×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অর্জুনের কাছে পরাস্ত হলেন রামচন্দ্র!

    বিতান ঘোষ | 24-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    তিন বছরের বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করে গত 22 মার্চ, রবিবার, তৃণমূল কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন করলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দলে স্বাগত জানান। অর্জুনের এই যোগদান পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা উত্তর 24 পরগণা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারী প্রমুখ।

     

    অর্জুনের ছেড়ে যাওয়া ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া মদন মিত্র কিংবা 2019-এর লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ঘরছাড়া কর্মীদের রক্ষা করা পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে বহুবার বাকযুদ্ধ হয়েছে অর্জুনের। অর্জুনের দলে যোগদান প্রসঙ্গে তাঁরা সেই অতীতের অস্বস্তির জায়গাটিকে না লুকোলেও প্রায় প্রত্যেক নেতাই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখেছেন। দলের নীচুতলার কর্মীরা অবশ্য এই বিষয়ে নিজেদের হতাশার কথা লুকোননি। অর্জুনের বিরুদ্ধে লড়ে গত বিধানসভায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ঘাসফুল ফোটানোর পর সেই অর্জুনকেই দলের নেতা হিসাবে মানতে নারাজ অনেকে।

     

    অর্জুনের তৃণমূল ত্যাগের কারণ ছিল পুলওয়ামা। তৃণমূল ছাড়ার পর অর্জুন দাবি করেছিলেন, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেহ প্রকাশ করায় তিনি ‘ব্যথিত’ হয়েছেন।বিজেপি ত্যাগের কারণ হিসাবে অবশ্য বলেছেন, ‘পাটশিল্পের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা’। এইসব দেখেশুনে অর্জুনদের রাজনৈতিক স্থিতি নিয়েই বারবার প্রশ্ন উঠে যায়। 2020 সালের মে মাসে হুগলির তেলিনিপাড়ার জাতিদাঙ্গায় অর্জুনের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকেই যাবে, তেমনই 2019-এর লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে ভাটপাড়া এবং তৎসংলগ্ন জগদ্দল, ব্যারাকপুরে যে বোমাবাজি কিংবা বিরোধীদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাগুলি ঘটেছিল, তাতে বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবেন না অর্জুন।

     

     2019 লোকসভা ভোটের আগে দলের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করতে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করলেন, অর্জুন কোথায়? মুখে অসন্তোষের ছাপ নিয়েই অর্জুন তৃণমূল ভবনে উপস্থিত নেতাদের জটলা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের উপস্থিতি জানান দিলেন৷ দলবদলের গুঞ্জনের মধ্যে অর্জুনের উপস্থিতিতে দলনেত্রী খানিক নিশ্চিন্ত হয়ে ঘোষণা করে দিলেন, 'ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী শ্রী দীনেশ ত্রিবেদী।‘ এটুকু ঘোষণার পরই অর্জুন নয়া ভাগ্যান্বেষনের তাড়নায় তাঁর পুরনো রাজনৈতিক সাকিন ছাড়লেন। যোগ দিলেন পদ্ম শিবিরে।

     

    অর্জুন যতই দলছাড়ার কারণ হিসাবে পুলওয়ামা কান্ডে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর "অসংবেদনশীল' প্রতিক্রিয়াকে দায়ী করুন না কেন, এটা প্রায় কারও অজানা ছিল না যে, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীপদ না পাওয়াই ছিল তাঁর দলত্যাগের একমেবাদ্বিতীয়ম কারণ। দলনেত্রী অবশ্য তাঁকে বিকল্প হিসাবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা মনঃপুত হয়নি অর্জুনের।

     

    তারপরের ইতিহাস ঘটনাবহুল। অর্জুন তখনকার মতো লক্ষ্যভেদে সফল।দলত্যাগের অব্যবহিত পরেই বিজেপি তাঁকে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে। বিজেপির কাছ থেকে প্রার্থীপদ পাওয়ার নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই তিনি তৃণমূল ত্যাগ করেন। তারপর ঘটনাবহুল লোকসভা নির্বাচনের গণণায় ক্রমশ পিছিয়ে যেতে যেতেও শেষ রাউন্ডে জয়লাভ। মহাভারতের অর্জুনের মতো কৃষ্ণ নন, অর্জুনের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক গুরু স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। মাঝেমধ্যে অবশ্য রাজনৈতিক পরামর্শ চাইতে তিনি পৌঁছে যাচ্ছিলেন ব্যারাকপুরেরই প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারের কাছে।

     

    আরও পড়ুন:বাপের দায়ে মেয়ের ঘাড়ে খাঁড়া

     

    2019-এর লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে বিজেপির অভাবনীয় সাফল্যে কলকাতা সন্নিকটস্থ দমদম লোকসভার পর, গঙ্গার পূর্ব উপকূলের প্রায় সর্বত্রই জয়লাভ করে বিজেপি। এমতাবস্থায় মুষড়ে পড়া দলীয় কর্মী সমর্থকদের মনোবল জোগাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অর্জুনের খাসতালুক ভাটপাড়ার ওপর দিয়ে নৈহাটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, তখন রাস্তার দু'পাশের জমায়েত থেকে স্লোগান উঠল জয় শ্রী রাম।

     

    দৃশ্যতই রুষ্ট মমতা গাড়ি থেকে নেমে জনসমষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন। বিজেপি প্রচার করে দিল রামনামে ভয় পাচ্ছেন মমতা। সাংসদ অর্জুন ঠিক করলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায় এক লক্ষ জয় শ্রী রাম লেখা পোস্টার পাঠাবেন!

     

    বিজেপি শাসনে ভারতের প্রায় সর্বত্র জয় শ্রী রাম ধ্বনিটি একটি ওয়ার ক্রাইতে পরিণত হয়েছে। 2019 এর লোকসভা পরবর্তী সময়ে সেই প্রবণতা বাংলাতেও জাঁকিয়ে বসল। ধার্মিক, বিজেপি সমর্থকরাই শুধু নন, তথাকথিত বাম প্রগতিশীল শিবিরও জয় শ্রী রাম ধ্বনিকে ভারী এক আমোদের জিনিস হিসাবে গ্রহণ করল। ট্রেনের লেডিস কম্পার্টমেন্টের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হত জয় শ্রী রাম স্লোগান। 2021-এর বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারংবার বিদ্রুপের সুরে প্রশ্ন তুলেছেন যে, রামনাম শুনে মমতা রেগে যাচ্ছেন কেন? অর্জুন আগাগোড়া এই ধর্মযুক্ত উন্মত্ততাকে সমর্থন জুগিয়েছেন। এই কিছুদিন আগেও ভরা সভা থেকে মমতার ধর্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার নিদান পর্যন্ত দিয়েছেন।

     

    রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং পরবর্তী সময়ের উপনির্বাচনগুলিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, রামনামে ভোট মেলেনি বিজেপির। 'পুরুষোত্তম' রামের পুরুষকারের তীব্র আস্ফালন দিয়ে উত্তর ভারতের মতো বঙ্গ বিজয়ও করতে পারেনি বিজেপি। তবু, বছর তিনেক আগের বাংলায় অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন রাম। অর্জুনদের কল্যাণে এই ভুঁইফোড় রাজনৈতিক রাম ত্রস্ত করেছিলেন রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের। অর্জুনদের দলত্যাগ আরও অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও হয়তো প্রমাণ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তাঁরা একদিন যেমন জয় শ্রী রাম স্লোগানে নিজেদের বিড়াল তপস্বী সাজিয়েছিলেন, তেমনই স্বার্থ বিহনে তাঁরা অনায়াসেই সেই রাজনৈতিক রামচন্দ্রকে ছেড়ে ফিরে এলেন সেই দলনেত্রীর কাছে— যাঁর ধর্মপরিচয়ের সত্যতা নিয়েই এই কিছুকাল আগেও অর্জুন প্রশ্ন তুলেছিলেন।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    হঠকারিতায় বিচ্ছিনতাবাদের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ফেললে তাকে বন্ধ করা মুশকিল।

    বাঙালিকে রবীন্দ্র-কবিতা না শুনিয়ে, প্রধানমন্ত্রী ‘খেলা’র মন্ত্র শেখালে জাতির উপকার হতে পারে!

    দুর্বল, প্রায় অনিচ্ছুক নেতৃত্বের পক্ষে নানা রাজ্যের সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাদের কংগ্রেসে ধরে রাখা কঠিন।

    তালিবানি মৌলবাদের রোগ পালটা মৌলবাদী দাওয়াইতে সারবে না, এটা দেশের রাজনৈতিক তালেবরদের বুঝতে হবে।

    শ্রীরামপুরের গির্জা বলতে ভোলা ময়রা এই সেন্ট ওলাফস গির্জার কথাই বলেছেন

    বিশ্বের পুরুষ প্রধানরা আজ সঙ্কটের দিনে যখন দিশাহীন, তখন সঠিক পথ দেখাচ্ছেন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানই।

    অর্জুনের কাছে পরাস্ত হলেন রামচন্দ্র!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested