কর্মব্যস্ততা আপাতত নেই হেমন্তের শহরগামী রেলগাড়িতে। বেলা তিনটের রোদ্দুর হেলে পড়ছে চলমান রেলগাড়ির জানলা দিয়ে। মফস্বল চিরে রেললাইন চলেছে হাওড়ার দিকে। ছুটন্ত রেলগাড়ির কামরায় যাত্রীরা কেউ গালগল্পে ব্যস্ত, কেউ ফেরি করছেন বাদাম-কমলালেবু, মোবাইল-বন্দি কিছু দৃষ্টি।
স্কুল-কলেজ খুলেছে গত সপ্তাহেই। একদল ছেলেমেয়ে বাড়ি ফিরছে কারিগরি শিক্ষার পাঠ নিয়ে। ট্রেন তখন কোন্নগর পেরলো। ডান পাশে জলা আর ঘাসজমি ছিল এতকাল, সেখানে আজ আকাশছোঁয়া বহুতল। ছেলেমেয়েরা গল্প করছিল তাদের ছোটবেলার। তখনও হিন্দমোটর কারখানার ভোঁ বাজতো সকাল-সন্ধ্যে, ঘন সবুজ ছিল সে সব দিন...
আপাত শান্ত রেলের কামরার মেঝেতে তখন তাস খেলতে ব্যস্ত পরিশ্রান্ত চারটে মানুষ। তাস পেটানোর ফাঁকেই গল্প হচ্ছে হাটের দাম-দরের। তাঁদেরই এক জন বলে উঠলেন, ছেলেমেয়েরা ইস্কুল তো যাওয়া শুরু করলো, কিন্তু চাকরি কোথায় আর! তার চেয়ে...ট্রেনের ভোঁ-তে চাপা পড়ল কথা। অন্য এক প্রান্তে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে কথা বলছেন দুই ছোট ব্যবসায়ী। অসন্তুষ্ট মেজাজে তিনি বিদ্ধ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মেজাজ হালকা করে অন্য জন হিসেব কষলেন, মাসে 500 টাকা করে বছরে হয় 6000। বাড়ির বউদের সংসার চালানোর দক্ষতা নিয়েও তিনি তারিফ করলেন শেষে। কারশেড পেরিয়ে প্রান্তিক স্টেশনে ঢুকে গেল ট্রেন, হট্টমেলার হাটে মানুষ মিশে গেল একে অন্যের সঙ্গে। গুঞ্জন আর জনঅরণ্যের মাঝে সহযাত্রীরা একে অন্যকে পেরিয়ে এগোচ্ছেন গন্তব্যের দিকে, অথবা গন্তব্যহীন ছুটে চলা।
আমরা এ বার চেপে বসলাম ফেরার গাড়িতে। হকারের ওঠানামা আর আনকোরা যাত্রীর জিজ্ঞাস্য ভেসে আসছে, ভিড় বাড়ছে ঘরে ফেরার ট্রেনে। গেটের ধার থেকে ভেসে এল ‘‘বাংলায় কথা বলুন, এটা বাংলা।’’ চমকে গিয়ে সকলে তাকাতেই বোঝা গেল দুই যাত্রীর তর্ক হচ্ছে ট্রেনের দরজার দাঁড়ানো নিয়ে। কিন্তু ভিন্নভাষী দু’টি মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ালো শেষে। সেই ঝগড়ার রেশ পড়ল অনেকের মধ্যেই। আসামের বাংলাভাষী মানুষের প্রতি অত্যাচার বর্ণনা শুরু করলেন এক অফিস কর্মচারী। রেলগাড়ি চলেছে শহর থেকে প্রান্তিক বাংলার দিকে, আর আলোচনা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলা, হিন্দি থেকে আসাম… কৃষক আন্দোলন। কৃষক আন্দোলনের সাফল্য বাংলার জনমানসে যেন তেমন প্রভাব ফেলেনি...কিন্তু আপনি কথা বলুন হকার কিংবা যাত্রীদের সঙ্গে, বাহ্যিক প্রকাশ নেই ঠিকই, কিন্তু আন্দোলনের জয় অন্তরে ধারণ করছেন অনেকেই!
আরও পড়ুন:কলকাতা থেকে উধাও এক সময়কার শীতের বার্তাবাহক সার্কাসের তাঁবু
সন্ধ্যে 7টা। নামলাম ব্যান্ডেল জংশনে। এক হকারও নামলেন সঙ্গে৷ পাঁপড়, চিনেবাদামের ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে হাপিত্যেশ হয়ে বলছিলেন, ‘‘ওরা উল্টো দিকের ট্রেনটা পেয়ে যাবে, আমিই একা পাব না!’’ এক জন মহিলার হকারি'র লাইনে টিকে থাকা সত্যিই সহজ নয়। হকারির লাইন নয় কেবল, জীবনের পথেই এক জন নারীর চলা সহজ নয়। সেখানে অনেক ‘ক্রশিং’, অনেক ‘অ্যাক্সিডেন্ট’…তবু এগিয়ে চলেন তাঁরা।
শীতের ভারী বাতাসে রেলগাড়ির ভোঁ বহু দূর ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে-নগরে-নৌকার ঘাটে৷ মানুষের স্মৃতির অনেকটা জুড়ে রেলযাত্রা আর তার গল্প বেঁচে থাকে৷ এক দিন, প্রতি দিনের সমাজ-জীবনের সংলাপ আর কাহিনি এঁকে চলে তার আল্পনা।
সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নয়া ময়দান কুতুব মিনার
মাধ্যমিকের খাতায় ফুটে উঠল ছাত্রছাত্রীদের অপারগতা আর শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতার করুণ বাস্তব চিত্র
সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রা
বন্ধু বা আস্থাভাজন সঙ্গীর দ্বারা ধর্ষণের প্রবণতা সাম্প্রতিক কালে ক্রমবর্ধমান হচ্ছে ভারতের সমাজজীবনে।
এপ্রিলে দেশের বেকারত্বের হার ছুঁলো 7.83 শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে সংকট ক্রমশ উর্ধ্বমুখী
সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট তুলে ধরল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতকেই।