×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সবার পকেটে চিন, তাক ধিনা ধিন্ ধিন্

    রজত কর্মকার | 27-06-2020

    প্রতীকী ছবি

    তোলা তুলতে গিয়ে পোঁ(মো)দ পোধান-রা যেমন ভাবে বলেন, "পুরো পুরসভা আমার পোকটে...', তেমনই সদ্য চিনা সামগ্রী বয়কট আন্দোলনে যাঁরা গলা-বুক এবং আরও নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাটাচ্ছেন, তাঁরাও বলতে পারেন, "হুঃ, চিন আমাদের পোকটে'। ব্যাপারটা একটু গুরুতর, মানে সকলের মগজে চট করে রেজিস্টার না-ও করতে পারে। চিন কি আর পকেটে করে ঘোরা যায়? এত বড় দেশ, এতগুলো মানুষ, এ সব তো আর পকেটে নিয়ে ঘোরা যায় না। তবে চিনা কোম্পানির মোবাইল অনায়াসে পকেটে ফেলে ঘোরা যায়। আন্দোলনও হল, আবার চিনকে "রাম'চিমটিও দেওয়া হল। বেশি কথা বলতে এলে পরিষ্কার বলে দাও, "আমরা তোদের পকেটে নিয়ে ঘুরি।'

     

    পোঁ(মো)দ পোধান-এর সেই বিখ্যাত দৃশ্যটি দেখুন

     

    গত কয়েক দিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় এমনও ভিডিও ঘুরেছে এবং বাহবা কুড়িয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে চিনের তৈরি মাল ভেঙে খানখান করছে লোকজন। বাড়ির টিভি, স্ক্যানার, বিভিন্ন ছোট-বড় ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র সব মায়ের ভোগে। যে সমস্ত দোকানে চিনা সংস্থার মাল বিক্রি হয়, হামলা হয়েছে সেখানেও। হোক না দোকানদার দেশের মানুষ। তাই বলে চিনের মাল বিক্রি করবে? এরা সব চরম "দেশভক্ত'। দেশের আগে "হামি কছু ভি না মনে কোরে'। এ হেন দেশভক্ত জিনিসপত্র ভাঙার আগে একবারও ভেবে দেখেননি বোধহয়, যে জিনিস ভাঙল তা বিক্রি হয়ে গিয়েছে এবং টাকাও চিনা সংস্থা পকেটে ভরে ফেলেছে। মাঝখান থেকে যেটা হল, সেটা এই মাগ্গি-গন্ডার বাজারে নিজের পকেটের ওপর একটু চাপ বাড়ল। কিন্তু তাতে কী! দেশের জন্য এ'টুকু করা যাবে না?

     

    এই আন্দোলনকে জোরদার করতেই চিনকে পকেটবন্দি করার পথে আরও একধাপ এগোল দেশ। গত 18 জুন "ওয়ান প্লাস এইট প্রো' মোবাইল অনলাইনে বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়া হয়। ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে স্টক শেষ। এ তো গেল বেশ দামি মোবাইলের খতিয়ান। এই ব্র্যান্ড সকলের সাধ্যের মধ্যে নয়। আর এটা কে না জানে যে, সস্তায় পুষ্টিকর জিনিস ভারতীয়দের বেশ পছন্দ। কারণ, আপেলে তো আর সকলেই কামড় বসাতে পারেন না। তাই বাকি ব্র্যান্ডদের হঠিয়ে ভারতের মোবাইলের বাজার একেবারে কামড়ে ধরে রেখেছে শাওমি, অপো, ভিভো, রিয়েলমি-র মতো চিনা সংস্থা।

     

    ভারতে এতটাই আধিপত্য কায়েম করেছে এরা যে, ক্রিকেট বোর্ডের অন্দর থেকে ছোট শহরের খানাখন্দর, সবই চিন-ময়। খোঁজ নিয়ে দেখুন, যারা চিনা সামগ্রীর ষষ্ঠীপুজো করতে হাতে লাঠি নিয়ে সহনাগরিকের দোকান ভেঙেছে, তাদের পকেটেও এক টুকরো চিন বাসা বেঁধে আছে। ওটা তো প্রাণের নিধি। ওটা না হলে হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। দেশ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বা আইটি সেলের ভাইটিদের মহান বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে। তবে এতে ভক্তদের কোনও দোষ নেই। আসলে মেক ইন ইন্ডিয়া’-কে ভোঁতা করার জন্যেই দেশের প্রধান সেবকদের হাত-পা বেঁধে চিনারা এই মোবাইলগুলি কিনতে বাধ্য করেছে।

     


    বাজারের বহরটা একবার দেখে নিন
     

     

    ভক্তদের জন্য আরও একটা খারাপ খবর আছে। শতকরা 60 জন ভারতীয় জানিয়েছেন, তাঁরা চিনা মোবাইল কেনা বন্ধ করবেন না, কারণ তাঁদের কাছে আর কোনও বিকল্প নেই। মহা পাজি এরা, এক কথায় দেশদ্রোহী। ভক্তরা যেমন সমস্ত তর্ক হেরে যাওয়ার পর একটা প্রশ্ন করে, "মোদী না হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবে? বিকল্প আর কে আছে?' একদম একই কায়দায় পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ছেন "দেশদ্রোহী' ভারতীয়রা।

     

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    গরুর পেছনে গ্লাস নিয়ে ঘোরা মহাপুরুষদের মুখে বাণী নেই। কষ্টে প্রাণটা ফেটে যাচ্ছে।

    দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই আদর্শ ধারাবাহিক।

    করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান

    আমরা হয়তো দেখতে পাইনি, কিন্তু এই অভুক্ত মানুষগুলো গোলাপি চাঁদকে একটা গোটা রুটিই দেখেছে।

    যে কোনও চলে যাওয়া শূন্যতা তৈরি করে যায়। এস পি-র শূন্যতা ভরাট হওয়ার নয়।

    দেশের প্রধান সেবকের অনুগামীর সঙ্গে এমন চরম বালখিল্য আচরণ মানা যায়?

    সবার পকেটে চিন, তাক ধিনা ধিন্ ধিন্-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested