ার মতো রসদ কোথায়?’



    মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত IACS-এর এই ঘটনার পর অনেকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, এই মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানেই অতীতে সিভি রামন, সত্যেন্দ্রনাথ বসুরা গবেষণা করেছেন। তাঁদের কাছে ভাষা কিন্তু কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সেই প্রতিষ্ঠানের এমন সংকীর্ণ এবং একপেশে সিদ্ধান্তে হতবাক অনেকেই। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত 24 মার্চ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা সমবেত হয়ে STOP HINDI IMPOSITION-এর আকারে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু সংগঠনও প্রতিষ্ঠানের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায়। নির্দেশিকার কপি পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানানো হয়। সম্মিলিত চাপের মুখেই নড়েচড়ে বসতে কর্তৃপক্ষ। তারা গত 24 মার্চ আর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, এটা রুটিনমাফিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। প্রতিবছরই নাকি এমন নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। এই ব্যাপারে কাউকে নাকি জোর জবরদস্তি করা হয় না। কিন্তু এরপরেও, রণে ভঙ্গ দিতে নারাজ আন্দোলনকারীরাও। তাঁদের একজন বললেন, ‘ব্যাঙ্কের কাজকর্মে, বিলবোর্ডে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্ল্যাটফর্মে রেলের বিজ্ঞপ্তিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।'



    রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে বিজেপির নেতারা সুনার বঙ্গালগড়ার ডাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দুর্বোধ্য বাংলা উচ্চারণে রবীন্দ্র কবিতা আওড়াচ্ছেন। বাংলার হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার ডাক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক-রাজনৈতিক পরিসরে যেভাবে হিন্দিকে সুয়োরানী করে, আঞ্চলিক অন্যান্য ভাষাকে দুয়োরাণী করে রাখা হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের শাসকদল এবং বিজেপির প্রকৃত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। এক শিব্রামীয় কাহিনিতে শুনেছিলাম একটা মজার কাণ্ডের কথা। সাবেক বিহারের কোনও ইস্কুলে লেখকের কোনও বন্ধু শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। একদিন ক্লাসে তিনি গোরুর ইংরেজি অর্থ লিখতে দিলে, জনৈক ছাত্র লেখে, ‘গৌ হামারি মাতা হ্যায়, আংরেজি নেহি আতা হ্যায়।' তা লেখকের সেই বন্ধুটিও ছিলেন আর এক কাঠি সরেস। তিনি সটান খাতায় গোল্লা বসিয়ে লিখে দেন, ‘বলদ মেরা বাপ হ্যায়, নাম্বার দেনা পাপ হ্যায়।' ঘটনা হল, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের হাবভাবও অনেকটা সেই ছাত্রের মতোই। তারাও গোরুকে মাতা মনে করে, তারাও হিন্দিকে রাজভাষাবলে মাথায় করে রাখে। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে বারবার এই অভিযোগ ওঠে যে, তারা দেশের সর্বত্র স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ভাষার ওপর হিন্দিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। IACS-এর ঘটনাটিও তার ব্যতিক্রম নয়


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে সহনশীলতা, বহুত্ববাদের মতো প্রকৃত ভারতীয় সত্তাগুলিকে ধ্বংস করতে।

    দায়িত্বশীল নাগরিককে 74 বছর বয়সী স্বাধীন রাষ্ট্রের উপহার একটা কেক আর চকোলেট

    বাংলায় বেহাল বিজেপির মোহ কাটতেই তৃণমূলে ফিরছেন নব্যরা, বিমুখ আদিরাও, মহাসংকটে রাজ্য বিজেপি

    ঈশান কোণে মেঘ থাকলেও বিসমিল্লার সুরে, ফৈয়জের কবিতায় এই দেশ বেঁচে থাকবে।

    সমাজ নির্মিত ‘খুনি' হিসাবে একাকী রিয়াকে যে অসম লড়াইটা লড়তে হচ্ছে, সেই লড়াইয়ে সংহতি থাকবে।

    নিজেদের দুর্বলতা কাটানোর দাওয়াই খুঁজে না পেলে অন্যরা দল ভাঙাবেই।

    হিন্দি চাপানোর রণে ভঙ্গ দিল IACS-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested