×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পূর্ণিমার চাঁদ ওদের কাছে ঝলসানো রুটিই

    রজত কর্মকার | 17-04-2020

    খিদে এখন মহামারী।

    মাথায় একটা বড় পুঁটুলি এবং দু হাতে দুটো অ্যালুমিনিয়াম বা টিনের বাক্স নিয়ে আগে আগে হাঁটছেন পরিবারের কর্তা। তাঁর পিছনেই পরিবারের বড় মেয়ে। আর তার পিছনে ছোট মেয়ের হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে চলেছেন মা। তাঁরও অন্য হাতে একটা পুঁটুলি রয়েছে। ছোট মেয়েটা অবিশ্রাম কেঁদে চলেছে। আর হাঁটতে পারছে না সে। খিদে-তেষ্টায় মরে গেলেও বাবা-মা থামছেন না। কত বয়স হবে মেয়েটির? বড়জোর চার কী পাঁচ! হাইওয়ে ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটছে এমন বহু পরিবার। হাঁটতে হাঁটতেই মৃত্যু মুখে ঢলে পড়েছেন অনেকে।

     

    এইসব ভিডিও দেখে গত কয়েকদিন ধরেই মনটা বিচলিত হয়ে আছে। শাসনযন্ত্রের হাতে এত কলকব্জা থাকা সত্ত্বেও সারা দেশের প্রায় 45 কোটি পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে নিয়ে কেউ ভাবছে না। সরকার একবারও বুঝল না, চিন থেকে যে ভাইরাস ইউরোপে পৌঁছে ছারখার করছে, তা এ দেশে আসতে কত সময় লাগবে? একটু আগে থেকে সতর্ক হলে এত মানুষ এত কষ্টে থাকতেন না....

     

    ভেতরের আমি: ব্যস্, নাকি কান্না শুরু হল। এই মালটা সব সময় সত্যি কথার গায়ে একটু পায়েস মাখিয়ে তার পর পরিবেশন করে। পাছে বড় বড় দাদুদের মনে লাগে! আহা রে, বড্ড নরম মন তোর!

     

    আমি: ওহ, তুই আবার জেগে উঠলি? বছর খানেক তো বেশ চুপচাপ ছিলি। হঠাৎ করে কী হল?

     

    ভেতরের আমি: ওই দেখো, আবার খোকা খোকা কথা বলে। আজ বাদে কাল যুদ্ধ হবে। রাজাবাবু, ওষুধটা খেয়ে নাও। তার পর তোমার ছুটি। হাল্লার শিশু রাজা যেন! সালা, গোটা বিশ্বে মহামারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আর তুই জিজ্ঞেস করছিস হঠাৎ করে কী হল? এমন ন্যাকামো দেখলে গা জ্বলে যায়। তোর কি মনে হয়, এত বছর ধরে আমি শুধু ঘুমিয়েই কাটিয়েছি? তুই বাইরে যখন মেকি সভ্যতার মুখোশে এত অন্যায় দেখেও শুধু গুমড়ে মরেছিস,আমি ভেতরে রক্তবমি করছিলাম। পারলে তোর পাজর ভেঙে বেরিয়ে আসতাম বোকা-বিপ।

     

    আমি: আহ্, তোকে কতবার বলেছি, মুখের ভাষা সংযত কর। লোকে কী বলবে? যদিও বাইরে থেকে কেউ তোর কথা শুনতে পায় না। কিন্তু মাঝে মাঝে ভয় হয়। ভেতরে তুই এত জোরে চ্যাঁচাস, মনে হয় বাইরে থেকে কেউ শুনে না ফেলে।

     

    ভেতরের আমি: হা হা হা হা.... শুনে ফেললে তোর মারা যাবে। বেশ মস্তি হবে তখন। ব্যাটা আদর্শ দেখিয়ে বেশি বেতনের চাকরি ছেড়ে কলম আঁকড়ে ধরেছিল। উউউউহহ্, এখন নিজেই সেই আদর্শের গলা টিপে দিয়েছে। ভালো হবে কোনও হোমরা-চোমরা একদিন আমায় শুনে ফেললে। আদর্শের সঙ্গে তোরও মারা যাবে। সালা চিরকালের ভীতু তুই, ভীতুই রয়ে গেলি। এত লোক না খেতে পেয়ে মরেছে, তোর লেখা কোন বাঙ্গিটা ফাটাতে পেরেছে?

     

    আমি: বাজে কথা কেন বলছিস! তুই নিজে গুনে দেখ, গত দশ বছর ধরে এই পেশায় আমি কত ভালো আর্টিকল লিখেছি। কত প্রশংসা পেয়েছি কত ভালো...

     

    ভেতরের আমি: ব্যস্, সালা আবার নিজের ঢাক পেটাতে শুরু করল। এই যে এত লিখলি কার কী ছেঁড়া গেছে তাতে? আর কাকা, এই যে পোসোংসার কথা বলচ, এতে তোমার কোনও লাভ হয়েছিল? না প্রোমোশন, না লগ্গা, কোনও দিন সেটিং করতে পারলি না। আমি তখনও বলেছিলাম,ধামা যদি ধরতেই হয়, ধরে ফেল। ওসব আদর্শ দেখাস না। তোর তো ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো কেস। বড় হাউজে চাকরিও চাই, শাসকদলের সঙ্গে সেই হাউজের লুড়ুক্কু লুড়ুক্কু খেলা দেখাও চাই, আবার আদর্শও চাই! বাহ্, ঝালে-ঝোলে-অম্বলে, কাকা তুমি সবেতেই আচো। তোর কত লেখায় উপরতলার মানুষ স্রেফ মুতে দিয়েছে সেটা গুনে দেখিস কোনও দিন। আমাকে ভালো লেখা দেখাতে আসিস না। ওগুলো তুই লিখিসনি, আমি লিখেছি। তাও যেমন লিখতে চেয়েছি, তেমনটা লিখতে দিসনি তুই।

     

    আমি: সব বিষয়ে মেরে ধরে খিস্তিয়ে কাজ হয় না, বুঝলি। একে মহামারী, তার পর অনাহার। এতো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই Hunger Index-এ আমার দেশ 102 নম্বরে। দিন দিন পিছিয়েই চলেছে। তার উপর এই গরিব মানুষগুলোর যদি আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে কত লক্ষ মারা যাবে ভাবলেই গা শিউরে উঠছে। দেশের খাদ্য ভাণ্ডারে প্রচুর খাদ্যশস্য মজুত আছে, তবুও সে ভাণ্ডার নাকি এখনই খোলা যাবে না। এমনটাই বলছেন রাবণবিলাস মন্ত্রীমশাই

     

    ভেতরের আমি: হ্যাঁ জানি, ওই মহান (বিপ) কী বলেছে। তুই শুধু খবরের কাগজ পড়িস বা নিউজ দেখিস। আর আমি সব কিছু ঘেঁটে যেটুকু আসল সেটা জমিয়ে রাখি। ওই মহাপুরুষের সন্তান বলেছে, কোনও এমার্জেন্সির জন্য নাকি অপেক্ষা করা হচ্ছেতা হলেই পর্দা তুলে ভাণ্ডার হাট করে খুলে দেবেজানি, তুই কেমন মহান দেশের বাসিন্দা সব জানি। আমার কথা, উপর মহল থেকে ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে পোধানমন্তী, তবুও ভাণ্ডার খুলছে না কেন? কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, কথাটা শুনেছিস ঠিকই, কিন্তু মনে নেই। অথবা সেফ খেলছিস, লিখতে পারছিস না।

     

    আমি: অনেক কিছুই পারছি না। শিশুগুলোর মুখ দেখতে পারছি না। অভুক্ত মানুষগুলোর চোখের দিকে তাকাতে পারছি না। এদের সকলকে পেট ভরে খাওয়াতে চাই, সেটাও পারছি না। সামর্থ্য নেই। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সকলে জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র। ক্ষমতার মোহে কিছু মানুষ সব কিছু ধ্বংস হতে দেখেও কিচ্ছু করছে না। খাদ্যভাণ্ডারের মাথায় বসা মন্ত্রী অনাহারে থাকা মানুষের মুখের গ্রাস আটকে রেখেছেন অপেক্ষা করছেন আরও জরুরি অবস্থার। এই অবস্থার মধ্যেও লক্ষ কোটি টাকার অস্ত্র কোনার বরাত দেওয়া হচ্ছে। আমরা হয়তো দেখতে পাইনি, কিন্তু এই অভুক্ত মানুষগুলো গোলাপি চাঁদকে একটা গোটা রুটিই দেখেছে। কবে সেই রুটিটা ওদের পাতে পড়বে, তার অপেক্ষাতেই দিন গুনছে এখন।

     

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    দরজা খোলার শব্দে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলেন ঠাকুর। ‘কে এলি, রিদে নাকি?’ উত্তর এল, ‘মিত্রোঁওওওও, আমি নরেন'

    গরুর পেছনে গ্লাস নিয়ে ঘোরা মহাপুরুষদের মুখে বাণী নেই। কষ্টে প্রাণটা ফেটে যাচ্ছে।

    সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক

    আন্দোলনও হল, আবার চিনকে রামচিমটিও দেওয়া হল। বেশি কথা বলতে এলে পরিষ্কার বলে দাও, আমরা তোদের পকেটে নিয়

    এ এমন এক অন্ধকার, যা সূর্যের আলোতেও দূর হওয়ার নয়। গ্রহণের সময় তো আবার সেই আলো কমে যায়।

    2018 সালে সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনায় চতুর্থ গ্রাম হিসাবে দোমারি-কে দত্তক নেন নরেন্দ্র মোদী।

    পূর্ণিমার চাঁদ ওদের কাছে ঝলসানো রুটিই-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested