×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সরস্বতী পুজোর আগে, কোনও ‘কুল নাই রে’...

    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার | 21-01-2020

    কুলের পসরা

    মাঘ মাস, শুক্ল পক্ষ, পঞ্চমী তিথি। সরস্বতী পুজো। কচিকাঁচা থেকে বয়সে বড় ছাত্রছাত্রী, সকলেরই নিজের দিন। পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই স্কুল-কলেজে চাঁদা তুলে ঠাকুর এনে সব সাজিয়ে রেডি। পুজোর দিন শাড়ি বা পাঞ্জাবি পরে হাজির পড়ুয়ার দল। এই একদিন সরস্বতীর দোহাই দিয়ে পড়াশোনা শিকেয়, দোসর হয় দেদার হুল্লোড়। এই একদিন কোনও এক অজানা জাদুবলে মা-বাবার শাসনও খানিক কমে যায়।

    শীতকাল। কুলের মরশুম। সরস্বতী পুজো মানে অবশেষে কুল খেতে পারার দিন। বড়রা বলেন সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। ঠাকুরকে না দিয়ে আগে খেয়ে নিলে তিনি নাকি রেগে যান, আর সেই রাগ গিয়ে সরাসরি পড়ে ফাইনাল পরীক্ষার খাতায়। বিদ্যার দেবীর সঙ্গে ছেড়খানি! এমন রিস্ক কোন পড়ুয়া নেবে বলুন তো? তাই প্রাচীনকাল থেকে এই রীতি।

    পুজোর আগে কুল না খাওয়ার কি এটাই আসল নিয়ম? অবশ্যই না। তাহলে? পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান রাজ্য। এখানে যেকোনও নতুন ফসল প্রথমেই দেবদেবীকে নিবেদন করার রীতি আছে। নবান্নই তার উদাহরণ। আমাদের মা-ঠাকুমাদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শীতের প্রথম কমলা লেবুটা বা বাড়িতে আসা প্রথম পাটালিটা বা গরমের প্রথম আমটা ঠাকুরকে দিতে হয় কিন্তু খুদেদের কীভাবে টুসটুসে টোপাকুল খাওয়া থেকে আটকানো যাবে! অগত্যা ভরসা দেবী সরস্বতী এবং পরীক্ষার খাতা।

    এছাড়াও এইসময় কুল সবে ফলতে শুরু করে। সময়ের অভাবে ঠিক করে পাকে না। এই কাঁচা কুল খেলে ছোটদের পেটের রোগে ধরার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। একে কাঁচা কুল, তায় পিঠেপুলির মরশুম। ফাইনাল পরীক্ষার আগে পেটের রোগ বাধলে আর এক সমস্যা।

    আবার টক খেলে ঠান্ডা লাগারও সম্ভাবনা থাকে। ফলে বাচ্চার শরীর ঠিক রাখার তাগিদেও খানিক এই নিয়ম চালু হয়েছে বলা যেতে পারে। কুল ছাড়া অন্য বহু টক ফলের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম গ্রামবাংলায় এখনও চালু আছে।

    শুধু কি এই নিয়ম! প্রায় প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতেই কিছু চালু নিয়ম আছে। যেমন ধরা যাক, পড়ে ওঠার সময় বই বন্ধ করে উঠতে হয়। খোলা বই থেকে বিদ্যা পালিয়ে যায়। আবার শিশুমনে ভয়। পরীক্ষার রেজাল্টে লাল দাগ কে যেচে ডেকে আনতে চাইবে! ফলে শিশু শিখল, পড়াশোনা শেষে বইপত্র গুছিয়ে তুলে রেখে উঠতে হয়। বকেধমকে ম্যানার্স শেখাতে হল না।

    বা ধরা যাক, খাওয়া শেষে খালি থালায় জল ঢেলে দিতে হয়। বাবা-কাকারা তো ওই থালাতেই হাত ধুয়ে উঠতেন। এই সবকিছুরই বাস্তবসম্মত কারণ আছে। খাওয়া শেষের সঙ্গে সঙ্গেই যে বাসন মাজা হবেই এমন কোনও কথা নেই। ফলে এঁটো শুকিয়ে একাকার হলে সেটা পরে মাজতে অসুবিধা হয়। কিন্তু জল ঢেলে দিলেই মুশকিল আসান।

    এখন যদিও টেবিল-চেয়ারে বসার রেওয়াজ। কিন্তু আগে যখন আসন পেতে বসা হত, ওঠার সময়ে মা বলতেন আসন তুলে রাখতে। খোলা আসনে নাকি দৈত্য এসে বসে। মোদ্দা কথা, নিজের কাজ নিজে করতে শেখা। তোমার আসন, তুমি বসেছ, তুমিই তুলে রাখবে।

    ছোটবেলায় খেতে খেতে শেষ গ্রাস ফেললে মা বলতেন, এটা শেষ কর। নয়তো গাধা হয়ে যাবি। শিশুমনে সত্যিই ভাবতাম গ্রাসটা মুখে না তুললে তৎক্ষণাৎ গাধা হয়ে যাব। পরে বুঝেছি, ওটি খাবার অপচয় না করার একটা পদ্ধতি ছিল মাত্র।

    সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে জন্মালে এমন বহু নিয়মকানুন বা বলা ভাল কথায় কথায় দৈত্য-দানবের আগমন বা বিদ্যা পালানোর ঘটনা ঘটত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দৈত্য-দানব গল্পে না থাকলেও এইসব রীতিনীতিতে বেশ আছেন। কারণ খুদেদের বিনয়, ভদ্রতা, সভ্যতা শেখাতেই হোক বা তাদের রোগভোগ থেকে দূরে রাখতেই হোক, মা-ঠাকুমার থেকে বেশি কার্যকরী টোটকা এখনও আবিষ্কার করা যায়নি।


    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার - এর অন্যান্য লেখা


    সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলেই লাল দাগ পড়বে পরীক্ষার রেজাল্টে! এই ডিরেক্ট কানেকশনটা কীরকম?

    অনেকের কাছেই সোশাল মিডিয়া বেদ বাইবেল কোরানের তুল্য

    বাড়ি থেকে কাজে অন্তত চাকরি আছে, মাসের শেষে স্যালারি মিলছে। আপাতত অভিযোগ না করে এতেই সকলে খুশি।

    নিজেদের দোষ ঢাকতে বারংবার সমীক্ষার ফলাফল চেপে দিতে চাইছে সরকার

    সরকারের কথায় অনেকেই ভরসা পেয়ে ভেবেছিলেন না খেয়ে মরতে হবে না। তবে সরকার আদৌ কথা রাখছে কি?

    শপিং মলে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা কতটা সম্ভব?

    সরস্বতী পুজোর আগে, কোনও ‘কুল নাই রে’...-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested