আমরা যারা হ্যারি পটার ভক্ত তারা সালাজার স্লিদারিন বা ভোল্ডেমর্ট, এই নামগুলির সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত। কিন্তু যারা পরিচিত নন, তাদের জন্য ছোট্ট করে গল্পটা বলি। হ্যারি পটার এমন একটি সিরিজ যা ম্যাজিক দুনিয়া নিয়ে কথা বলে। লেখিকা জে কে রাউলিং তাঁর কলমের শক্তি প্রয়োগে স্বাভাবিক-সাধারণ মানব সমাজের সমান্তরালে অপর একটি পৃথিবী গড়ে তুলেছেন যাকে বলে ‘Magic world’। সেখানকার মানুষের ভাষায় আমরা অর্থাৎ ‘Non-magic’ মানুষেরা হল ‘Muggles’।
এই সিরিজের প্রতিটি গল্পের মূল প্রেক্ষাপটে থাকে হাজার বছরের পুরনো ম্যাজিক স্কুল, ‘Hogwarts School of Witchcraft and Wizardry’। স্কুলটি তৈরি করেছিলেন চার বন্ধু মিলে, যাদের মধ্যে অন্যতম সালাজার স্লিদারিন। পরবর্তীকালে এই স্লিদারিনের সঙ্গে বাকিদের তিন বন্ধুর মতের অমিল হওয়ায় সে স্কুল ছেড়ে চলে যায়। মতের অমিল হওয়ার কারণ, স্লিদারিনের বক্তব্য ছিল একমাত্র ‘pure blood’ যারা, কেবল তারাই ম্যাজিক ওয়ার্ল্ডে আসবে এবং এই স্কুলে জাদু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ‘Pure blood’ কথার মানে, যে সমস্ত বাচ্চাদের মা-বাবা দু’জনেই জাদুকর, অর্থাৎ wizard এবং witch। সোজা কথায় ম্যাজিক ফ্যামিলির হতে হবে। স্বভাবতই তার এই প্রস্তাব বাকি তিন বন্ধু মেনে নেয়নি। বহু বছর পর ফিরে আসে এই স্লিদারিনের যোগ্য উত্তরসূরি, নাম লর্ড ভোল্ডেমর্ট। তারও একই ইচ্ছা এবং বিশ্বাস যে, জাদুবিদ্যা শেখার অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে যারা ‘pure blood’। তবে শুধু এটুকুতেই যদি থেমে যেত তারা, তাও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু, যারা ‘pure blood’ নয় বা স্লিদারিনের এই প্রস্তাবে অবিশ্বাসী তাদের প্রত্যেককে যন্ত্রণা দিয়ে মারতেও পিছপা হয় না এরা। ভাগ্যিস, এদের পৃথিবীতে ডাম্বেলডোর, হ্যাগ্রিড, হ্যারি, রন, হারমাইনি বা সিরিয়াস ব্ল্যাক প্রমুখের মতো মানুষ ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত, দুষ্টের দমন সম্ভব হয়।
হঠাৎ এসব কথা কেন? কারণ আছে তো বটেই। গত রবিবার দুপুর নাগাদ খবর পাওয়া যায় বলিউডের প্রাণোজ্জ্বল অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মঘাতী হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে খবর, অবসাদই আত্মহত্যার কারণ। সকলেই বলতে শুরু করলেন, এত ভাল অভিনেতা, এত সফল অভিনয়, এত শিক্ষিত-বুদ্ধিদ্বীপ্ত ছেলের কীসের অবসাদ! অবসাদ যে কাউকে বলে কয়ে আসে না, আর সেটা যে টাকা-পয়সা, খ্যাতি কিছু দিয়েই আটকানো যায় না তা তো সকলেরই জানা।
ধীরে ধীরে সুশান্ত সিং রাজপুত সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা যায়। আবারও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় ‘Nepotism’-কে। এবং সেই সঙ্গে লেজুড় হয়ে চলে আসে সেই বিখ্যাত নাম, পরিচালক করণ জোহর। সুশান্ত সিং রাজপুত মারা যাওয়ার পর যে শোকবার্তা করণ টুইট করেন তার কমেন্ট বক্সেও ওঠে সমালোচনার ঝড়।
বিভিন্ন সূত্রে ধীরে ধীরে জানা যাচ্ছে সুশান্ত সিং রাজপুত তাঁর শেষ সিনেমা ‘ছিঁছোরে’-এর পর সাতটা নতুন সিনেমা সই করেন। গত ছ’মাসে তার প্রত্যেকটিই হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁর। ‘আশিকি 2’, ‘সড়ক 2’ উভয় সিনেমার ক্ষেত্রেই সুশান্তকে ফাইনাল করার পর তাঁকে সরিয়ে সেই জায়গায় আসে আদিত্য রায় কাপুর। এর আগেও ‘রাম-লীলা’, ‘বেফিকরে’ সিনেমায় তাঁকে সরিয়ে পর্দায় আসেন রণবীর সিং। সকলেই দুষছেন ‘নেপোটিজম’-কে। বলিউডে টিকে থাকতে গেলে নাকি, ‘ভাল কানেকশন’ থাকা খুবই জরুরী। অবশ্যই, নয়তো প্রাণী হত্যা, মানুষ হত্যা করেও, কোনও ব্যক্তি রমরমিয়ে সিনেমা করে যান কীভাবে? অবশ্যই তাঁর ‘ক্ষমতা’ আছে বলে। তাঁর ‘Filmy background’ আছে বলে, তিনি ‘Pure blood’ বলে। যেখানে ‘গালি বয়’ বা ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার 2’-এর মত সিনেমা একটার পর একটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েই চলে, আর অথচ ভাল অভিনয় বা ভাল সিনেমা নীরবে কেঁদে মরে।
AIEEE-তে সপ্তম র্যাঙ্ক অধিকারী, ফিজিক্সে জাতীয় স্তরের অলিম্পিয়াডের বিজয়ী সুশান্ত তাঁর অভিনয়ের শখকে পেশা করতে চেয়েছিলেন। দু’চোখ ভরা স্বপ্নে ভর করে মায়ানগরীতে পা রেখেছিলেন। সিরিয়ালে অভিনয় করে খুব অল্প দিনেই দর্শককে তাঁর মনভোলানো হাসির প্রেমে ফেললেন। এরপর বলিউডে ব্রেক, প্রথম সিনেমা ‘কাই পো চে’। ফাটাফাটি অভিনয় নিমেষে সকলের কাছে তাঁকে পরিচিত করে তুলল। আর তাতেই বুঝি গা জ্বলল বলিউডের সেই বিশেষ গোষ্ঠীর। ধীরে ধীরে শুরু হল, তাঁকে একা করে দেওয়া, ইঙ্গিতে বোঝান শুরু হল যে তুমি ‘আমাদের পরিবারের সদস্য’ নও, হতেও পারবে না। একটা সাধারণ পরিবারের ছেলে কীকরেই বা তাদের একজন হতে পারে? তাঁকে দিয়ে সিনেমা সই করিয়েও কেড়ে নেওয়া শুরু হল বেশিরভাগ কাজ।
বিগত কয়েকদিনে সুশান্তের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ঘাঁটলেই বোঝা যাবে, বেশিরভাগ পোস্টেই অবসাদের ইঙ্গিত। আসলে এই প্রাণোচ্ছ্বল, শিক্ষিত, মার্জিত ছেলেটি বলিউডের তথাকথিত ধ্বজাধারী কিছু ‘সেলেব্রিটি’-দের মধ্যে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি, বলা ভাল সেই সুযোগও তাঁকে দেওয়া হয়নি। সুশান্ত এর আগে সোশাল মিডিয়ায় একবার তাঁর উইশলিস্ট পোস্ট করেছিলেন। সেই পঞ্চাশটি উইশ পড়লেই বোঝা যাবে তাঁর চিন্তাভাবনা আসলে কতটা আলাদা বাকিদের থেকে।
অবশ্য বলিউডে ‘নেপোটিজম’ নিয়ে চর্চা এই প্রথমবার নয়, বা এই প্রথম কেউ সেই সিস্টেমের শিকার হলেন এমনও নয়। তবে সুশান্ত আর টানতে পারলেন না। শেষ ছ’মাস তাঁকে যে যন্ত্রণা দিয়েছে তা আমরা কখনও অনুভব করতে পারব না। ফলে তিনি নিজে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
সুশান্তের মৃত্যু অবশ্য বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেক এমন ভিকটিমকে মুখ খুলতে সাহায্য করেছে। যার একটা বড় উদাহরণ, পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের ভাই অভিনব কাশ্যপের সোশাল মিডিয়া পোস্ট।
এত কিছু দেখে বা পড়ে একটা কথাই মনে হচ্ছে, এঁদের জীবনেও যদি একজন অ্যালবাস ডাম্বেলডোর বা একজন হ্যারি পটার বা একজন হ্যাগ্রিড থাকত, তাহলে হয়তো সুশান্তের মতো উজ্জ্বল নক্ষত্ররা এমন অসময়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যেত না।
ক্যারাটের মাধ্যমে নারীসুরক্ষার বার্তা কলকাতার
১৯৮৬ সালে গিরিডিতে দেশের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসেন কলকাতায়। এরপরেই অটোর মাথায় বাগান বানানোর সিদ্ধান্ত।
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অকপট মতামত জানাচ্ছে আজকের নারী। সেই মতামতে রয়েছে রামধনুর রঙের মতোই অপার বৈচিত্র।
সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলেই লাল দাগ পড়বে পরীক্ষার রেজাল্টে! এই ডিরেক্ট কানেকশনটা কীরকম?
এঁদের জীবনেও যদি একজন অ্যালবাস ডাম্বেলডোর বা একজন হ্যারি পটার বা একজন হ্যাগ্রিড থাকত!
অবশেষে দোষী সাব্যস্ত কুলদীপ সেঙ্গার। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক।